Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডিএসইর কৌশলগত অংশিদারের হাজার কোটি টাকা ছাড় শিগগিরই

| প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চীনা কৌশলগত ২৫ শতাংশ অংশিদারের অর্থ প্রায় হাজার কোটি টাকা আসছে শিগগিরই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী আগস্টের শুরুতেই ওই অর্থ হাতে পাবেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন তারা। এ বিনিয়োগের ফলে ঘুণে ধরা বাজারের দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাইয়ের শেষ কিংবা আগস্টের প্রথম দিকে চীনের সেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে বিক্রি করা ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্ত ৯৪৫ কোটি পাওয়া যাবে। যে অর্থ শেয়ারহোল্ডাররা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। এতে বাজারের চলমান অনাস্থা ও তারল্য সংকট দূর হবে বলে মনে করেন শেয়ারহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
চীনের সেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় দেশের শেয়ারবাজারে অনেক পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন তত্ত¡বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, চীনের ওই দুই প্রতিষ্ঠানই আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে এরা বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে গর্ভনেন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। ফলে এই বাজারও স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করবে তারা। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শেয়ার বাজারে কারসাজি কমবে।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, এই অর্থ আগামী এক মাসের মধ্যে আমাদের হাতে আসবে। তারপর এটা পুুঁজিবাজারে যাবে। আশা করছি এই অর্থ পুঁজিবাজারে এলে বাজারে বর্তমান চিত্রের পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রস্তাব করার পাশাপাাশি ডিএসই’র সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দেয় এবং শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়ার কোনো শর্ত দেয়নি। বাজারে নতুন পণ্য আনার প্রস্তাবও দেয় প্রতিষ্ঠানটি। শেনজেন ও সাংহাই নির্দিষ্ট কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। কারিগরি সহায়তাও দেবে তারা। সবমিলে চীনের অর্থ পুঁজিবাজারে এলে বাজারে বর্তমান চিত্রের অনেক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ডিএসইর পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার জন্য ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট-২০১৩ করা হয়। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার নেওয়ার এবং তাদের জন্য মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। সে লক্ষেই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের দুইটি কোম্পানিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ শতাংশ শেয়ারের দাম তারা খুব শিগগিরই পরিশোধ করবেন। তবে কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে এ অর্থ আমাদের হাতে আসবে। এর জন্য এক বছর সময় রয়েছে। তবে আমি মনে করি, এত বেশি সময় নয় বরং শিগগির আমরা এই অর্থ হাতে পাব। তিনি বলেন, এ অর্থ দিয়ে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা রয়েছে।
এদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর থাকা ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছেন ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর দফতরে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য এ দাবিসহ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আরও কিছু লিখিত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর হাতে দেন। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সেই বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে আজকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ডিএসই ও ডিবিএ’র নেতৃবৃন্দের মধ্যে সাক্ষাত হয়েছে। এতে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে প্রাপ্য ৯৫০ কোটি টাকার উপর ক্যাপিটাল গেইন টেক্স আরোপ না করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামি অর্থবছরও স্টক এক্সচেঞ্জকে শতভাগ কর মওকুফের আওতায় রাখা ও শেয়ার লেনদেনের উপর উৎসে কর হার শূণ্য দশমিক ০৫০ টাকার পরিবর্তে শূণ্য দশমিক ০১৫ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি জানান, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ৯৫০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই টাকার শতভাগ এই বাজারে বিনিয়োগ করার কথা অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদি শর্তেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আমরা রাজি আছি। যা করা হয়ে তাতে বাজারে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে গত ৩ মে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই পুঁজিবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পরে ১৪ মে তাদের সঙ্গে ডিএসই কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়। কিছু শর্তসাপেক্ষে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন দেয়।
বিএসইসি’র অনুমোদনে বলা হয়, চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে ডিএসই’র মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার বিক্রিতে চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ২১ টাকা।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের শর্ত অনুসারে ডিএসই’র ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি বাধ্যতামূলক। এ কারণে শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করে ডিএসই। সেই দরপত্রে অংশ নেয় চীনের দুই শেয়ারবাজার সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে দুই কনসোর্টিয়াম। এক্ষেত্রে চীনের প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দরপ্রস্তাব করে ২২ টাকা (লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর ২১ টাকা)। এতে ৪৫ কোটি শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৯৯০ কোটি টাকা। এছাড়া, স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি সহায়তার জন্য আরও ৩০৭ কোটি টাকা দেবে চীন। ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ