Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উৎসবমুখর ঈদ উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। কাজী নজরুল ইসলামের এই পংক্তি ‘সুমধুর ধ্বনি’ উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্রই। সত্যিকার অর্থেই খুশির বারতা নিয়ে এসেছিল ঈদ বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে। ধনী-গরীব, শিশু-বৃদ্ধা সবার পড়নে নতুন কাপড় আর সেমাই খাওয়ার ধুম। ঈদুল ফিতর যেন এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে এসেছিল মুসলমানদের ঘরে ঘরে। যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীযর্, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ¡াসের মধ্যদিয়ে সারাদেশে পালিত হলো পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর। পবিত্র রমজানে এক মাস সিয়াম সাধনার পর দেশের মুসলিম স¤প্রদায় তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেন। কোনো ধরণের অঘটন ছাড়াই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি মানুষ ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ঈদ উপলক্ষ্যে মহামান্য প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বস্তরের জনতা ও বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঈদের দিন কারাগারে গেলে তিনিও তাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান; পাশাপাশি নিজের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ গ্রামের বাড়ি যান। নাড়ীর টানে গ্রামে ফিরতে পথে তাদের যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে পারায় তারা দারুণ খুশি। তিন দিনের সরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় তাদের বড় অংশ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা ফাঁকা থাকলেও শহরের বিনোদন স্পটগুলোয় ছিল উপচে ভরা ভীড়। বিনোদন কেন্দ্রগুলোর অবস্থা ছিল ঠাই নাই ঠাই নাই। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট, হবিগঞ্জ, রাজশাহী পদ্মাপাড়, সুন্দরবনসহ দেশের অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলো লাখ লাখ পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। কয়েক মাস পর দেশে জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের বছরে পবিত্র ঈদুল ফিতরে রাজনীতিকরাও ঘরে ঘরে বিলিয়েছেন আনন্দের বার্তা।
ঈদ উপলক্ষে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাজধানীর বনানী-ঢাকা গেট হতে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার লাগানো হয়। নির্দিষ্ট সরকারি ভবনসমূহে করা হয় আলোকসজ্জা। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা স¤প্রচার করে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে ইতোমধ্যে বিশেষ সংখ্যা। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধ নিবাস, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে সেমাই-মিষ্টিসহ উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশুপার্কে প্রবেশের ব্যবস্থা এবং বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশালে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়েই। ঈদে ঢাকা মহানগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে।
প্রতি বছরের মতোই এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুরের গোরা শাহ ঈদগা মাঠেও ঈদের বৃহৎ জামাতে মুসুল্লীরা নামাজ আদায় করেন। দুই বছর আগে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারায় কয়েকজন। এবার শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত নির্বিঘœ করতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার ঈদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উৎযাপন করেছেন। মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের গ্রামে এবং উপজেলা-জেলা শহরে ঈদ উদযাপন করায় মানুষের মধ্যে বাড়তি আনন্দ বয়ে আনে। নেতারা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি কাপড়, সেমাই-চিনি বিতরণও করেন। দলীয় কর্মীরাও ছিলেন উদ্দীপনাময়। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপির নেতারা ঈদের দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন। অতপর বন্দী নেত্রী বেগম জিয়াকে দেখতে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে যান। পথে বাধার মুখে ফিরে এসে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের ঈদ দেশবাসীর জন্য ‘বিষাদময়’। বেগম জিয়ার সঙ্গে ঈদের দিন দেখা করার জন্য তিন দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পরও দেখা করতে না দিয়ে অবৈধ সরকার (তাঁর ভাষায়) ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। ঈদের দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তিনি ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘেœ ঘরে ফিরতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলেন, বিনা বিচারে হত্যা আর জুলুম নির্যাতনে ঈদের দিন মানুষের আনন্দ অধরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বি চৌধুরী ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের করে নির্বাচন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে শিশু-কিশোরদের হৈ-হুল্লোড়ে উৎসব মুখর ছিল বিনোদন কেন্দ্রগুলো। শিশু কিশোরদের আনন্দকে রোমাঞ্চকর ও প্রাণবন্ত করে তুলতে মিরপুর চিড়িয়াখানা, শাহবাগ শিশু পার্ক, শিশুমেলা, জাদুঘর, হাতিরঝিল, বোর্টানিক্যাল গার্ডেন, পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, ক্রিসেন্ট লেক ও রবীন্দ্র সরোবরে ছিল দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। শিশু থেকে বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে ওইসব বিনোদন স্পট। এছাড়া আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দন পার্কে ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেন। আবার অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ান ফাঁকা ঢাকার রাজপথ। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা দিনাজপুর, নিলফামারী, বগুড়া, রাজশাহীর পদ্মা পাড়সহ দেশে বিনোদন স্পটগুলোতে লাখ লাখ দর্শনার্থী ঈদের দিন ঘুরে বেড়ান।
ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। তার আগে সকাল ৭টায় বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। পরে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আরো ৪টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে প্রেসিডেন্ট মাঃ আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতা, সরকারি ও সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন। ঈদ উপলক্ষে ‘আমরা ঢাকাবাসী’র উদ্যোগে ঈদের পরের দিন নগরীর শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে ঈদ আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩দিনের সরকারি ছুটি থাকায় অফিস-আদালত ছিল বন্ধ। ব্যবসায়ীদের বিকিকিনি চাঁদ রাতে শেষ হওয়ায় মার্কেট-বিপনী বিতানগুলো ছিল বন্ধ। মানুষ ঈদের তিন দিন ছুটি এবং নিরাপত্তা নির্বিঘœ থাকায় একে অপরের বাসায় যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ উল্লাসেই এবার ঈদ উদযাপন করেছেন। ঈদুল ফিতর; আহা একি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের জামাতগুলোতে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে। বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে নগরী ও জেলার ঈদগাহ এবং মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজে শরিক হন মুসল্লিরা। সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রধান জামাত। এতে ইমামতি করেন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলেয়া মাদরাসা চট্টগ্রামের মুহাদ্দিছ আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরি। একই স্থানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ঈদ জামাত। প্রধান ঈদ জামাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শরিক হন।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। তবে ঈদ উদযাপনের নামে বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় উচ্ছৃংখল ছিচকে মাস্তান ও উঠতি মাস্তানদের পাড়া মহল্লায় আলোকসজ্জার আড়ালে বিকট শব্দের গান বাজনায় সুস্থ্য পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। মহানগর পুলিশ অবশ্য রাত ১২টার পরে নগরীর কয়েকটি এলাকার মাইক বন্ধ করে দেয়। বরিশালের চরমোনাই, ছারছিনা, ঝালকাঠি কায়েদ সাহেব হুজুরের দরবার শরিফ ও পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের হজরত ইয়ারউদ্দিন খলিফা (রঃ)-এর দরবারে ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বরিশালের উজিরপুরের গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদের ঈদ জামাতেও বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী নামাজ আদায় করেন। বরিশাল মহানগরীর ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালসহ বিভাগীয় কমিশনার, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাধারন মুসুল্লীগণ এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এবারো বরিশাল কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মহিলাদের জন্য ঈদের নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রতিবারের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। গত শনিবার ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের অন্তত লাখ লাখ মুসল্লির ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশ্যে। জেলা শহরের প‚র্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিাত শোলাকিয়া ঈদগাহমুখি সকল সড়ক চলে যায় মুসল্লিদের দখলে। কয়েক ঘণ্টার জন্য এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জামাত শুরুর আগেই সাত একর আয়তনের বিশাল ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড়, নবনির্মিত শোলাকিয়া সেতু ও বাড়ীর ছাদে জায়গা করে নিয়ে জামাতে শরিক হন। ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানে এবার ছিল ১৯১তম ঈদ জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা. ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তাম‚লক ব্যবস্থা। প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয় ড্রোন ক্যামেরা। শোলাকিয়ার আকাশে ড্রোন উড়া ছাড়াও মাঠের চারপাশে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক হাজারেরও বেশি সদস্য ঈদগাহ মাঠকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। পুরো এলাকায় বসানো হয় অর্ধশতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। রেওয়াজ অনুযায়ী এবারও বন্দুকের গুলি ছুড়ে শোলাকিয়া ময়দানে ঈদজামাত শুরু হয়। নামাজ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে ৩টি, তিন মিনিট আগে ২টি ও এক মিনিট আগে ১টি বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে সমবেত মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতির জন্য সংকেত দেয়া হয়।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, ঈদুল ফিতরের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ময়দানে। ঈদগা মাঠমুখি মুসুল্লিদের কাফেলা দেখে নামাজের নির্ধারিত সময় ৯টা থেকে বাড়িয়ে ৯টা ২০ মিনিট করা হয়। দেখতে দেখতে ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ শৈল্পিক মিনারের পাদ দেশ থেকে পূর্ব প্রান্তে কাতার পূর্ণ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এই জামাতটি দেশের নয় বরং এই উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জামাত বলেই আয়োজকরা মনে করছে। নুতন মিনারের পাদদেশে খোলা আকাশের নীচে অনুষ্ঠিত এবারের জামাতে প্রায় ৫ লক্ষ মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেছে। জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের পেশ ইমাম শামুসুল হক কাছেমী। গোর এ শহীদ ময়দানের দৃষ্টি নন্দন মিনার এবং বিশাল জামাতের গ্রহণযোগ্যতা জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তজাতিক পর্যায়ে স্থান পেতে যাচ্ছে। গোরা শহীদ ঈদগা জামাতটি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ওয়াল্ড হ্যারিটেজের পাতায় স্থান পেতে যাচ্ছে বলে নামাজ পূর্ব শুভেচ্ছা বক্তব্যে জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এম পি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, গত শনিবার সকাল ৮টায় জেলা শহরের কাজীপাড়াস্থ জেলা ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইমামতি করেন স্থানীয় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ মোহাদ্দেস মাওলানা নোমান আল হাবিবী। জামাতে নামাজ আদায় করেন জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাগুরায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। শহরের নোমানী ময়দান ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় মাগুরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ রইচ উদ্দিন এর ইমামতিতে জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান, পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলসহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ এ জামায়াতে নামাজ আদায় করেন।
পাবনা থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান, পাবনায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। প্রবল বর্ষণ হওয়ায় ঈদগাহ ময়দানে পানি থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, তাদেরকেও রক্ষা করার জন্য মোনাজাত করা হয়।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ঈদ-উল ফিতর নামায শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলায় ছোট বড় সবমিলিয়ে ২৩০টি ঈদগাহ মাঠে সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঈদ-উল ফিতর নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।



 

Show all comments
  • তামিম ১৯ জুন, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 0
    মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ