Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় বিদেশ ফেরত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কুমিল্লায় বিভিন্ন অজুহাতে বিদেশ ফেরত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। দিন দিন বড় হচ্ছে বেকারের মিছিল। কেউ ফিরছেন চাকরি হারিয়ে আবার কেউ ফিরছেন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণেও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর এলাকার বেলাল (৩০)। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যদেশ সউদিআরব থেকে দেশে ফিরেছেন বেলাল। গত বৃহস্পতিবার কথা হয় বেলালের সাথে। কেমন আছেন জানতে চাইলে বেলাল এক কথায় উত্তর দিলেন ভালো নেই। কারণ জানতে চাইলে বেলাল বলেন, সউদি আরবের একটি বড় কোম্পানীতে কাজ করতেন তিনি। মাস শেষে যা টাকা বেতন পেতেন সে টাকা নিজের খরচ বাবদ কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা দেশে পাঠাতেন। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে বেলাল এক টাকাও দেশে পাঠাতে পারছিলেন না। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও বেলাল গত মে মাসের ২১ তারিখে দেশে চলে এসেছেন। বেলাল জানান, সউদি আরবের অবস্থা ভালো না। মাস শেষে তার কোম্পানী যে টাকা বেতন দিতো। সে টাকা থেকে গত ৬ মাস ধরে সউদি মালিকরা প্রতিমাসে তার বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট টাকা কেটে রাখে। এছাড়াও হুটহাট কোন কারণ ছাড়াও টাকা কাটে মালিকরা। কিন্তু তার পরিবর্তে শ্রমিকরা কোন ধরনের বিপদে পড়লে সাহায্য সহযোগিতা করে না তারা। তিনি আরও বলেন, কোনো বৈধ প্রবাসী এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হয়। মালিকদের এ ধরনের অতিরিক্ত টাকা কেউ না দিলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয়ও দেখান। প্রতিবাদ করলে তারা পাসপোর্ট ফেরত না দেওয়ারও হুমকি দেয়। এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী সৌদি আরব থেকে পুরুষ-মহিলা শ্রমিক ফেরত এসেছে গত ৬ মাসে বাংলাদেশে। যাদের মধ্যে শুধু অবৈধ প্রবাসী নয় বৈধ প্রবাসীরাও রয়েছে। রয়েছে শত শত মহিলা শ্রমিকও। নারী শ্রমিক ফিরে এসেছেন নানা কারণে। ফেরত আসা নারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, গৃহশ্রমিক হিসেবে যাওয়ার পর অনেকেই গৃহকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে যৌন নির্যাতনের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন। অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়।
বেলাল আরও বলেন, গত ৩ মাসে তার কোম্পানী থেকে অত্যন্ত একশ’ থেকে দেড়শ’ শ্রমিক বৈধ কাগজ থাকার পরও একবারে দেশে চলে এসেছে। আরো শত শত শ্রমিক দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। শ্রমিক ফেরত আসার ব্যাপারে বিদেশ ফেরত মোঃ বেলাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সউদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় অসার পর নতুন করে করোরাপ করেন সকল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন থেকে অতিরিক্ত টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। বাড়ি বাড়া বাড়ানো হয়েছে, দ্রব্যমূল্যর দাম উর্দ্ধগতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছি সউদি সরকার। সউদি সরকার বিভিন্ন অজুহাতে কেটে রাখার কারণে সউদিআরবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা অতিকষ্টে জীবন-যাবন করতে হচ্ছে। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার আল-আমিন (৪৫)। প্রায় একযুক সউদিআরবে কাটিয়ে দেশে এসেছেন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে একবারেই চলে এসেছেন আল-আমিন। আলআমিন বলেন, সউদিআরবে আগের মত কাজকর্ম নেই। দাম্মামে তার একটি ইলেকট্রনিক দোকান ছিল। বর্তমানে ব্যবসা করতে হলে সরকারকে যে পরিমান ট্যাক্স ব্যবসায়ীদেরকে দিতে হয় সে টাকা দিয়ে কফিলের টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে আর কিছুই থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে দেশে চলে এসেছি। দেবিদ্বারের ধামতি গ্রামের সাইফুল সেও মে মাসে দেশে চলে এসেছে। সাইফুলের পিতা কৃষক আব্দুল ছালাম জানান, বসতভিটা বন্ধকী দিয়ে ছেলেকে সউদিআরব পাঠিয়ে ছিলাম। দুর্ভাগ্যবসত আমার ছেলেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে।
এদিকে সউদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর দেশটি এখন নানামুখী কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপের মুখে পড়েছে। কাতারে কাজ করছে প্রায় তিন লাখের মতো বাংলাদেশী। তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে কাতার বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠাবে কিনা। কাতারের রাজধানী দোহায় থাকেন বাংলাদেশি কর্মী রকিব উদ্দিন। রাকিবের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামে। রাকিব গত বুধবার মোবাইলে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন বাংলাদেশি শ্রমিক যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে পুরোপুরি ভীতি তৈরি হয়ে গিয়েছিলো এর পাশাপাশি বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলছিলেন বাংলাদেশিরা কাতারে থাকতে পারবেন না। দেশে চলে যেতে হবে এমন একটা ভীতি কাজ করছে। কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তবে কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস কী বলছে রাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হলে রাকিব জানায়, সেখানে দূতাবাস জানাচ্ছে, কাতার এবং উপসাগরীয় অন্যান্য কয়েকটি দেশের মধ্যকার উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে এবং কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। দূতাবাস বলছে, পরিস্থিতি কাতার সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এ ব্যাপারে অহেতুক আতংকিত হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই বলে দূতাবাস মনে করে।
এদিকে কুমিল্লাসহ দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্সে তেমন গতি না থাকায় চলতি হিসাবের ভারসাম্য বেশ চাপের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্যের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, আগামীতে এই চাপ থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ