Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘এমপিও না দিলে বাড়ি ফিরব না’

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে টানা দশম দিনের মতো জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে এমপিকরণের দাবিতে অবস্থান করছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই এখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা (স্কুল-কলেজ-মাদরাসা) যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। আন্দোলন থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘এমপিও না দিলে বাড়ি ফিরে যাব না’; ‘এক দফা দফা এক দাবি এমপিওভুক্তিকরণ চাই’; ইত্যাদি বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্লাকার্ড হাতে ¯েøাগানে প্রেস ক্লাব এলাকাজুড়ে উত্তাল হয়ে ওঠে।
নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রæতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো বিভিন্ন আইন তৈরি করে আমাদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এ কারণে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এমপিওকরণের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়ি ফিরে যাবে না। প্রতিদিন এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এতেও যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হয় তবে রাজপথে বসেই আমাদের লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। জীবন গেলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। নিজেদের অধিকার আদায়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারী-পুরুষ শিক্ষক-কর্মচারীরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা বেতন-ভাতার জন্য পরিবার ছেড়ে রাজপথে নেমেছি। ঈদের দিনেও পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। শিক্ষকতা করে কি আমরা অপরাধ করছি? তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে আমাদের স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।’ আন্দোলনকারীরা আরো অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে এখনও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন না। সমাজে তাদের কোনো সম্মান নেই! তারা বলেন, আমারা বেতন-ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে চলছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এমপিওকরণের ঘোষণা দেয়ায় আমরা আন্দোলন স্থাগিত করে বাড়ি ফিরে যাই। বলা হয়েছিল চলতি বছরের বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো এমপিও নীতিমালার নামে আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে তিনি নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। তারপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে টানা দশ দিন ধরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে আন্দোলন করে যাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষকরা রাস্তায় কেন?
নন-এমপিও শিক্ষকদের রাস্তায় বসিয়ে রেখে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদÐ’ বলা যায় না অভিমত ব্যক্ত করে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, সরকারের কাছে টাকা না থাকলে আমাদের কাছে আসুন। টাকা কিভাবে আসবে তা আমরা জানিয়ে দিবো। শিক্ষকরা রাস্তায় থাকবে এটা কেমন কথা?
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে রাস্তায় অবস্থান নেয়া শিক্ষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এসে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি ও বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে সেই ইন্টারেস্ট দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেয়া সম্ভব। সম্পদ আর বৈষম্য বাড়লে সেই অর্থ ধনীদের হাতে চলে যায়।
সিপিবি সভাপতি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, অর্থ পাচারকারীরা সরকারের লোক। সরকার ঋণ খেলাপিদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, সরকার চাইলে শিক্ষকদের অর্থ জোগাড় হয়ে যেতো। কিন্তু সরকার ভোটের রাজনীতির সাথে শিক্ষকদের নিয়ে খেলছে। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এই দুই বাম নেতা। তারা বলেন, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের রাস্তায় ফেলে রাখা এ কেমন মানসিকতা?
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি আদায় করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিধি প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। এমপিও আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার হুঁশিয়ারি দেন। শিক্ষকদের দেয়া তথ্যমতে এখনো ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও পায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিক্ষোভ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ