Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কারাগারে মানবিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দেশের কারাগারগুলোতে সাধারণ কয়েদীদের ঘুমানোর জন্য বালিশ সরবরাহ করা হবে। কারাগারের ২৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বালিশ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। ১৭৮৮ সালে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে নির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারের ক্রিমিনাল ওয়ার্ডটি চালু হওয়ার পর থেকে সব ধরনের সাধারণ কারাবন্দির সর্বসাকুল্যে ঘুমানোর জন্য তিনটি কম্বল, ভাত খাওয়ার জন্য একটি থালা এবং একটি বাটি সরবরাহ করা হয়ে আসছে। শুধুমাত্র ডিভিশন পাওয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কয়েদিদের জন্য বালিশ, মশারিসহ কিছু অত্যাবশ্যকীয় জিনিস দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলের জেলকোড ও পেনালকোড আমাদের স্বাধীন দেশের বন্দি নাগরিকদেরকে উপর বহাল রাখা হয়েছে। বিশ্বের সব দেশেরই জেলকোড ও পেনাল কোডে আমূল পরিবর্তন আসলেও বাংলাদেশে পরিবর্তন দূরের কথা অবস্থার আরো অবনমন ঘটেছে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় ব্যাপক ধরপাকড় এবং বিভিন্ন অভিযানে গণগ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কারাগারগুলোতে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার তিন-চারগুণ বেশী কয়েদি অবস্থান করছে বলে জানা যায়।
দেশের সবর্মোট ৭০টি কারাগারে বর্তমানে ৭৬ হাজারের বেশী বন্দি রয়েছে, অথচ এসব কারাগারের ধারণক্ষমতা ২৭ হাজারের বেশী নয়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের কারাগারগুলো পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুন কয়েদী অবস্থান করছে। এমন অবস্থায় এমনিতেই কয়েদিরা অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। শুধুমাত্র বালিশ সরবরাহের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কারাগারে মানবিক বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব নয়। তবে শত বছরের নিষ্ঠুর কারাবিধি ভেঙ্গে কয়েদিদের বালিশ সরবরাহ করতে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অভিনন্দনযোগ্য এবং জেলকোড সংস্কারের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে গৃহিত জেলকোড, পেনাল কোড ও পুলিশ আইনের পরিবর্তনে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবী। গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়. কারাগারগুলোতে বন্দিদের বালিশ সরবরাহের সিদ্ধান্ত গৃহিত হওয়ার পর এরই মধ্যে ১৬ হাজার ৪২০টি বালিশ ক্রয় বরা হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে আরো ৬৪ হাজার বালিশ সংগ্রহ করতে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ঔপনিবেশিক শাসকরা এ দেশে যে কারাবিধি, পেনালকোড ও পুলিশ আইন প্রবর্তন করেছিল তা ছিল অত্যন্ত নিপীড়নমূলক। নির্বিচার শাসন-শোষন অব্যাহত রাখাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সত্তুর বছর আগে বৃটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে গেলেও পাকিস্তানিরা এসব আইনে তেমন কোন পরিবর্তন আনেনি। ঠিক একইভাবে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের কোন সরকারই কারাবিধিসহ পুরনো আইনগুলো পরিবর্তনে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। পশ্চিমাবিশ্ব তো বটেই, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও গত ৫০ বছরে কারাবিধি এবং পুলিশ আইনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রায় একক, অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির জনগোষ্ঠির গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কারণে উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো সর্বাগ্রে বাংলাদেশেই হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। অনেক দেরিতে হলেও জেলকোড পরিবর্তনে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাধীনতার পর জেলকোডকে যুগোপযোগী করতে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি নেয়া হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সে সময় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এফ কে এম মুনিমকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের কারাসংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। গঠিত কমিশন ১৮০টি সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদণ সরকারের কাছে জমা দিলেও সে সব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে গঠিত কারাসংস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির দেয়া সুপারিশ ২০০৬ সালে মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হওয়ার পরও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান সরকারও কারাসংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে সরকার জেলকোড সংশোধনের লক্ষ্যে একটি ১১ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করলেও কথিত সেই কমিটির কার্যক্রম বা প্রতিবেদন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কারাবন্দিদের মোবাইলফোনে কথা বলার সুযোগ বা ঘুমানোর জন্য বালিশ সরবরাহ করেই জেলকোডকে মানবিক ও যুগোপযোগি করার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। শত শত বছর ধরে কারাগারগুলোতে যে অমানবিক ব্যবস্থা চলে আসছে তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কয়েকগুন বন্দি রাখা, নি¤œমানের খাদ্য সরবরাহ, সৌচাগার ও পয়:নির্গমন ব্যবস্থা না থাকার মত মানবিক সংকট। কারাগারগুলোকে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও এহেন বাস্তবতায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং হাজতিরা বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। থানা হাজত ও কারাগারগুলোতে হাজতি ও কয়েদিদের সাথে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের নিবর্তনমূলক আচরণের পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার সনদ এবং সময়ের চাহিদা অনুসারে কারাবিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব আইনের পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারাগার

৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন