Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দিনাজপুরে বালু দিয়ে কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ!

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম


দিনাজপুরে কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি হচ্ছে নদী থেকে তোলা বালু দিয়ে! মাটির পরিবর্তে নিজেদের তৈরী ড্রেজার দিয়ে তোলা বালুই হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের প্রধান উপকরণ। বাঁধে ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে নামে মাত্র লাগানো হচ্ছে পাশের জমি থেকে আনা ঘাসের চাপা। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দিনাজপুরের পূর্ণভবা, ঢেপা, আত্রাইসহ সাতটি নদীর বাঁধ এভাবেই নির্মাণ ও সংস্কার করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন্যা নয় মুষলধারে বৃষ্টি হলেই কোটি টাকার বাঁধ ভেসে যাবে পানিতে। বাঁধ নির্মাণের সাথে জড়িত শ্রমিককেরাও বলছেন নির্মাণাধীন বাঁধগুলি রক্ষা করতে হলে বøক ফেলতে হবে। এতে ব্যায় হবে বাঁধের সমপরিমাণ অর্থ। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফইজুর রহমান মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেছেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে। তাই বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণে কোন ব্যত্যয় বা অনিয়ম হচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মাটির জায়গায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের মত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন অনুশাসন দিয়েছেন কিনা? আর যদি দিয়েই থাকেন তাহলে টেন্ডার আহবানের সময় এই অনুশাসনের কোন কথা উল্লেখ করা হলো না কেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের কথা উল্লেখ করলেও বলেছেন, বালু নয় নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু দিনাজপুরে নদীর উপরিভাগে জমে থাকা চকচক বালু দিয়ে নির্মান করা হচ্ছে বাঁধ। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র মাটির ছোঁয়া নেই।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মোতাবেক, গত বছরে দিনাজপুরে ভয়াবহ বন্যায় নদীর বাঁধ ভেঙে ১৩ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়। এতে করে মারা যায় ২৯ জন। তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও কাজ হয়েছে অসম্পূর্ণ। পরবর্তীতে নোট শিট অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি বর্ষায় বন্যার কবল থেকে দিনাজপুর শহর ও নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি রক্ষায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। সদর উপজেলার গোষ্ঠের ডাঙ্গায় দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধের ১৪৯ মিটার, বিরল উপজেলার ঢেপা-পূর্ণভবা নদীর তীরবর্তী ডুমুরতলী এলাকায় ৩৯৩ মিটার, কাহারোল ও সদর উপজেলার ঢেপা নদীর বাম পার্শ্বের বিভিন্ন স্থানসহ বীরগঞ্জ উপজেলার সম্ভুগঞ্জ, মধুবন্দরপুর, বাশেরগ্রাম ও চাউহাটি এলাকা এবং সদর ও বিরল উপজেলার মালঝাড়, চকচকাসহ আরো কয়েকটি স্থানে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
শীথিল এন্টারপ্রাইজ ও রাইসা এন্টারপ্রাইজ নামক দুটি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছে। প্রভাবশালী এসব ঠিকাদাররা স্থানীয়দের দিয়ে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করাচ্ছে। গোষ্ঠেরডাঙ্গা ডুমরতলী, সম্ভুগঞ্জসহ আরো কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখতে গিয়ে প্রথমেই পড়তে হয় স্থানীয় অধিবাসীদের তোপের মুখে। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর সবাই দাবি জানিয়ে বলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বালু দিয়ে বাঁধ তৈরী করার চেয়ে না করাই ভাল। তাদের কথা, ঠিকাদারকে বললে তারা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে বলেছে সেভাবেই কাজ হচ্ছে।
ডুমুরতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেল স্থানীয়ভাবে তৈরী বালু তোলার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। সাদা চকচকা বালু ঠেকাতে সবুজ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। বালু দিয়ে বাঁধ তৈরীর পর পার্শ্ববর্তী জমি থেকে ঘাষযুক্ত মাটির চাপা এনে উপরে প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। অথচ সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরীর পর উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ভাল মানের দুর্বা ও চরকন্টা ঘাস লাগাতে হবে। এখানে বালু তোলার জন্য ভাড়ার ভিত্তিতে দেয়া ড্রেজার মালিক বললেন, এই বাঁধ থাকবে না যদি বøক না ফেলা হয়। অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদার নিয়োজিত ব্যক্তি জানালেন, অসুবিধা হবে না বালু’র বাঁধ ঠেকাতে বøক ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এর জন্য অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। অর্থাৎ বালুর বাঁধ ঠেকাতে সিমেন্টের বøক ফেলার জন্য অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা হচ্ছে। সাংবাদিক জানতে পেরেই নির্মাণ হওয়া বাঁধের ভিতর হাত ঢুকিয়ে বালু তুলে আনলেন এক কৃষক। বললেন এই বালু দিয়ে কি নদীর স্্েরাত ঠেকানো যাবে না। বৃষ্টি হলেই এগুলা ধসে যাবে।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত বাঁধ নির্মাণে সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঁধ

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৭ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ