Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ : জাতিসংঘ

শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত : এসএএম-কে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ থেকে যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী মিয়ানমার ফিরে যাবে তাদের জন্য নিরাপত্তা ও “পরিচয়” গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশনের প্রধান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বুধবার মিয়ানমার ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পর তিনি এ কথা বলেন। সেনাবাহিনীর নিধনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘ সংস্থার এই এমওইউ সই হয়। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমওইউ সই হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয় জানিয়েছে, নেপিদো’তে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতেই এমওইউ সই করা সম্ভব হয়েছে। দ্রæততার সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ না করে তাদেরকে রাখাইনের বাস্ত্যুচ্যূত জনগোষ্ঠী বলে সম্বোধন করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা নিয়ে এই চুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়ক নাট ওৎসবি বলেন, এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে অনেক কাজ হবে এবং সেই কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় সাত লাখ মানুষের প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছি, যাদেরকে কেবল ফিরিয়ে নেওয়াটাই শেষ কথা নয়, ফিরে যাওয়ার জন্য যথাযথ পরিবেশও তৈরি করতে হবে। সমাজে তাদের পরিচয়, তাদের নিরাপত্তা, চাকরি, জীবন-যাপন, বসবাসের জায়গা, অবকাঠামো-সবকিছুরই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগে স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও জাতিসংঘ সফলভাবে কাজ করেছে। ১৯৯৩ সালে মিয়ানমার ও ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল।
শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার প্রস্তুত
এদিকে সাউথ এশিয়ান মনিটরকে (এসএএম) দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রস্তুত, চলতি বছরের গোড়ার দিকে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা করার পর থেকেই আমরা প্রস্তুত। তবে তিনি বলেন, যাদের সত্যতা যাচাই করা হবে, কেবল তাদেরই গ্রহণ করতে পারি। তিনি জোরালোভাবে বলেন, বাকি কাজ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ পক্ষের।
মন্ত্রী বলেন, যে কারণেই হোক না কেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ নথিবদ্ধকরণের সমঝোতাটি পূরণ করছে না। এটি সম্পন্ন করা হলেই মিয়ানমার সরকার যাচাই করতে পারবে, তারা রাখাইনের বৈধ বাসিন্দা কিনা এবং তাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব কিনা। তিনি তার সাক্ষাতকারে বেশ কয়েকবারই জোর দিয়ে বলেন, “তারা ‘সম্মত ফর্ম’ পূরণ করছে না। এর মানে হলো প্রক্রিয়াটি স্বেচ্ছায় হতে দিচ্ছে না।”
তবে দুই দেশের মধ্যে হওয়া দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন অবশ্যই হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্নভাবে। মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে থাকা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা।
ড. উইন বলেন, তারা ফর্ম বোঝে না, তারা ফর্ম দেখেনি, তারা ফর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না। সরকারের অভ্যন্তরে একজন এসএএমকে বলেন, মন্ত্রিসভার অনেকের বিরোধিতা সত্তে¡ও তিনি গত মাসে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন। প্রক্রিয়াটি শুরু হতে সমস্যা কোথায় তা সরাসরি জানতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি বাংলাদেশে শরণার্থীদের সাথে সাক্ষাত করেছেন। তারা তাকে বলেছে, তারা মিয়ানমারে ফিরতে চায়, তবে তারা জানে না কীভাবে প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া শুরু হবে। মন্ত্রী জোরালোভাবে বলেন, আমি শরণার্থীদের বলেছি, সত্যিকার অর্থে প্রথম ধাপ হলো ‘সম্মত’ ফর্ম। কিন্তু তারা ফর্মের বিষয়টি ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানে না।
তালিকা সম্ভবত স্থানীয় বা ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সঙ্কলন করেছে, শরণার্থীরা নিজেরা ফর্ম পূরণ করেনি। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ কেবল একটি তালিকা পাঠিয়েছে, তারা যাচাইয়ের জন্য ব্যক্তিগত ফর্ম পাঠায়নি। তিনি বলেন, তাতে কোনো সই বা আঙুলের ছাপ নেই। অর্থাৎ তারা ব্যক্তিগতভাবে ফর্ম পূরণ করেনি। ফলে কাজটি স্বেচ্ছায় হয়নি, চার মাসে একজনও ফিরে আসেনি।
মন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া স্পষ্ট: ফিরে আসা লোকদের চলাচলের স্বাধীনতা, সম্ভাব্য নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, রাখাইনের বিদ্যামন ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। গত আগস্টে উত্থাপিত কফি আনান প্রতিবেদন অনুসারেই সবকিছু করা হবে। রাখাইনে মিটমাটের রোডম্যাপ হিসেবে ওই সুপারিশমালা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু হওয়ার আগে তাদেরকে জাতীয় যাচাই প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। প্রথম ধাপ হলো ন্যাশনাল ভেরিভিকেশন কার্ড বা এনভিসি। সরকার স্মার্ট কার্ড প্রবর্তন করেছে, রাখাইনে উপযুক্ত এক হাজারের বেশি লোকের মধ্যে ইতোমধ্যেই তা বিতরণ করা হয়েছে। ড. উইন বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব কার্ড বৈষম্যহীনভাবে প্রদান করা হয়েছে। এনভিসিতে কোনো জাতিগোষ্ঠী, কোনো ধর্মের পরিচিতি নেই। তারা এই কার্ডের অধিকারী হলে তা জোরালো প্রমাণ যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। যাচাইয়ের পর তারা মিয়ানমারে বাস করলে এনভিসি পাবে। সূত্র ; রয়টার্স ও এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ