Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলমুখী জনস্রোত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ও চট্টগ্রাম অঞ্চল সহ সারা দেশ থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী জনস্রোত গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। এবারের ঈদের আগে-পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত দশ লাখ মানুষ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করবে বলে আশা করছে নৌ ও সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকগন। সড়ক পথেও প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২ হাজার যানবাহন দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে পারাপার হবে। তবে গতকাল সকাল ৭টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়ার কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া, চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা-বরিশাল ফেরি সেক্টরগুলোতে প্রায় ১১ হাজার যানবাহান পারাপারের পরেও ৭ শতাধিক অপেক্ষমান ছিল। আজ থেকে বিআইডব্লিউটিসি দেশের ফেরি সেক্টরগুলোতে কমপক্ষে ১২ হাজার করে যানবাহন পারাপারের লক্ষ্যে কাজ করছে। এলক্ষ্যে সংস্থাটির ফেরি বহরের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়। তবে এবারো চট্টগ্রাম-বরিশাল নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস পুণর্বহাল করলনা বিআইডব্লিউটসি। ফলে এবারো চট্টগ্রাম অঞ্চলের যাত্রীদের চাঁদপুর ও লক্ষীপুর হয়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে পৌছতে হবে।
এদিকে আষাঢ়ের অমবশ্যার ভরা কোটালে ভর করে এবারের ঈদের আগে আবহাওয়া কিছুটা দূর্যোগপূর্ণ থাকার আশংকার মধ্যেই লাখ লাখ যাত্রীকে নৌপথে গন্তব্যে যাত্রা করতে হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে বরিশাল সহ দক্ষিণের সবগুলো নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবত ছিল। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে সব ধরনের নৌযানের চলাচলও বন্ধ রাখার নির্দেশনা ছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সবগুলো এজেন্সী নৌপথে সম্ভাব্য সব ধরনের ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সর্বাত্মক নিরাপত্তার কথা বললেও অতি স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে নৌযানগুলোতে ওভারলোডের কোন বিকল্প থাকছে না। ঈদের আগে আজ শেষ কর্মদিবসের পরে ঘরমুখি মানুষের মূল স্রোত শুরু হবে। কিন্তু কাল বাদে শনিবারেই ঈদ উল ফিতর। ফলে আজ ও কালকের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের দক্ষিণ জনপদের ঘরে পৌছতে প্রানন্তকর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
গতকালই ঢাকা থেকে শুধু বরিশাল রুটে ৮টি বেসরকারি বড় মাপের নৌযান ছাড়াও ৩টি ক্যাটামেরন ও ২টি সরকারি নৌযান যাত্রী বোঝাই করে যাত্রা করে। তবে বেসরকারি নৌযানগুলো ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা নদী বন্দর ত্যাগ করলেও সরকারি দুটি নৌযান ডেক শ্রেণীতে অর্ধেক যাত্রীও তুলতে পারেনি। অথচ সরকারি নৌযানের ডেক শ্রেণীতে ভাড়া বেসরকারি নৌযানের চেয়ে কম। শুধুমাত্র সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ও ৭টায় সরকারি নৌযান ঢাকা বন্দর ত্যাগ করায় বেশীরভাগ যাত্রীই ঐসব নৌযানে আরোহন করতে পারেননি।
বেসরকারি নৌযানগুলো মেঘনার ভাটির স্রোতে গত মধ্যরাতের মধ্যেই বরিশাল বন্দরে পৌছে যাত্রী নামিয়ে দিয়েই পুনরায় ঢাকায় ফেরত গেছে। ফলে আজ ঢাকা থেকে প্রায় কুড়িটি বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের নৌযান ছাড়াও সরকারি ২টি নৌযান শুধুমাত্র বরিশালের যাত্রী নিয়ে ঢাকা বন্দর ত্যাগ করবে। এছাড়াও আরো অন্তত ৭০টি নৌযান দক্ষিণাঞ্চলের আরো প্রায় কুড়িটি রুটে যাত্রী পরিবহন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এত বিপুল সংখ্যক নৌযানও যাত্রী সামাল দিতে পারছে না। ফলে প্রতিটি নৌযানই গতকাল থেকে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে। আজ এবং আগামীকাল পরস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তবে ঢাকা-বরিশাল ছাড়াও ঢাকা-পটুয়াখালী ও ঢাকা-ভোলা নৌপথের রুট পারমিটধারী সবগুলো নৌযানই আজ ও কাল ডবল ট্রিপে যাত্রী বহন করায় যাত্রীর চাপ কিছুটা সামাল দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ঘরমুখী শ্রমজীবী মানুষের স্রোত ঈদের দিনও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল।
এমনকি ঈদ পরবর্তী পনের দিন কর্মস্থলমুখী ফিরতি মানুষের ভীড় অব্যাহত থাকবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সে হিসেবে ঈদের আগের চেয়ে পরবর্তী দিনগুলোতে আরো অধিকতর সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঈদের পরে আর তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না। ঈদের আগে পরে সব নৌযানের কেবিন টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এমনকি আগামী ৩০ জুন পর্যন্তই দক্ষিণাঞ্চলের কোন লঞ্চের কেবিন টিকেট মিলছে না।
এদিকে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বিআইডব্লিউটিসি দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টর সহ সবগুলো সেক্টরে প্রায় ১১ হাজার যানবাহন পারাপারের পরে আরো প্রায় ৭শ’ অপেক্ষমান ছিল। পারাপারকৃত যানবাহনের মধ্যে শুধুমাত্র আরিচা সেক্টরের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটেই প্রায় সাড়ে ৬ হাজার এবং মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী ফেরি রুটে প্রায় ৪ হাজার যানবাহন পারাপার করা হয়। এছাড়াও ভোলা-লক্ষীপুর সেক্টরে প্রায় ২শ’ এবং ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরে আরো তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের পরেও এসব ফেরি সেক্টরে আরো ৭শ’ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
বর্তমানে দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টর পাটুরিয়া ও মাওয়া’তে ২০টি করে বিভিন্ন ধরনের ফেরি বানিজ্যিক পরিচালনে রয়েছে। তবে প্রয়াজনীয় ফেরির অভাবে ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরে যানবাহন পারাপারে চরম সংকট অব্যাহত রয়েছে। এদুটি ফেরি সেক্টরে পরাপারকৃত যানবাহনের প্রায় সম সংখ্যকই অপেক্ষামান থাকছে। স্বল্পতার কারণেই এ দুটি সেক্টরে প্রয়োজনীয় ফেরি বাণিজ্যিক পরিচালনে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহল। এমনকি লাহারহাটে একটি ইউটিলিটি ফেরি দীর্ঘদিন ধরেই ঘন ঘন গোলযোগের কারণে বন্ধ থাকলেও তার পূর্ণাঙ্গ মেরামত পর্যন্ত হচ্ছেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চলমুখী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ