Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এপি’র হাতে মিয়ানমারকে লেখা নিরাপত্তা পরিষদের গোপন চিঠি

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইসকিলাব ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহŸান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সংস্থাটি বলছে, পলায়নপর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল দেখে তারা ‘গভীরভাবে চিন্তিত।’ মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দের প্রতি লেখা চিঠিটি গত মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হাতে আসে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার সব অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিশ্রæতির বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ অবগত।
কিন্তু তারা নিছক কথা নয়, বাস্তবে কাজ দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের অংশগ্রহণে স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত হলে তা ‘মিয়ানমারের প্রতিশ্রæতিকে নিশ্চিত পদক্ষেপে পরিণত করবে এবং মানবাধিকার হরণ ও সহিংসতার দায়ে জড়িত প্রত্যেকের শাস্তি নিশ্চিত হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস লিখেছে, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা গত ৩০ এপ্রিল মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। তারপর মে মাসের ১ তারিখেই মিয়ানমারের প্রতি তদন্ত শুরুর মতো পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াও মানবাধিকার রক্ষায় আরও তৎপর হওয়ার আহŸান জানানো হয়। তাদের ভাষ্য, নেপিদো’র উচিত আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আরও মানবাধিকার নিশ্চিতে তৎপরতা চালানো। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দীর্ঘদিন ধরেই বহিরাগত হিসেবে দেখা হয়। যদিও রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশটিতে বসবাস করে আসছে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় সব রোহিঙ্গাকেই নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে; যা তাদের ক্রমেই রাষ্ট্রহীন করে তুলেছে। তাদের যেমন ছিল না চলাফেরার স্বাধীনতা, তেমনি ছিল না নূন্যতম স্বীকৃত মানবাধিকার। নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারকে আহŸান জানিয়েছে, দেশটি যেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে এবং ত্রাণ কাজ চালাতে যাওয়া সেচ্ছাসেবীদের রাখাইনে ‘তাৎক্ষণিক, নিরাপদ এবং বাধাহীন প্রবেশাধিকার’ দেয়। নিরাপত্তা পরিষদ একইসঙ্গে মে মাসের ১ তারিখে জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে সম্মতি প্রকাশ করায় মিয়ানমারকে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, যত দ্রæত সম্ভব জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ও জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে হওয়া খসড়া সমঝোতা চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা কারে যেন স্বাক্ষর করে মিয়ানমার। নিরাপত্তা পরিষদ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, মিয়ানমার সরকার সেই মাত্রার বড় সমস্যায় পড়ছে যে, এখনকার পরিস্থিতিতে ‘একমাত্র জাতিসংঘেরই সহায়তা দেওয়ার সক্ষমতা ও দক্ষতা রয়েছে।’
মিয়ানমারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের আহŸানও জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টের আগে হওয়া ওই কমিশনের সুপারিশে সব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দেওয়া ও তাদের অধিকার রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গাদের উন্নয়নের কথা মাথায় রাখার আহŸান জানানো হয়েছিল।
৩১ তারিখের চিঠিটি জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ ডান সুয়ানকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে। চিঠিতে তাকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন চিঠিটি স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি, সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এবং সফরের সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। চিঠির শেষে তাদের বক্তব্য ছিল, ‘আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই চিঠির উত্তর পেলে আমাদের ভালো লাগবে।’ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একই সময়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশকেও চিঠি পাঠায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মানবতা, মমতা ও সহায়তা’ প্রদর্শনের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেওয়ায় বাংলাদেশের ধন্যবাদ প্রাপ্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ