Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ সাত মাসে ৩৯ লাখ কল সেবা গ্রহণ ২৫ হাজার

আবদুল্লাহ আল মামুন : | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের কাছে নৌকায় করে বেড়াতে যাওয়ার সময় গত সোমবার পদ্মানদীতে ডুবে যায় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এতে পাঁচ মাসের শিশুসহ নদীতে পরে গিয়ে ভাসতে থাকেন সাত সদস্যের পরিবারটি। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ৯৯৯ নম্বরে কল করলে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল গিয়ে তাদের জীবিত উদ্ধার করেন। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর জুরাইনের উত্তর মুরাদপুর এলাকায় মুখবন্দী একটি বস্তার ভেতর থেকে রক্ত বের হতে থেকে ৯৯৯ নম্বরে কল করেন আবদুর রহিম। এর অল্প পরেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তার মুখ খুলে লাশটি উদ্ধার করেন। এমন একটি বা দুটি ঘটনা নয়, দ্রæততর সময়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু করা হয় জরুরী সেবা নম্বর ‘৯৯৯’। সেবাটি চালুর পর গত জুন মাস পর্যন্ত সাত মাসে মোট কল এসেছে ৩৯ লাখ। এসব কলে সেবা গ্রহন করেছেন ২৫ হাজার নাগরিক। প্রায় ৩০০ সদস্যদের একটি দক্ষ জনবল নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টায় তিন শিফটে কাজ করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দিচ্ছেন এখানকার কর্মীরা। পুলিশ সদর দফতর ও সংশ্লিষ্ট হেল্প ডেস্ক সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

ন্যাশনাল হেল্প ডেস্কের তত্ত্বাবধানে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে এই হেল্প-ডেস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর পর থেকে ২০১৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত ফোন কল এসেছে ৩৯ লাখ। যার মধ্যে ২৫ হাজারের মতো কলের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশি সেবা পেয়েছেন ১৯ হাজার জন। ফায়ার সার্ভিসের জন্য ৫ হাজার ৬০০ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ৫০০ জন সেবা পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গত সাত মাসে ৩৯ লাখ ফোনকল এলেও এর বিরাট অংশ ক্র্যাংক কল বা বিরক্তিকর কল ছিল। এসব কলাররা কল করে সেবার পরিবর্তে ফাজলামো করেন। এর সংখ্যা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭৭। এ ছাড়া ইনকোয়ারি কল ৬ লাখ ২১ হাজার, উইমেন কল ৪ হাজার ১২১টি, বøাংক কল (কলার কথা বলেনি) ১৯ লাখ ৭৭২, চাইল্ড কল ১৭ হাজার ৪৩, ডিপার্টমেন্টাল কল ৫ হাজার এবং ৫ লাখ ৫ হাজার ৪২২টি আদারস কল ছিল। ক্র্যাংক কলের কারণে অনেক সময় নষ্ট হয় এবং এতে অনেক গরুত্বপূর্ণ কল রিসিভ করা যায় না। এ জন্য বিনা প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করতে নিষেধ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
হেল্প ডেস্ক সূত্র জানায়, কোন টাকা খরচ ছাড়াই মোবাইল ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে কল করা যায়। বড় কোন দুর্ঘটনা সংঘটন হতে দেখলে, বড় অপরাধ, প্রাণনাশের আশঙ্কা, হতাহতের ঘটনা, অগ্নিকান্ড বা জরুরীভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে জরুরী সাহায্য চাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের ৯৯৯ নম্বরের সেবার ধরণ এবং কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত-৯১১, যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত-৯৯৯ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত-১১২’র আদলে তৈরি করা হয়েছে। সেবাটি চালুর পর থেকে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ রোধ, জুয়া, সাইবার অপরাধ ও অগ্নিকান্ডসহ জরুরী প্রয়োজেন অনেকে এখান থেকে সেবা গ্রহন করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, হেল্প ডেস্কে দিনরাত ২৪ ঘন্টায় তিনটি শিফটে নারী পুরুষ মিলে প্রায় ৩০০ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে কল টেকার (কল রিসিভকারী) ২৪০ জন। প্রাথমিকভাবে ৩৩টি কম্পিউটার সংযোগের মাধ্যমে কল নেওয়ার কাজ শুরু হলেও বর্তমানে এর সংযোগ সংখ্যা প্রায় ১০০।
হেল্প ডেস্কে একসঙ্গে ১০০টি কল রিসিভ করা সম্ভব। কেউ সাহায্য চেয়ে কল করলে প্রথমে একজন কল টেকার কলটি রিসিভ করেন। তিনি সেবাটি আরও ভালোভাবে সুনিশ্চিতের জন্য কল ডিসপ্যাচার বা দ্রুত সেবাপ্রদানকারী হিসেবে কাজকারী পুলিশের এএসআই ও এসআইদের কাছে পাঠান। এসব কল টেকার ও কল ডিসপ্যাচকারীদের পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশের পরিদর্শক পদধারী ৪০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর আবদুল গণি সড়কে ডিএমপির কন্ট্রোলরুমে অবস্থিত হেল্প ডেস্ক সেন্টারটি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কন্ট্রোলরুম ভবনের পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ তলার ডেস্কে বসে কাজ করছেন অনেক নারী ও পুরুষ পুলিশ সদস্য। তারা কম্পিউটারের সামনে বসে অপর প্রান্তের কলকারীদের নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন। হেল্প ডেস্কের নারী কর্মী ইসমত জানান, কেউ কল করলে প্রথমত সার্চ দিয়ে কলকারীর অবস্থান ও সহায়তার ধরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হই। পরে সেবার ধরণ অনুযায়ী পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও সংশ্লিষ্ট ফায়ার স্টেশনের খবর তাকে জানাই।
জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগের পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ বলেন, নম্বরটি সাধারণ মানুষের মধ্যে মোটামুটি পরিচিত থাকার পরেও অনেকে নির্দিষ্ট সেবার বাইরে ভিন্ন বিষয়ে কল করেন। কেউ কল করে মোবাইল সিম সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানতে চান। অনেকে ডাক্তারি পরামর্শের জন্যও কল দেন।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর আবদুল গণি সড়কে পুলিশের কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টারে ৯৯৯ সেবাটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রথম ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস-৯৯৯’র কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে হেল্পলাইন নম্বরটি চালানো হয়। ‘ডিজিকন’ ‘এমসিসি’ ও ‘মাই আউটসোর্সিং’ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান কল সেন্টারকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ডেস্কটি উদ্বোধনের পর গাজীপুরের শিবগঞ্জ থেকে অগ্নিকান্ডের খবর জানিয়ে প্রথম কলটি এসেছিল। এছাড়া চলতি বছর ৫ মে মধ্য রাতে ৫৫ বছর বয়েসী এক নারী টয়লেটের কমোডে আটকা পড়ে হেল্প ডেস্কে কল করে দ্রুততর সময়ে সেবা পেয়েছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ