Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঝুঁকিতে বঙ্গবন্ধু সেতু

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৯ পিএম, ২১ জুন, ২০১৮

যমুনা নদীর উপর নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর গাইড বাঁধে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় পুরো সেতুপ্রকল্প ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, নদনদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তের গ্রামরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে ইতিমধ্যেই টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর গাইডবাঁধ বড় ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর গাইড বাঁধ সেতুর নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । নদী থেকে অবাধে ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এবং সেতুর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে সেতু বিভাগের (বিবিএ)গাফিলতি ও ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। সেতু এলাকার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সেতু বিভাগের এক শ্রেনীর কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বছরব্যাপী বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় এখন উজানের ঢলে নদীর পানিবৃদ্ধি ও তীব্র ¯্রােতে গাইড বাঁধের কাছাকাছি এলাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু দেশের বৃহত্তম ও ব্যয়বহুল যোগাযোগ অবকাঠামো। এ ধরনের অবকাঠামো প্রকল্প যখন তখন নির্মান করা যায়না। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে প্রায় এক দশক ধরে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন থাকার পর এখন পর্যন্ত আমরা স্বপ্নের পদ্মাসেতুর মাত্র চারটি স্প্যান দৃশ্যমান করতে পেরেছি। এ থেকেই বোঝা যায় কত সময়, ঝুঁকি ও অর্থব্যয়ে যমুনা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছিল। যমুনা দেশের অন্যতম শক্তিশালী ও ভাঙ্গনপ্রবণ নদী। ভাঙ্গনের কারণে নদীর গতি পরিবর্তন ও নদীতীরের মানুষের বাস্তুচ্যুতি যমুনার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের নদীর উপর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও রক্ষনাবেক্ষনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে ধরনের সতর্কতা ও নজরদারি থাকা প্রয়োজন বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার কিছুই দেখা যায়না। মূলত: বাস্তবায়নের শুরু থেকেই মাননিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অযতœ-অবহেলার শিকার হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি। যমুনা নদীর উপর এই সেতু নির্মিত হওয়ার পর থেকে এটি উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ দেশের বাকি অংশের স্থল যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষীয় অবহেলা ও স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলের অপরিনামদর্শি তৎপরতার কারণে এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মানের মাত্র দুই দশকের মধ্যেই বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন। দেশের বৃহত্তম ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনা যাদের অবহেলার কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
প্রমত্তা যমুনার উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝিতে। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দক্ষিন কোরিয়ার হুন্দাই কনস্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী সেতুটির ১০০ বছরের স্থায়ীত্বের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনের মাত্র ৮ বছরের মাথায় ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে, নিচে এবং বক্সের ভেতর ফাঁটল দেখা দেয়। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর উপরিভাগের ফাঁটল মেরামত করা হলেও পুরো সেতুর ফাঁটল মেরামতের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছিল বিবিএ। মেরামত ছাড়াই ১০০ বছর নির্বিঘেœ সার্ভিস দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র এক দশকের মধ্যেই এমন একটি স্থাপনায় ফাঁটল ও ঝুঁকি সৃষ্টির পেছনেও সেতু রক্ষনাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও ব্যর্থতা রয়েছে। শুধু বঙ্গবন্ধু সেতুই নয়, কেপিআই নিরাপত্তা আইন-২০১৩ বলবৎ হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো স্থাপনা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। শুধু আইন বা নীতিমালা করে বসে থাকলেই হয়না। আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগও নিতে হয়। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশী কোম্পানীর পেছনে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। বিবিএ এবং সেতু বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে স্থাপনার নিরাপত্তার সার্বিক বিষয়ের দিকে নজর রাখা এবং যে কোন ধরণের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে সেতুকে রক্ষা করা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেতু বিভাগের গাফিলতি, অবহেলা ও ব্যর্থতার কারনে সেতু ও বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাঁধ ভেঙ্গে ও অস্বাভাবিক বন্যায় একদিকে লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ সেতুসহ অবকাঠামোগুলো আস্বাভাবিক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও বাঁধগুলোর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবন্ধু

৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন