Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নেপাল-চীন ২৪০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : হিমালয় কন্যা নেপালের সঙ্গে ২৪০ কোটি ডলারের আটটি চুক্তি করেছে চীন। বুধবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির চীন সফরে এসব চুক্তিতে উপনীত হয় দুই দেশ। চীনে নিযুক্ত নেপালের দূতাবাসে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক, নেপালের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, সিমেন্ট কারখানা, ফল চাষসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবেন চীনা ব্যবসায়ীরা। পাঁচ দিনের সফরে গত সোমবার বেইজিং পৌঁছান নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম চীন সফর। সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় অবকাঠামো, দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্গঠন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে নেপালের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে চীন প্রস্তুত।
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো চীন সফর করছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। দুই দেশই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে। তাদের এই মন্তব্য মনোযোগ কেড়েছে ভারতের। ওলির এই সফর ঐতিহাসিক হয়ে উঠতে পারে। চীন ও নেপালের সার্বিক সহযোগিতা হিমালয় অঞ্চলের দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
চীন-নেপাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অনুন্নত দেশ হিসেবে নেপালকে বিদেশী মূলধন এবং প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হবে। দেশের পানি, জলবিদ্যুৎ শক্তি এবং পর্যটনের সম্ভাবনাকে এখনও পুরোপুরি আবিষ্কার করতে পারেনি নেপাল। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা এখন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। নেপালের এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য চীনের মূলধন, প্রযুক্তি এবং নিম্নমূল্যের নির্মাণ সক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া বহির্গামী প্রচুর পর্যটকও রয়েছে চীনের যারা নেপালের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
চীনের সাথে সহযোগিতার ব্যাপারে নেপাল জনগণ খুবই আগ্রহী। চীনের অলৌকিক-প্রায় উন্নয়ন তারা দেখেছে এবং সেখানে তাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা মনে করে। নেপালের জনগণের মধ্যে চীনা ভাষা শেখা এবং চীনে পড়ালেখা করার আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। চীনে বর্তমানে ১০ হাজারের মতো নেপালি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। নেপালের মানুষ ব্যাগ্রভাবে চাচ্ছে যাতে সরকার দ্রæত চীনের সাথে সহযোগিতা জোরদার করে। তিব্বত-কাঠমাÐু রেললাইনের ব্যাপারে তাদের উচ্চ আশা রয়েছে। এই রেললাইন স্থাপিত হলে পাঁচ ঘন্টায় তারা লাসা যেতে পারবে।
নেপালে বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় চীনের সাথে সহযোগিতার গতি বাড়বে। পাঁচ বছরে সাতবার প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে নেপালে যেটা দেশের নীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং এতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং যখনই নতুন কেউ ক্ষমতায় আসে বিভিন্ন দেশের সাথে সরকার পর্যায়ের চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা হয় বা অনেক সময় সেগুলো বাতিলও করা হয়। ২০১৬ সালের মার্চে ওলি যখন চীন সফর করেছিলেন, তখন দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তার ক্ষমতা ছাড়ার পর এই চুক্তিগুলোর অধিকাংশেরই কোন বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছর নেপালের আইনসভা নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই বামপন্থী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনাইটেড মাক্সিস্ট লেনিনিস্ট) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে স্থিতিশীল সরকারের জন্য নেপালের জনগণের আকাক্সক্ষার দিকটি ফুটে উঠেছে। মে মাসে এই দুই দল এক হয়ে নতুন কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেছে এবং দুই দলের নেতা ক্ষমতা ভাগাভাগি করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। দলের মধ্যে বড় ধরনের কোন দ্ব›দ্ব দেখা না দিলে দেশে একটা স্থিতিশীল সরকার ও নীতি বজায় থাকবে। ফলে নেপাল চীনের সাথে চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং আরও চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে।
একটা পক্ষপাতমুক্ত চীন-নেপাল-ভারত সম্পর্কের প্রয়োজন এখন। নেপাল চীনের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ভারত। এমনকি বেইজিংয়ের সাথে কাঠমাÐুর সহযোগিতার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করতে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও নাক গলিয়েছে তারা। ২০১৬ সালে ওলির পদত্যাগের পেছনেও ভারতের ভূমিকা ছিল। এরপরও চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওলি। নেপালের উন্নয়নের প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, ভারতের বিপক্ষে যাওয়ার জন্য নয়। চীন ও ভারতের মধ্যে চাপে পিষ্ট ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে দুই দেশের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে নেপালকে। কেউ যেন অখুশি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই নেপালের লাভ হবে। আর প্রতিবেশী দুই দেশেরও উচিত হবে কোন একটিকে বেছে নেয়ার জন্য নেপালের উপর চাপ না দেয়া। সূত্র : সিনহুয়া, ইকনোমিক টাইমস, সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাক্ষর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ