Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৭টি স্পটে যানজটের শঙ্কা প্রস্তুত হচ্ছে মেঘনা ফেরিঘাট

ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট সৃষ্টিকারী ৭টি স্পট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এসব স্পটের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সওজ সূত্র দাবি করেছে। তবে বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ কারনে এবারও ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারন মেঘনা ও গোমতী সেতু। চার লেনের মহাসড়ক ধরে যানবাহন এসে মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজায় এসে থমকে যায়। যানজটপ্রবণ এলাকা হয়ে ওঠে পুরো মেঘনা সেতু এলাকা। এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখি মানুষের চাপ সামলাতে সেতুসংলগ্ন মেঘনা ঘাটটি সেতুর বিকল্প হিসাবে রাখার পরিকল্পনা করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের মাধ্যমে যান পারাপারারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে মেঘনা ঘাট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে যানজটপ্রবণ স্পট আছে কমপক্ষে ৭টি। এগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরাস্তা, কাঁচপুর এবং কাঁচপুর সেতুসংলগ্ন শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া এবং মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা। ঈদ যাত্রায় ঘরমুখি মানুষের ভোগান্তি কমাতে এই এলাকাগুলোতে যানজট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও রমজানের শুরু থেকে জোড়াতালি দিয়ে রাস্তা সংস্কার ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
জানা গেছে, মহাসড়কের যানজটপ্রবণ এলাকার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরাস্তা অন্যতম। এ এলাকার যানজট নিরসনে সড়কের খালি জায়গায় মাটি ভরাট করে বাস-বে নির্মাণ, রিজিড পেভমেন্ট ও প্রয়োজনে ডাইভারশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু রমজানের শুরু থেকে খালি জায়গা ভরাট করার কাজে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তৈরী করা হয়নি বাস দাঁড়ানোর জন্য পৃথক কোনো স্থান। এতে করে গাড়িগুলো মূল সড়কের উপরেই দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। তাতে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ককণও এই যানজট ভয়াবহ আকার ধারন করে।
সাইনবোর্ডের পর যানজটের শঙ্কা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায়। মহাসড়কের ওপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেই মূলত যানজট হয় এখানে। ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের কাছাকাছি বসানো হয়েছে রকমারি দোকান। এর সাথে টেম্পু ও ট্রাক স্ট্যান্ডের কারনেও এই অংশে যানজট লেগে থাকে। সওজ সূত্র জানায়, এ এলাকার যানজট নিরসনের জন্য একটি বাস-বে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর অংশে সারা বছরই যানজট লেগেই থাকে। সওজের পর্যবেক্ষণ বলছে, অবৈধ দখলের কারণে কাঁচপুর অংশে যানজট নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অংশের যানজট দূর করতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তা ১০ ফুট পর্যন্ত চওড়া ও একটি বাস-বে নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে মাত্র। কাজ শেষ হতে অনেক দিন বাকি। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। মহাসড়কের পাশেই বসানো হয়েছে ইফতারি সামগ্রী, কাপড়, ফল, তরিতরকারীসহ বিভিন্ন রকমারি দোকান। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের নামে এসব দোকান থেকে প্রতিদিন মোটা অংকের চাঁদা তোলা হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে সেই চাঁদার হারও বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিনই বসছে নতুন নতুন দোকান।
মহাসড়কের অন্যতম যানজটপ্রবণ এলাকা হলো মদনপুর। ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারনেও এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, মদনপুরে যানজট নিরসনে এরই মধ্যে সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে অবৈধ দখলদারদেরও। তবে মদনপুর বাজারে পথচারী চলাচলের জন্য কোনো ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঈদযাত্রায় এ স্থানে যানজটের আশঙ্কা থাকছে। মহাসড়কের আরেকটি যানজটপ্রবণ এলাকা নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা। মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার যানজট মাঝেমধ্যেই এখানে এসে ঠেকে। এ যানজটকে আরো তীব্র করে তুলছে সড়কের ধারে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি। সওজ সূত্র জানায়, মোগড়াপাড়া এলাকার যানজট দূর করতে ৩০ মের মধ্যে এসব খুঁটি সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সবগুলো খুঁটি সরানো হয়নি। এতে করে মহাসড়কের এই অংশে যানজটের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিষফোঁড়া হলো মেঘনা ও গোমতী সেতু। চার লেনের মহাসড়কে এই সেতু দুটি দুই লেনের হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে এই দুই সেতুতে যানজটের সৃষ্টি হয়। সেতুতে উঠতে গিয়ে যানবাহনের ধীরগতির কারনে যানজট লেগেই থাকে। গাড়ির চাপ বাড়লে এই যানজট অর্ধশত কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায় সহসাই। ঈদযাত্রায়ও এমনি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এর বাইরে সেতুর টোলপ্লাজার কারনে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। পুলিশের অভিযোগ, টোলপ্লাজার ধীরগতি, সবগুলো বুথ খোলা না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারনেও যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সওজ সূত্র জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এখানে টোলবুথের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভুক্তভোগিদের মতে, টোলবুথ বাড়ানো হলেও তা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখার বদলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে।
এদিকে, ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে মেঘনা ফেরীঘাট চালু করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, জাপানের আর্থিক সহায়তায় চার লেনের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। একই প্রকল্পে বিদ্যমান সেতুরও উন্নয়ন করা হবে। কাজ শেষ হলে সেতু এলাকার যানজট স্থায়ীভাবে নিরসন হবে। এর বাইরে ঈদযাত্রায় মেঘনা ফেরিঘাটটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেতুর পাশাপাশি ফেরিঘাট ব্যবহার করেও নদী পার হতে পারবে যানবাহন।
বিষয়টি সম্পর্কে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ঘাটে ( সেতু-সংলগ্ন) বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। চলছে জরুরি ভিত্তিতে ঘাট মেরামতের কাজ। আশা করা যায়, এ ঘাট ঈদের এক সপ্তাহ আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজটের

১১ ডিসেম্বর, ২০১৮
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ