Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি

প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তকিত মন্তব্যের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রোববার রাজধানীতে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মাদকবিরোধী বির্তক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ওই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা একটা গাইডলাইন দিয়েছি এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলা হলে খালেদাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আবারও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ইতিমধ্যে একটি দৈনিকে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে মামলা হবে কি না জানতে পারবেন। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি বলেন, আজকে বলা হয়, এত লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।
ওই বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে এর দুইদিন পর তা প্রত্যাহার করতে খালেদা জিয়াকে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী। নোটিশে খালেদাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে সাত দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়। এর জবাব না পেয়ে গত সপ্তাহে মামলা দায়েরের অনুমোদন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ জানুয়ারি মামলার অনুমোদন মেলেছে।
বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক এখন জাতীয় সমস্যা। প্রতিবেশী দেশ থেকে অবৈধভাবে মাদক প্রবেশের কারণে দেশের তরুণরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাদকের ব্যবহার বন্ধ এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার থেকে যাতে করে কোন ধরনের মাদক অবৈধভাবে ঢুকতে না পারে সেটাকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদককে রুখে দিয়েই আলোকিত তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেক শাখা কাজ করে যাচ্ছে। এই মাদকের কারণে ঐশীর মতো তরুণী তৈরি হয়েছে। আর যেন কোনো ঐশী তৈরি না হয় সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে। মাদক প্রতিরোধে দেশবাসীকে ভুমিকা রাখারও আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, চলতি মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন অভিযান পরিচালিত হবে। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মাদকের বিস্তারের পাশাপাশি চাহিদা কী কারণে বাড়ছে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। তবে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রতিহিংসামূলক ঘটনা, হানাহানি, কর্মসংস্থানের অভাব, শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশ মাদকের বিস্তারে প্রভাব রাখছে।
সপ্তাহব্যাপী এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় রাজধানীর স্বনামধন্য কয়েকটি কলেজ। রাজনৈতিক অঙ্গীকারই পারে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে শীর্ষক চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ঢাকা ক্যান্টঃ পাবলিক গার্লস কলেজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এতে রানার আপ ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ এবং সাউথ পয়েন্ট কলেজ। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল- রাজনৈতিক অঙ্গীকারই পারে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে যথাক্রমে নগদ ৫০ হাজার, ২৫ হাজার ও ১৫ হাজার টাকাসহ ট্রফি ও ক্রেস্ট পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিতার্কিকরা হলো-কানিজ মেহজাবিন মেহের তোরসা, মার্জিয়া কবীর ও রওশন জাহান তামান্না। রানার আপ দল শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের বিতার্কিকরা হলো- মাহমুদ হাসান রাজ, নাফিসা আঞ্জুম এবং ফারিহা ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আমির হোসেন, পরিচালক নাজমুল আহসান মজুমদার, সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ, আবু তালেব প্রমুখ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন যোগাযোগ পরামর্শক সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এবং মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম চঞ্চল।
সপ্তাহব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মাদকাসক্তির কারণ, মাদক প্রতিরোধে পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা, মাদকের কুফল, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন, গণমাধ্যমের ভূমিকা, সুশীল সমাজের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদকবিরোধী বিতর্ক উৎসবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ