Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লুজনিকি যেন গোটা বিশ্ব

রেজাউর রহমান সোহাগ, রাশিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:৪১ এএম | আপডেট : ১:২১ এএম, ১৬ জুলাই, ২০১৮

১৫ জুলাই। মস্কোয় ভিন্ন এক সকাল। এমন সকাল আগে কখনো দেখেনি মস্কোবাসী। কাক ডাকা ভোরেও উৎসবের চাপা আমেজ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেই আমেজটা হয়ে উঠলো আরো রঙিন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বর্ণের মানুষের সমাগমে মুখর মস্কো। বাহারি পোষাকে, শরীর-মুখে রঙ তুলির আচড়ে, বাদ্য-বাজনার তালে ফুটবল প্রেমীদের সঙ্গে যেন নাঁচছে পুরো মস্কো শহর। সময় গড়ানোর সঙ্গে বিশাল জন স্রোত এসে থামে মস্কোভা নদীর পাড়ে- লুজনিকি স্টেডিয়ামে।
একে তো ‘গ্রেটস্ট শো অন আর্থ’, তারপর আবার সেই শো’র ফাইনাল ম্যাচ। বাধনহারা উন্মদনা তো থাকবেই। তবে বিভিন্ন দেশের ভক্ত-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে বোঝার উপায় ফাইনালে আসলে খেলবে কোন দুই দল। বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া দলের সমর্থকরা তো আছেই, আগ্রহের কমতি নেই আসর থেকে বিদায় নেয়া দলের সমর্থকদেরও। আগেভাগেই বিদায় নেয়া আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সমর্থকদের ফাইনাল নিয়ে উন্মদনাটা একটু বেশি। পরনের জার্সি ও হাতের পতাকে সেই কথায় বলে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকসমগম হতে শুরু করে মস্কোভা নদীর পাড়ে লুজনিকি স্টেডিয়ামে। সবাই যে ফাইনালের কাঙ্খিত টিকিট পেয়েছেন ব্যাপারটা এমন নয়। অর্ধেক ফুটবল ভক্তই টিকিট পাননি, তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখে। এর আগে স্টেডিয়াম চত্বরকে তারা মাতিয়ে রাখে নাচ-গান, বাদ্য-বাজনার তালে। চলেছে পারস্পারিক সৌহার্দ বিনিময়। বন্ধুত্ব-সম্প্রীতির সে এক অভুতপূর্ব দৃশ্য। ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া সমর্থকদের মাঝেও কোন ভেদাভেদ দেখা গেল না। একই সঙ্গে ঘুরছে, ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তুলছে। স্টেডিয়ামকে ঘিরে রাখা নয়নাভিরাম পার্কে তিল ধারনের ঠাই নেই। পাশের মস্কোভা নদীও যেন সেই তালে পেখম মেলে নাচছে। তার বুকে আজ বাহারি সব নৌকার সমাহার। ফাইনালের এই উৎসব চলে সারা রাত। বিশেষ করে ফিফা ফ্যান ফেস্টে।
ম্যাচ শেষে ব্রাজিল সমর্থকরা সমাবেত হয় স্টেডিয়াম থেকে দশ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মস্কোর রেড স্কয়ারে। সেখানে তারা সাম্বা নাচে শহর মাতিয়ে রাখে। ব্রাজিল তো আগেই বিদায় নিয়েছে তাহলে এখনো কেন এমন উন্মদনা? এমন প্রশ্নে দুই সেলেসাও নারী ভক্ত কেকান (২৫) ও লুভিয়ানার (২২) অভিন্ন জবাব, ‘ফাইনালে উঠা হয়নি তাতে কি, ফুটবল মানেই তো ব্রাজিল।’
বিশ্বকাপ ফুটবলের এটি একুশতম আসর। প্রতিটা আসরই এমন মিলনমেলা দেখে আসছে বটে। কিন্তু অতীতের সব আয়োজনকে যেন ছাড়িয়ে গেল রাশিয়া। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে প্রায় ২৫ লক্ষ্য জনসমাগম হয়েছে রাশিয়ায়। বাংলাদেশ থেকেও এসেছে হাজার পাঁচেকের মত দর্শক। সবচেয়ে বেশি দর্শক এসেছে পেরু ও মেক্সিকো থেকে। প্রেস এলাকায় মাথায় হ্যাট পরা মেক্সিকোর সাংবাদিকদের সহজে আলাদা করা যায়।
ফাইনালকে কেন্দ্র করে লুজনিকিতে হাজির ফুটবলপ্রেমী দশ দেশের প্রেসিডেন্ট। ভিআইপি গ্যালারিতে ফিফা প্রেসিডেন্টের পাশে স্বাগতিক রাশিয়া ও দুই ফাইনালিস্ট দল ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট তো ছিলেনই, ছিলেন পরবর্তি ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারের প্রেসিডেন্ট শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খালিফা আল-থানি। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বল তুলে দেন ২০২২ বিশ্বকাপোর আয়োজক কাতার প্রেসিডেন্টের হাতে। এছাড়া গ্যাবন, মালদোভা, ফিলিস্তিন, বেলারুশ, সুদান ও আরমেনিয়ার প্রেসিডেন্টও মাঠে বসে খেলা উপভোগ করেন। দল ফাইনালে ওঠায় দেশের পাসপোর্ট অফিসে রাত যেগে হলেও রাশিয়া গমনিচ্ছুক ভক্তদের পাসপোর্ট প্রদানের বিশেষ ঘোষণা দিয়ে রাখেন ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ। সেমিফাইনালেও মাঠে উপস্থিত ছিলেন কলিন্দা।
স্টেডিয়ামের ভিআইপি লাউন্সেও নেমে এসেছিল একঝাক তারা। ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা তো প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই গ্যালারি মাতিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন এদিনও। এই সারিতে ছিলেন ব্রাজিলের রোনালদো, রিভালদা, দুঙ্গা, কাফু, রোনালদিনহো, আর্জেন্টিনার মারিও কেম্পেস, ইতালির ফ্রান্সিসকো টট্টি, মার্কো মাতারেজ্জি, মালদিনি, জার্মানির লোথার ম্যাথিউ, আইভোরি কোস্টে তারকা দিদিয়ের দ্রগবার মত তারকারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাথলেটের কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট। অসুস্থতার কারণে ছিলেন না ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি পেলে।
ফুটবল যে সম্প্রীতির খেলা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্বকে বাড়ানোই যে ফুটবলের আসল উদ্দেশ্য তার উদাহরণ হয়েই রইলো রাশিয়া।



 

Show all comments
  • Himel Akash ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:১৫ এএম says : 0
    ক্রোয়েশিয়ার জন্য খুব কষ্ট হলো। সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে ফাইনালে আসছে দলটি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shariful Islam Azad ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:১৬ এএম says : 0
    প্রাণঢালা অভিনন্দন ফ্রান্সকে ... ক্রোয়েশিয়া ও কে অভিনন্দন ভাল খেলা উপহার দেওয়ার জন্য..
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parvez Miah ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:১৯ এএম says : 0
    সবাইকে অভিনন্দন,,, শেষ হলো রাশিয়ার বিশ্বকাপ,,,
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:২১ এএম says : 0
    অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন। কোচ হিসেবেও জিতলেন। ইতিহাসে নাম লেখালেন দিদিয়ের দেশম। ফ্রান্স আজীবন মনে রাখবে তাদের এই জাতীয় বীরকে....
    Total Reply(0) Reply
  • Azad Hussain ১৬ জুলাই, ২০১৮, ২:২২ এএম says : 0
    আত্মঘাতী গোল ই ফ্রান্সকে World Cup এনে দিয়েছে , সাথে বিতর্কিত পেনাল্টি !!!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ