Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিচার হয় না বলেই বর্বর হয়ে ওঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াং লি’র নিবন্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৮, ৯:২৫ পিএম

অন্যান্য দিনের মতো সেনিও মাঠে কাজ করছিল তিন রোহিঙ্গা নারী। আচমকা তাদের ঘিরে ফেলে জনাকয়েক সেনা। দেখতে দেখতে ৮০ জন। তুলে নিয়ে গেল ব্যারাকে। তারপর সেই চিরপরিচিত বর্বর নির্যাতন গণধর্ষণ। টানা চার দিন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর অমানবিক ও বর্বর এ নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যার পর প্রায় ১০ মাস গত হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে নিন্দা ও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সহিংসতার জন্য প্রধান দায়ী সেনাবাহিনীকে বিচারের কাঠগড়ায় আনতে পারেনি বিশ্ব স¤প্রদায়। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তারা। বিশ্ব স¤প্রদায়ের এই বিস্মৃতি ও ব্যর্থতার কারণেই রোহিঙ্গাদের ওপর বাববার বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার সুযোগ ও সাহস পেয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাই সহিংসতা বন্ধের একমাত্র পথ। দ্য গার্ডিয়ানে লেখা এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছেন মিয়ানমারের জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াং লি। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানে তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বহু নারীকে। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ নামের এই অভিযানে রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। প্রাণে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয়। মৌলিক অধিকার ছাড়াই প্রাদেশিক রাজধানী সিত্তের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে তারা। মিয়ানমারে এসব নতুন নয়। ১৯৪৮-র গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই চলে আসছে। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন নাবালকদের কাঁধে অস্ত্র তুলে দিয়ে ‘শিশু সৈনিক’- কি হয়নি তখন? ১৯৯০ সালে কায়িন রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ওপরে সেনাবাহিনীর বর্বরতা! সে সময়ও ১০ হাজার মানুষ মিয়ানমার ছাড়ে। পালিয়ে যায় থাইল্যান্ড। ১৯৯৬-৯৮ টানা দু’বছর ধরে দেশটির শান রাজ্যে নৃশংসতা চালায় এই সশস্ত্র বাহিনী। এখনও ৩ লাখের বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যায়। তারপর ১৭ বছরে যুদ্ধবিরতি শেষে ২০১১ সালে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে শান ও কাচিন রাজ্যের গ্রামগুলোতে। আবার গ্রাম ছাড়ে এক লাখ। চলতি বছর মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে কাচিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয়েছে কয়েকশ’ মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ। প্রতি বছরই ক্ষেপে উঠেছে বিশ্ব বিবেক। দাবি উঠেছে বিচারের। কিন্তু কোনোবারই এই বাহিনীর শাস্তি হয়নি। বিচারের আওতায়ও আনা যায়নি। বিশ্ব স¤প্রদায়ের এই ব্যর্থতায় আজকের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সবচেয়ে ‘বড় সাহস’। গার্ডিয়ান।



 

Show all comments
  • আজগর ২৪ জুন, ২০১৮, ৩:৩৬ এএম says : 0
    একদম ঠিক কথা বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • সাইদুর ২৪ জুন, ২০১৮, ৩:৩৮ এএম says : 0
    এসব তো আমরা জানি । নতুন কিছু বলার থাকলে বলেন। না হলে চুপ থাকেন
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২৪ জুন, ২০১৮, ৩:৩৯ এএম says : 0
    মিয়ানমারের একটা উচিত শিক্ষা হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • উজ্জল ২৪ জুন, ২০১৮, ৫:২১ পিএম says : 0
    ভাষণ না দিয়ে পারলে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ