Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নায়ক থেকে মহানায়কের পথে

বেকেনবাওয়ার, জাগালোদের পথে দেশম

রেজাউর রহমান সোহাগ, রাশিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৮, ৯:৩৮ পিএম

খুব বেশি পিছনে তাকাতে হবে না। বিশ্বকাপের কদিন আগেও ফ্রান্সের কিছু গণমাধ্যম দিদিয়ের দেশমকে ভাসিয়েছেন সমালোচনার জোয়ারে। তাদের অভিযোগÑফ্রান্স দলে সহ¯্র যোগ্য খেলোয়াড় থাকলেও কারোরই নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। এর সমুচিত জবাব যে সেই সব বোদ্ধারা পেয়ে গেছেন তা বোঝাই যায়। এখন দেশমের সামনে সুযোগ খেলোয়াড় ও কোচ উভয় ভুমিকায় ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের।
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্বেও ফ্রান্সের শুরুটা ঠিক ফাইনালিস্টসুলভ ছিল না। আসরে তাদের শুরুটাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাগ্যপ্রসূত জয় দিয়ে। গ্রিজম্যানের পেনাল্টি গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য প্রতিপক্ষের আত্মঘাতি গোলের সুযোগ নিতে হয়। পরের ম্যাচে পেরুকে হারাতেও বেগ পেতে হয়েছে। আর ডেনমার্কের বিপক্ষে তো তারা জালই আবিষ্কার করতে পারেনি। তবু গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্বে উঠায় সমালোচকদের আকুপাকু মন স্থিরই ছিল।
নক আউট পর্বে এসেই একের পর এক ভেল্কি দেখাতে থাকেন দেশম। ফুটবল যে মাঠের বাইরে থেকেও খেলা যায় দেখিয়ে চলেছেন ৪৯ বছর বয়সী। দাবার চালের মত সু² চালে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে চলেছেন। এই কারণেই নির্দিষ্ট কোন ছক মেনে তিনি খেলছেন না। ম্যাচে তিনি পরিকল্পনা ঠিক করছেন প্রতিপক্ষের দুর্বলতা ও নিজেদের শক্তির জায়গা বুঝে। আরেকটু খেয়াল দিলে দেখা যাবে দলের প্রধান তারকা কিলিয়ান এমবাপের গতিকে তিনি কাজে লাগাচ্ছেন সফলভাবে। প্রতিপক্ষের রক্ষণকে মাঝমাঠে তুলে এনে কয়েকটি লম্বা পাস থেকে মুহূর্তের পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঝড় তুলছেন গ্রিজম্যান-এমবাপেরা। এ কারণেই ৪-২-৩-১ ফর্ম্যাশনটাই তার কাছে বেশি পছন্দ। বলের দখল রেখে আর গোছালো আক্রমণে গোল পাওয়া যে খুব কঠিন কাজ সেটা তিনি ভালোমতই জানেন। জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনার অকাল বিদায় থেকে কিন্তু এই শিক্ষাই পাওয়া যায়। তাই দেশমের ছক অনুযায়ী বলের দখল থাকা-না থাকা মূখ্য নয়, মূখ্য হলো গোল পাওয়া; সে যেভাবেই হোক। তার আগে নিজেদের রক্ষণকে অটুট রাখাটাও নিশ্চিত করতে হবে। ফুটবল ভক্তদের মন ভরাতে না পারলেও দুটি কাজই ঠিকঠাকভাবে করে চলেছেন দেশম। আর তাতেই বাজিমাৎ।
শেষ ষোলয় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তিন গোল খেলেও গতির ঝড়ে ঠিকই লিওনেল মেসির দলকে লÐভÐ করে দেয় লেস বøুরা। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ইস্পতসম রক্ষণের পরিচয় দেয় উমতিতি-ভারানে-মাইতুদিদের নিয়ে গড়া ফ্রান্সের রক্ষণ। বেলজিয়ামের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচের দিকে তাকালেও অনেককিছু স্পষ্ট ধরা পড়ে। রবার্তো মার্টিনেজের দল যেখানে ৬৪ শতাংশ বলের দখল রেখে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে মাত্র নয় বার, এর মধ্যে তিনটি মাত্র শট তারা পোস্টে রাখতে পারে। সেখানে মাত্র ৩৬ শতাংশ বলের দখল নিয়েও এমবাপে-গ্রিজম্যানদের গতিকে কাজে লাগিয়ে ১৯বার গোলের সুযোগ তৈরি করে দেশমের ফ্রান্স; ৫টি শট ছিল লক্ষ্যে। অলিভার জিরুদ সহজ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া না করলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতেও পারত।
সবকিছুই ঠিক আছে, শুধু এই জিরুদের ব্যাপারটা নিয়েই এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঘুরছে অনেকের মনে। এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষের পোস্টে কোন শটই নিতে পারেননি আর্সেনাল স্ট্রাইকার। অথচ বলকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়াই তার কাজ। দলের নয় নম্বর জার্সিটা তো তার গায়েই। এরপরও প্রতিটা ম্যাচে দেশম কেন জিরুদকেই একাদশে রাখছেন তা বড় একটা প্রশ্ন বটে। বিকল্প যে নেই তাও না। বরং জিরুদের চেয়েও গতিশীল খেলোয়াড় উসমান দেম্বেলে। বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডকে কাজেই লাগাচ্ছেন না দেশম। কে জানে ১৫ জুলাই লুঝনিকির ফাইনালেও হয়ত দেম্বেলেকে বসিয়ে জিরুদকেই বেছে নেবেন তিনি। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া অথবা ইংল্যান্ড।
সে যাই হোক, ফ্রান্স যদি বিশ্বকাপ জিতে যায় তাহলে দেশমই হবেন তার নায়ক। সেক্ষেত্রে ইতিহাসের ছোট্ট একটা পাতায় উঠে যাবে তার নাম। যে পাতায় প্রথম না লিখিয়েছিলেন ব্রাজিলের মারিও জাগালো, এরপর জার্মানির ফ্রেঞ্জ বেকেনবাউয়ার। সেলেসাও দলের খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ হিসেবে ১৯৭০ সালে পেলের দলকে শিরোপার রাস্তা দেখিয়েছিলেন জাগালো। এর চার বছর পর পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতেন বেকেনবাউয়ার। এরপর কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে পশ্চিম জার্মানিকে বিশ্বকাপ এনে দেন তৎকালীন তারকা ডিফেন্ডার। দেশমের সামনে সুযোগ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে বিরল এই তালিকায় নিজের নাম লিপিবদ্ধ করার।
১৯৯৮ সালে তার আধিনায়কত্বেই ঘরের মাঠে একমাত্র বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। ২০ বছর পর তার সামনে সুযোগ এসেছে নায়ক থেকে মহানায়ক বনে যাওয়ার। আরো একবার বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ট্রফিতে মমতার হাত বুলিয়ে গর্বের চুমু দেয়ার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ