Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাসপাতাল যেন অনিয়মের কারখানা

কুমিল্লায় চিকিৎসাসেবার চিত্র ভয়াবহ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কুমিল্লার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে নামে -বেনামে অসংখ্য হাসপাতাল। এসকল হাসপাতালে মানা হচ্ছে না সরকারি কোনো নিয়ম কানুন। হাসপাতাল যেন হয়ে উঠেছে অনিয়মের কারখানা। তবে ম্যাক্স হসপিটালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করার খবরে কুমিল্লার বিভিন্ন প্রাইভেট হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এখন নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। হসপিটালের কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াঝাপ শুরু করেছেন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের ঝাউতলার রোড, পুলিশ লাইন, শাসনগাছা, রামমালা, টমসনব্রিজ, নজরুল এভিনিউ, বাদুরতলা ও নগরীর বিভিন্ন অলি গলিতে গড়ে উঠেছে দুইশতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, বøাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেকগুলোরই সরকারি অনুমোদন নেই। আবার কোন কোনটি লাইসেন্সের জন্য আদেন করেই শুরু করে দিয়েছেন হাসপাতাল বা ক্লিনিক। আবাসিক ভবনে হাসপাতাল ও ক্লিনিক না করার সরকারি আদেশও অমান্য করছে এসব প্রতিষ্ঠান।
কুমিল্লা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বার্ষিক প্রকাশনা সূত্রে জানা যায়, নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, বøাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ২শ ৭৫টি। কুমিল্লা নগরীতে এর সংখ্যা ১শ ৩টি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীতে এর সংখ্যা প্রায় দুইশতাধিক। আর উপজেলাসহ জেলায় এ সংখ্যা প্রায় এক হাজারেরও বেশি। তবে অবৈধ বা লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো হিসাবে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে নেই।
সিভিল সার্জন অফিস জানায়, কুমিল্লা নগরীতে ১০৩টি ছাড়াও চান্দিনায় ১২টি, চৌদ্দগ্রামে ১০টি, বরুড়াতে ৮টি, নাঙ্গলকোটে ৪টি, সদর দক্ষিণে ৬টি, লাকসামে ১৭টি, মনোহরগঞ্জে ১টি হোমনায় ১০টি, মেঘনায় ১টি, বুড়িচংয়ে ৭টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৬টি, তিতাসে ১১টি, দেবীদ্বারে ১৩টি, মুরাদনগরে ২৩টি, দাউদকান্দিতে ৩৯ টি ক্লিনিক লাইসেন্স প্রাপ্ত।এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়েও সেবা গ্রহীতাদের প্রশ্ন রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অধিক ফি দিয়েও এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এছাড়া এদের ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে অনেক অনিয়ম। নেই নিজস্ব চিকিৎসক। আবার চিকিৎসক না হয়েও ভুয়া সনদ তৈরি করে এসব হাসপাতালে-ক্লিনিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন অনেকে। বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। সুস্থ হওয়ার আশা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে এলেও রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে না, বরং বাড়ে। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা ।
নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, সিজারিয়ানসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপচার ও জটিল রোগের চিকিৎসা করা হলেও ওই হাসপাতালে কোনো আবাসিক চিকিৎসক নেই। জরুরি সেবা দেয়ারও কেউ নেই। যেহেতু অস্ত্রোপচার হয়, তাই এখানে আইসিইউ ও সিসিইউ থাকার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে এর কোন ব্যবস্থা নেই।
সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বিভিন্ন সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানও চালান। তখন উঠে আসে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের ভয়াবহ চিত্র। নগরীসহ গোটা জেলাতে যে পরিমাণ সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। এ সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান সিটি করর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চালু করা হয়েছে।এমন অবৈধ চিকিৎসাকেন্দ্র শুধু নগরীতে নয়, সমস্থ জেলায় ছড়িয়ে আছে। ‘ভাড়াটে’ চিকিৎসক কিংবা ভুয়া ডিগ্রির সাইনবোর্ড ব্যবহারকারী চিকিৎসকের গ্রেফতার হওয়ারও নজির আছে অনেক।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মজিবুর রহমান জানান, কুমিল্লা জেলায় কোন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অনিবন্ধিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। আমাদের প্রত্যাশা কুমিল্লা জেলা স্বাস্থ্যবান্ধব একটি জেলা হবে। জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার গুলোর ভুয়া ডাক্তার, অপরিস্কার ক্লিনিক-প্যাথলজি বিভাগে অনিয়ম ও প্রতারণার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ