Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চালের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত বছর হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ফসলহানির কারণে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় চাল আমদানীর উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকার। তবে চলতি বছর আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হলেও সরকারী শুল্কমুক্ত সুযোগ নিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ভারত থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানী করে বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছে আমদানীকারকরা। বিদেশ থেকে বিনাশুল্কে নিম্মমানের চাল আমদানী করার মধ্য দিয়ে ধানের আভ্যন্তরীন বাজারে এক প্রকার ধস নামানো হয়েছে। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বছর দেশে প্রায় ৯৬ লাখ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য আমদানী করা হয়েছে। এর মধ্যে চাল আমদানীর পরিমান ৬০ লাখ টনের বেশী। বিনাশুল্কে অতিরিক্ত চাল আমদানীর কারণে কৃষকরা মিলারদের কাছে কমদামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এহেন বাস্তবতায় দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল এবং ভোক্তাদের জন্য মূল্যসাশ্রয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পুর্ণ উল্টো চিত্র। একদিকে দেশে বাম্পার ফলন, অন্যদিকে ভারত থেকে বিনাশুল্কে লাখ লাখ টন চাল আমদানীর পরও চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে মিলার ও আমদানীকারকদের সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি। বাড়তি মূনাফার জন্য তারা বছর ধরেই চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নানা অজুহাতে মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
দেশে বাম্পার ফলন এবং ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কারণে এখন বিদেশ থেকে চাল আমদানীর কোন প্রয়োজন নেই। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেও অবাধে চাল আমদানী বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। সম্ভবত এ কারণেই প্রস্তাবিত আগামী বাজেটে চাল আমদানীর উপর ২৮ শতাংশ শুল্ক পুর্নবহালের যোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পর থেকেই অস্বাভাবিক হারে আবারো বাড়তে শুরু করেছে মোটা চালের মূল্য। আমন ও বোরোতে বাম্পার ফলন, বেসরকারী খাতে বিপুল পরিমান চাল আমদানীর পর সরকারের তরফ থেকেও দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদের কথা বারবার বলা হয়েছে। উৎপাদন, মজুদ ও চাহিদার হিসেবে মাথায় রেখেই সরকার চাল আমদানীর উপর শুল্ক পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিলেও পাইকারী ও খুচরা বাজারে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন উদ্যোগ না থাকার সরবরাহ লাইনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বিশেষত: বাজেটে শুল্ক পুর্নবহালের অজুহাত তুলে কৃষকদের কাছ থেকে ৫০০-৬০০ টাকা মন দরে কেনা ধান ও বিনাশুল্কে আমদানী করা চালের মূল্য ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। তেরো থেকে পনেরো টাকা দরে কেনা ধানে চালের মূল্য সর্বোচ্চ ৩০ টাকার বেশী হওয়ার কথা নয়। অথচ সারা বছর ধরে খুচরা বাজারে মোটা চাল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বাজেট ঘোষনার পর গত এক সপ্তাহে কেজি প্রতি মূল্য বাড়ানো হয়েছে অন্তত ৩ টাকা। প্রয়োজনীয় তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হলে চালের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান নেই। ব্যাংকিং সেক্টরসহ অর্থনৈতিক খাতে বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও কোনো সুখবর নেই। কৃষকরাও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেননা। উপরন্তু মূল্যস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের লাখ লাখ পরিবার নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারী কোন উদ্যোগই কাজে আসবেনা। দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে শুল্ক প্রত্যাহারের কারণে সরকার শত শত কোটি টাকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হলেও এর কোন সুফল পাচ্ছেনা সাধারণ মানুষ। চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে মিলার, আমদানীকারক ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা। বর্ষার আগেই দেশে বন্যার আশঙ্কা শোনা যাচ্ছে। বন্যা সব সময়ই ধানের ফলন এবং মূল্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। অতএব চালের মূল্যবৃদ্ধি চলমান হারে অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ না উঠলেও ভোক্তা পর্যায়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দেশের লাখ লাখ কৃষক ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এ ধরনের বাস্তবতা দেশের কৃষিব্যবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। বাম্পার ফলনের মধ্য দিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন করে তোলার পরও কৃষক নি:স্ব হয়ে পড়া এবং লাখ লাখ টন চাল আমদানীর সুযোগ অবারিত রাখা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে আগামীতে দেশে ভয়াবহ খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে দেশের কৃষি উৎপাদন, আমদানী-রফতানী এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধারাবাহিক ব্যর্থতার গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কৃষিপণ্যের মূল্য এবং সরকারীভাবে ধান চাল ক্রয়ের সীমাবদ্ধতা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চালের

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন