Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আতঙ্কে ব্যাংক কর্মকর্তারা বাধ্যতামুলক অবসর বাড়ছে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই ১৬ হাজার পদ খালি : এটি সুশাসনের জন্য কখনোই কাম্য নয়

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ১০ জুন, ২০১৮

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১৯৯৩ সালে চাকরি পান আবদুল হক (ছদ্মনাম)। একসময় ব্যাংকটিতে নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ পান এই কর্মকর্তা। অবশেষে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণে বাধ্য হন আবদুল হক। অবসরের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ব্যাংক থেকে অবসরকালীন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। এ বিষয়ে আবদুল হক ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেন। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ড ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করে জানায়, অবৈধভাবে ঋণ প্রদান করায় তার অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করে এ অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। এমন অবসর কিংবা পদত্যাগের ঘটনা শুধু একটি ব্যাংকেই নয়। অধিকাংশ ব্যাংকে প্রতিনিয়তই বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে চাকরির জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে পেশাদারি-সংক্রান্ত লাইসেন্স থাকলেও ব্যাংকিংয়ে নেই।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অনেক ব্যাংকে দক্ষতার ভিত্তিতে ছাঁটাই করা হয়। তবে স¤প্রতি বেশকিছু ব্যাংকে মালিকানা পরিবর্তনের ফলে বাধ্যতামূলক অপসারণ বেড়ে যেতে পারে। এটা সুশাসনের জন্য কখনোই কাম্য নয়। অপসারণ বা ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে আইন মেনে চলতে হবে।
২০১৭ সালে ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মধ্যম সারির এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগের ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ২৯ শতাংশ কর্মকর্তা নিজের অথবা সহকর্মীদের এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) দেশের ২৬টি নমুনা ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংক খাতে কর্মী কমেছে ৯ হাজার ২০ জন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে বাধ্যতামূলকভাবে পদত্যাগ করেছেন পাঁচ হাজার ৪৭০ জন।
দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ইসলামী ব্যাংকেও স¤প্রতি বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ১৬ মাসে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের গত ৫ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংকের (ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্থাপনা থেকে তিন ডিএমডিসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তা বিদায় নেন। অপসারণ করা কর্মকর্তারা হলেনÑঅতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. শামসুজ্জামান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এফসিএ, ডিএমডি আবদুস সাদেক ভূঁইয়া, ডিএমডি মোহাম্মদ মোহন মিয়া ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) আমিরুল ইসলাম। জানা গেছে, পরিচালনা পরিষদ চাপ সৃষ্টি করে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এসইভিপি ছাড়া বাকি সবার চুক্তির মেয়াদ ছিল এক বছর।
এদিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। ব্যাংকটিতে কর্মী ছাঁটাই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ব্যাংকে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়। চলতি বছরে ২০০ জনের বেশি কর্মকর্তা ছাঁটাই হয়েছেন। আরও ২০০ জনের একটি তালিকা তৈরি হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন এমডি আসার পর থেকেই ব্যাপক হারে ছাঁটাই চলছে। তিনি আসার পর থেকে পুরোনো কর্মীদের ছাঁটাই করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা পুরোনো কর্মকর্তারা আতঙ্কে আছি।
সূত্র মতে, সা¤প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংক কোন ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কর্মকর্তাদের ছাটাই শুরু করেছে। আবার অনেকক্ষেত্রে কোন কর্মকর্তা অন্য ব্যাংকে যাওয়ার জন্য পদত্যাগপত্র দিলে তা গ্রহণ না করে তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। ফলে চাকরি পরবর্তী সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে ব্যাংক কর্মকর্তারা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে চাকরি করছেন। অন্যদিকে ব্যাংক আওয়ারের (নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা) পরেও বাড়তি কাজের জন্য তাদের অনেক বেশি সময় ধরে ব্যাংকে রাখা হয়। আর অনেক সময় নারী কর্মকর্তাদের কোন কাজের অজুহাতে আটকে রাখার পর হয়রানির মত ঘটনাও ঘটছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলী বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যাংকেই পুরোনো কর্মী পাওয়া যাবে না। অধিকাংশ ব্যাংকেই ১৮ বছর হয়েছে (যাদের চাকরির বয়স ১৮ বছর) এমন কর্মকর্তা পাওয়া যাবে না। অনেক ব্যাংকে পদ খালি রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই ১৬ হাজার পদ খালি রয়েছে।

 



 

Show all comments
  • Mir Ahammed ১১ জুন, ২০১৮, ৮:৪৬ এএম says : 0
    তাদের টাকায় সরকার চলে,তাই এই বিষয় গুলি দেখার কেও নেই.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ