Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোজার ফাজায়েল ও মাসায়েল

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহে রমজান মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তার বান্দাদের জন্য একটি বিশেষ উপহার, একটি বিশেষ সুযোগ। যেমনিভাবে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সময়ে বিশেষ দ্রব্যের ব্যবসা অধিক লাভজনক হয়, তেমনি রমজানে ইবাদতে একজন মুমিন বান্দার জন্য অধিক লাভজনক। মুসলমান প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজে আইন। অস্বীকার করলে কাফের ও না রাখলে ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ। (বুখারী: ১৯০৪)। ঢাল যেমন একজন যুদ্ধাকে তীর, গুলী বা যে কোনো রকম নিক্ষেপণ অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমন রোজাও একজন মুমিন ব্যক্তিকে সবধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রোজাদারের মর্যাদা এত বেশী যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য রাইয়ান নামক দরজা থাকবে, যার ভেতর দিয়ে কেবল রোজাদাররা বেহেশত প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্যকেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারী :৩৪০৪)। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে যখন বান্দা যখন ইফতার সামনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, সেই দৃশ্য দেখে আল্লাহ পরম আনন্দ লাভ করেন। আর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। সংযম এবং আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ হিসেবে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে রোজার মাসায়েল উল্লেখ করা হলো:
যাদের উপর রোজা ফরজ:
১. মুসলমান হওয়া। কোনো কাফের উপর রোজা ফরজ নয়। ২. বালেগ হওয়া। নাবালেগের উপর রমজানের রোজা ফরজ নয়। তবে অভ্যস্ত করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিৎ। তারা নামাজ রোজা পালন করলে তাদের মা-বাবা এর সওয়াব লাভ করবে। ৩. রমজানের রোজা প্রত্যেক বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরজ হওয়ার কথা জ্ঞাত থাকা। ৪. রোজা রাখতে অক্ষম না হওয়া। ৫. সজ্ঞান হওয়া। পাগল বা উন্মাদের উপর রোজা ফরজ নয়।
যে কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং তা কাজা করতে হয় :
১. কানে অথবা নাকে তেল বা ওষুধ প্রয়োগ করলে। ২. নস্যি গ্রহণ করলে। ৩. স্বেচ্ছায় মুখভরে বমি করলে। ৪. অনিচ্ছাকৃত বমি গিলে ফেললে। ৫. কুলি করার সময় বা অন্য কোনো কারণে পেটের মধ্যে পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করালে। ৬. ধূমপান করলে। ৭. লোবান, আগরবাতি ইত্যাদির ধোয়া স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলে। ৮. পাথরের টুকরা, লোহা, তামা ইত্যাদি অখাদ্য বস্তু গিলে ফেললে। ৯. রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার বা যৌনচার করলে। ১০. সূর্য অস্ত গিয়েছে মনে করে দিন থাকতেই ইফতার করলে। ১১. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ছোলার সমান বা ছোলার চেয়ে বড় কোনো খাদ্যকোণা গিলে ফেললে। ১২. পান মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আর এ অবস্থায় ভোর হয়ে গেলে। ১৩. অজু অথবা গোসলের সময় পানি গলার ভেতর চলে গেলে। ১৪. মস্তিষ্ক বা পেটের জখমে ওষুধ পৌঁছালে। ১৫. স্পর্শ বা চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত ঘটলে। ১৬. অজানা অবস্থায় ঘুমের ভেতর কিংবা সচেতন অবস্থায় কেউ জোরপূর্বক কোনোকিছু পানাহার করালে। ১৭. ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভঙ্গ হয়েছে মনে পুনরায় আবার পানাহার করলে। ১৮. কোনো নফল রোজা স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে ফেললে। ১৯. দুপুরের পর রোরার নিয়ত করলে। ২০. দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত থুথুর চেয়ে বেশী হলে এবং তা কণ্ঠনালিতে চলে গেলে। ২১. কোনো স্ত্রীলোক রোজা অবস্থায় গুপ্তাঙ্গের ভেতরের কোন প্রকার ওষুধ বা তেল প্রয়োগ করলে। ২২. সহবাস বা সঙ্গম ছাড়া কেউ যদি কামচারিতার্থের জন্য বিকল্প পন্থা অবলম্বন করলে। যেমন: হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে। ২৩. রোজাদারের মুখে ঘাম বা চোখের পানি প্রবেশ করালে, আর তা যদি কণ্ঠনালি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ২৪. বৃষ্টি বা বরফের পানি কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে।
যে কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হয় :
১. নিয়ত সহকারে রোজা রেখে স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে ফেলা। ২. কেউ কাম-উত্তেজনার সঙ্গে যৌনকর্মে বা সমকামিতায় লিপ্ত হলে। ৩. পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ নারীর গুপ্তাঙ্গের ভেতর প্রবেশ করলে, এমতাবস্থায় বীর্যপাত হোক বা না হোক। ৪. কোনো রুচিহীন ব্যক্তি যদি তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে প্রবেশ করায়, তাহলে উভয়ের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। ৫. স্ত্রী যদি ঘুমন্ত বা বেহুশ অবস্থায় থাকে আর স্বামী তার সঙ্গে সঙ্গম করে, তাহলে স্বামীর উপর কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে।
রোজার কাফফারা :
১. রমজাম মাসের রোজার কাফফারা হলো, একটি রোজার জন্য কোনোপ্রকার বিরতি ছাড়া ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা। ২. যদি কারও কাফফারার রোজা আদায়ের শক্তি না থাকে, তাহলে একটি ফরজ রোজার জন্য ৬০ জন গরীব-মিসকিনকে দুবেলা পেটভরে খাওয়াবে। অথবা একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুবেলা খাওয়াবে। ৩. প্রত্যেক মিসকিনকে প্রত্যহ এক সদকায় ফিতরের পরিমাণ আটা বা গম দিবে কিংবা আটা বা গমের দাম দিবে। একই রমজান মাসে একাধিক রোজা ভেঙ্গে থাকলে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে।
যে কারণে রোজা মাকরূহ হয় :
১. বিনা প্রয়োজনে কোনোকিছু চিবানো। ২. গীবত বা পরদোষ চর্চা করা। ৩. ঝগড়া-বিবাদ করা। ৪. অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা। ৫. মিথ্যা বলা। ৬. কাউকে কষ্ট দেয়া। ৭. টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা বা মাজন দিয়ে দিনের বেলা দাঁত মাজা। ৮. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা। ৯. সারাদিন নাপাক অবস্থায় থাকা। ১০. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করা। ১১. ঘাবড়ে যাওয়া বা অস্থিরতা প্রকাশ করা। ১২. কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় প্রয়োজানাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা। ১৩. রোজা অবস্থায় এমন কোনো কাজ করা, যাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোজা ভেঙ্গে ফেলার আশংকা হয়। ১৪. অশ্লীল গান-বাদ্য শ্রবণ করাম ১৫. কুদৃষ্টি থেকে চোখের হেফাজত না করা। আমিন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজার

৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ