Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে কঠোর বার্তা

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

খুলনা ও গাজীপুরের পর এবার রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ভোটের দিন বিশৃংখলা রোধে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ থাকা, দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করা এবং ভোটের দিন বিশৃংখলার কারণে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যেন প্রশ্ন না উঠে সেদিকে নজড় দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের রেশারেশি রোধে তিন সিটির তৃণমূলে কঠোরতার বার্তা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
দলটি মনে করছে, অব্যাহত উন্নয়নের কারণে নৌকার প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে। এমনিতেই তিন সিটিতেই বড় ধরণের জয়ে পাবে ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু অভ্যন্তরীন কোন্দল ও দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর রেশারেশির কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে দলকে। ভোটের দিন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মারামারি ও বিশৃংখলার কারণে ভোটের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্নও উঠেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বøুম বার্ণিকাট গাজীপুরের নির্বাচনে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়ম এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা ও পোলিং এজেন্টদের হয়রানির খবরে তার দেশ উদ্বিগ্ন।
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না হলেও আগামী তিন সিটির নির্বাচনে শৃংখলার ব্যাপারে আরো কঠোরতা অবলম্বন করবে আওয়ামী লীগ। যদি নেতারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব অব্যাহত রাখে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তৃণমূলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সাংগঠনিক সফরে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, গত পাঁচ বছর বিএনপির মেয়ররা এই সিটিগুলোতে তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। তাই জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সারাদেশের অব্যহত উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হতে নৌকার প্রার্থীকেই ভোট দেবে। খুলনা ও গাজীপুরের প্রভাব এই তিন সিটির জনমনেও পড়বে। এছাড়া অব্যহত পরাজয়ের কারণে বিএনপির প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির সমর্থকরাও হতাশ। সেজন্য জয়ের ব্যাপারে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। এই কারণে বিশৃংখলার কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠুক তা চায় না ক্ষতাসীনরা।
আর তাই তিন সিটির দায়ত্বিপ্রাপ্ত নেতারা নিজ নিজ সিটিতে সফর করে বার্তা পৌছে দিয়েছেন। বরিশাল সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। রাজশাহীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সিলেটে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
তারা সকলেই তিন সিটিতে দলের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পৌছে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেছেন। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ইমেজ রক্ষার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। খুলনা ও গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় প্রার্থীর জয়ের মাধ্যমে সফল হয়েছেন। বর্তমানে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও বিফল হতে চান না। সেজন্য তারা জয় পেতে কঠোরভাবেই মাঠে নেমেছেন।
গত সোমবার রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, এই নির্বাচন নেতাকর্মীদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কেন্দ্রগুলোতে ভোট কমবেশি হলে আপনাদের জবাব দিতে হবে। বেশি হলে পুরস্কার আর কম হলে তিরস্কার রয়েছে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে হবে।
৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে এই তিন সিটিতে মনোনয়নপত্র বিতরণ-জমা ও প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৯ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর ১০ জুলাই এ তিন সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন। সেদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার কাজ।
সবকটি সিটিতেই জয়ের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে। দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য কার্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, জনগণ এখন অনেক বেশি সচেতন। জনগণ বোঝে কোন প্রার্থীকে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে। তাই আমরা আশাবাদি তিনি সিটিতেই নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক বিএনপি জামায়াতের টানাপোড়নে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা হবে মনে করছেন নেতারা।
জানতে চাইলে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, খায়রুজ্জমান লিটন রাজনীতির নক্ষত্র। বিগত সময়ে মেয়র থাকাকালীন যেসব উন্নয়ন করেছিলেন বর্তমান মেয়রের সময় সেসব উন্নয়নের অভাব রাজশাহীর মানুষ উপলব্ধি করছেন। তাই এবার বিপুল ভোটে নৌকার প্রার্থী জয় পাবে বলে মনে করেন এই নেতা।
সিলেটে দলীয় কোন্দল নিরসনে এরই মধ্যে কঠোর বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর অনেক আগ থেকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সবুজ সংকেত দেয়ায় অন্য কেউ সেখানে তেমন কোন কর্মকাÐ চালাননি। এছাড়া জামায়াতের সিলেট মহানগর আমীর এ্যড. এহসান মাহবুব জোবায়ের মেয়র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, মানুষ উন্নয়নে বিশ্বাসী। খুলনা ও গাজীপুরে মানুষ দেশের অগ্রগতির পক্ষে রায় দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনেও ভোটাররা উন্নয়ন-অগ্রগতির পক্ষে ভোট দেবে।
এদিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোন দ্ব›দ্ব নেই। তবে নিরব দ্ব›দ্ব নিসরনের চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রার্থীতার ঘোষণা দিলেও পরে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ । সুন্দর নেতৃত্বের মাধ্যমে সবকিছু ইতোমধ্যে গোছগাছ করে নিয়েছেন সাদিক।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উল্লেখ করে সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাদিক। যুব সমাজ গাজীপুরের মতো তাকেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। প্রতিপক্ষের বয়স্ক ও বরিশালের উন্নয়ন হন্তারক কোনো প্রার্থীকে আর সিটি মেয়র হিসেবে দেখতে চায় না।
এদিকে গত শনিবার গণভবনে দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বিশেষ বর্ধিত সভায় কোন্দল ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে, তখনই বিজয় অর্জন করে। গাজীপুরে জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি যেটা কাজ করেছে, সেটা হল একতা। সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই বিজয় আনতে পেরেছে। খুলনায় রাগ-ক্ষোভ ভুলে সবাই এক হয়েছিল বলেই বিজয় এসেছিল।
দলীয় কোন্দল নিরসন ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুশিয়ারি দিয়ে সেদিন বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা দলে দ্ব›দ্ব করবে, নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবে তাদের কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ