Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২৭ বছর ঝুলে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে : আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এ দিবসটি পালন হচ্ছে আজ। প্রায় ১১ লাখের অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বসবাস করে আসছে। বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্টির কারনে কক্সবাজারের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
সরকার এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসনচরে স্থানান্তরিত করলে সেখানে যেতে ও প্রস্তুত তারা। আবার অনেকে বলছেন নিজের দেশ মিয়ানমারেই ফিরবেন তারা। বাংলাদেশের ৩০ টি শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে রোহিঙ্গারা।
দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সমস্যা ঝুলে থাকায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া, লেদা, হোয়াইক্যং, নাইক্ষ্যংছড়িতে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখের অধিক (বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) শরণার্থী অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে।
বহিরাগর্মণ বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উখিয়া-টেকনাফের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকের হোসেন বলেন, বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলে সবর্শেষ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে। যা (২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু করে)। বর্তমানে নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত আছে।
আরআরসি অফিস এর মতে সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই ২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল। এরপর থেকেই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তেমন কোনো অগ্রগতি ছাড়াই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে গেল যৌথ ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নেয়া এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার আহŸান জানানো হয়। তবে এসব বিষয়ে মিয়ানমার পক্ষ সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস দেয়নি। গত বছরের আগস্টের পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ছিল। ফলে সব মিলিয়ে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রিত আছে। তাদের ফেরত পাঠাতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। চুক্তির আলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে গত ১৬ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে প্রথম বৈঠক হয়। তারপর বাংলাদেশ ৮হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছে। মিয়ানমার তাদের মধ্যে ৮৭৮ জনের পরিচয় যাচাই করে ফেরত নেয়ার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। তবে প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্র এখনও প্রস্তুত নয়। তবে মিয়ানমার সরকারও সে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রæত ফিরিয়ে নিতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রæততর করার বিষয়ে দু’পক্ষই একমত।
‘আসলে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সব ধরনের সমস্যাই উঠে আসে। আজ সব দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিকগুলো কঠিন।
বাংলাদেশের দেয়া আট হাজার রোহিঙ্গার ওই তালিকা দেওয়ার পর মিয়ানমার ভেরিফাই করে দেখছেন তালিকার সঙ্গে মিলকরণ এবং এভাবেই প্রত্যাবাসন কাজ এগিয়ে যাবে এবং দুই পক্ষের টেকনিক্যাল দল এ বিষয়ে কাজ করছে। এদিকে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরার ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি’ হলে তাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গেও একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এ প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতেই একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ রয়েছে ওই সমঝোতা স্মারকে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। সে কারণে তারা নানা অজুহাতে প্রক্রিয়াকে ধীর ও বিলম্বিত করছে। ২০০৫ সালের পর থেকে কোনো রোহিঙ্গাকেই ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এবারও নেবে না বলেই তারা মনে করেন।
রাখাইন প্রদেশে বার বার রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা। তবে যারা ক্যাম্পে আছেন, তারা সম্মান নিয়ে দেশে ফিরতে আগ্রহী। সে সাথে বাংলাদেশ সরকার যদি অন্য স্থানে তাদের পাঠাতে চায় সেখানে ও যেতে প্রস্তুত এসব রোহিঙ্গা। তবে নিজ দেশে ফেরাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। শরণার্থী আমির হামজা বলছেন, ইউএনএসসি এর এবং জাতিসংঘ ভাল মনে করলে তারা চলে যাবেন। লেদা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা আবদুল মতলব বলেন, আমাদের নাগরিকত্ব দিলে অবশ্যই ফিরে যাব।
১৯৯২ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারে তৎকালিন সামরিক জান্তা সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়ে ২লাখ ৫২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে চলে এসেছিল। পরবর্তীতে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন শরনার্থী স্বদেশে ফিরে গেলেও মিয়ানমার সরকারের ছাড়পত্র না দেয়ার কারনে আরো ২৫ হাজার শরণাথী স্বদেশে ফেরৎ যায়নি।
সুজন টেকনাফ শাখার সভাপতি এবিএম আবুল হোসেন রাজু বলেন, তারা বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাই আমাদের দেশ থেকে তাদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হউক। স্থানীয় ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ এবং শরণার্থীদের ছাড়পত্র না দেয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম করা যাচ্ছেনা। ইউএনএইচসিআরের মতে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি অবশ্যই শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় এবং শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কারণে আশপাশের বাংলাদেশি জনবসতিগুলোতে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিসহ নানা সমস্যা-সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান, রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, সরকার এ বিষয় কে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আবারও শুরু করবে এমনটা মনে করেন দীর্ঘদিনের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে জর্জরিত বাংলাদেশের এই অঞ্চলের মানুষ ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ