Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জার্মান ফুটবলের কালো দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

শক্তিশালী দল নিয়েই রাশিয়া মিশন শুরু করেছিল জার্মানি। প্রেরণা হিসেবে অতীত ইতিহাস তো ছিলই। আর এমন দলে কোচ হিসেব জোয়াকিম লোয়ের উপস্তিতি বাকি দলগুলোর থেকে আলাদা করে রেখেছিল জার্মানিকে। এরপরও অপ্রত্যাশিতভাবে আসরের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু কেন এমন হলো?
এর প্রধাণ কারণ হতে পারে জার্মান দলে বেশ কিছু নামের অনুপস্তিতি। বাস্তিয়ান শোয়াস্টেইগার, ফিলিপ লাম, টমাস মুলারদের অভাব পূরণ করতে পারেনি তারা। বর্তমান দলের সিনিয়র সদস্য সামি খেদিরা, মেসুত ওজিল, ম্যাট হ্যামেলস, টনি ক্রুস ও টমাস মুলারদের মত তারকারা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। কোচ নিজেও তাদের কাঠকড়ায় তুলেছেন। মাঝমাঠে তারা যেমন ছিলেন নিষ্প্রভ, তাদের আক্রমণেরও ছিল না তেমন ধার। পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণে দুমড়ে মুষড়ে দেয়ার সেই মানষিকতা দেখা যায়নি এই দলে।
এর পূর্বাভাস মিলেছিল আগেই। প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও সউদী আরবের বিপক্ষে জিতলেও ঠিক সেই জার্মানিকে পাওয়া যায়নি। এরপরও কোচ লো ভক্তদের আস্বস্থ করেছিলেন, তার দল লড়াইয়ে নামার জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত। অথচ আসরের শুরুতেই মেক্সিকোর কাছে হেরে হোঁচট খায় তার দল। এটাকে কোনভাবেই দুর্ঘটনা বলার অবকাশ নেই। খারাপ ফুটবল খেলেই পরাজিত হয় জার্মানরা। সুইডেনের বিপক্ষেও প্রথমার্ধে ছিল অচেনা জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা খেলার ধার বাড়িয়ে জয় পেলেও শেষ ম্যাচে আবার যেন অচেনা জার্মানি। ফলাফল? বিশ্বকাপ থেকে বিদায়!
অথচ চার বছর আগে এই দলটিই ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০১৭ সালে উয়েফা জিতেছে অনূর্ধ্ব ২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। অনভিজ্ঞ তরুণ দল নিয়েও গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন্স কাপও জিতেছে লোর দল। ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এই এক যুগে প্রত্যেকটি বড় টুর্নামেন্টে অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে দলটি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের প্রায় সব অর্জন তাদের নামের পাশে যোগ হয়। সব প্রপ্তির আত্মতুষ্টি-ই কি তবে তাদের জয়ের ক্ষুধাটা হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ?
আরো গভীরে নজর দিলে দেখা যাবে জার্মানির এই স্কোয়াডের ২৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর হয়ে শিরোপার স্বাদ নিয়ে এসেছেন। এত এত সাফল্যের পর তাই জয়ের ক্ষুধা হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মেক্সিকোর বিপক্ষে হারের পর এমন ইঙ্গিত মিলেছিল জোয়াকিম লোয়ের কথাতেও, ‘আমার মনে হয়েছিল যে মেক্সিকো ম্যাচের আগে দলের মধ্যে একটা দাম্ভিকতা কাজ করেছে। মাঠে নামব, আর পলকের মধ্যে ম্যাচ জিতে ফেরত আসব, এমন মানসিকতা দলের জন্য খুব ক্ষতিকর।’ গত বিশ্বকাপে শিরোপার স্বাদ পাওয়া জুলিয়ান ড্র্যাক্সলারও যেন দলের মধ্যে সেই তাগিদটা দেখতে পাননি, ‘আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, ২০১৪ এর দলের মধ্যে যে আগুন ছিল, এই দলে সেটা নেই।’
এ তো গেল দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে লড়াকু মানষিকতার অভাবের কথা। বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়েও শুরু থেকে আলোচনা হয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে সবার আগে আসছে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো লেরয় সানের নাম। এছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের সান্দ্রো ওয়াগনারের বদলে সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা মারিও গোমেজের অন্তর্ভুক্তি, আগের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ও ফাইনালে গোল করা দুই খেলোয়াড় আন্দ্রে শুরলে ও মারিও গোটশেকে দলে না রাখা, গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করা লেফট ব্যাক ফিলিপ ম্যাক্সকে দলে বিবেচনা না করা- এমন বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে লোয়ের। সবচেয়ে যে বিষয়টা চোখে পড়েছে তা হলো দক্ষ একজন স্ট্রাইকারের অভাব। সানে হতে পারতেন এক্ষেত্রে লোয়ের বড় হাতিয়ার।
বিপদে পড়লে অনেক অজানা বিষয়ও সামনে চলে আসে। জার্মান দলে ঐক্যের অভাব ছিল বলেও বেশ জোরেশোরেই গুঞ্জন শোনা গেছে এবার। স্কোয়াডের ২৩ জনের মধ্যে ৯ জন ছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, বাকি ১৩ জন ছিলেন গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন্স কাপ জয়ী দলের। কেবল জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার ও ম্যাথিয়াস গিন্টার ছিলেন এই দুই দলেই। গুজব রটেছে, এই দুই শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ বড় আকারের বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিহাসের পিছনে দৌড়াতে গিয়েও হোঁচট খেতে পারে জার্মানি। ইতালি ও ব্রাজিল ছাড়া আর কোন দলই টানা দুইবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এসব অতীত ইতিহাসই কি তাড়া করে ফিরলো জার্মানিকে? এছাড়া গত পাঁচ বিশ্বকাপের মধ্যে এই নিয়ে চারবার আগের আসরের চ্যাম্পিয়নেরা বিদায় নিলো প্রথম পর্ব থেকেই। ১৯৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ২০০২ এর প্রথম রাউন্ড থেকে, ২০০৬ এর চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ এর প্রথম রাউন্ড থেকে, ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২০১৪ এর প্রথম আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল। কেবল ২০০২ এর চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলই হেঁটেছিল ভিন্ন পথে।
এবারের বিশ্বকাপে তুলনামূলক ছোট দলগুলো ভালো ফুটবল খেলছে। বিশেষ করে বড় দলগুলোর বিপক্ষে রক্ষনাত্মক কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে তারা, তাতে সফলও হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে বড় দলগুলোকে নিয়ে ভালোমত গবেষনা করে এসেছে তারা। এর বলি হতে হয়েছে আর্জেন্টনার মত দলকেও। জার্মানিকেও হতে হয়েছে একই ঘটনার শিকার।
যে যাই হোক, জার্মান ফুটবল এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি কখনো; যাকে ‘জার্মান ফুটবলের কালো দিন’ বলেছেন দরটির সিনিয়র খেলোয়াড় ম্যাট হুমেলস।



 

Show all comments
  • Mujahid Shipul ২৯ জুন, ২০১৮, ৪:০৬ এএম says : 0
    ভাগ্যের নির্মম পরিহাস
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shisir Ahamed ২৯ জুন, ২০১৮, ৪:০৯ এএম says : 0
    পৌষ মাস সারা বছর থাকবে না। এর যোগ্য জবাব কাতারেই দেবে। wait and see.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Jalil ২৯ জুন, ২০১৮, ৪:১০ এএম says : 0
    জার্মানির এমন বিদায়ে বিশ্বকাপের আকর্ষণ অনেকটা কমে গেছে এরপর যদি আবার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বিদায় নেয় তাহলে বিশ্বকাপের কোন আকর্ষণই থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mehdi Bakhtiar Porosh ২৯ জুন, ২০১৮, ৪:১২ এএম says : 0
    Still Germany is one of the best. S. Korea er sathe oghoton ghotse. Ekta din kharap jaitei pare.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মান


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ