Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে এখনই উদ্যোগী হতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততই ঘুমোট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃবৃন্দের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এ আশংকা গভীরতা লাভ করছে। কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসে তাহলে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। এক দিনেই বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়ে যাবে, লাশের পাহাড় হয়ে যাবে। অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হতে দেয়া হবে না বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রতিদিনই বলছেন। কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যে, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে পরে বা নির্বাচনের সময় বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার নেটওয়ার্কে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে পত্রিকাটি উল্লেখ করে। ফলে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং প্রতিবেদনে যে নাশকতার আশংকা করা হয়েছে তাতে এটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে, যতই জাতীয় নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ঘনিয়ে আসবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই নানা খেলা শুরু হবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রেক্ষিতে, সচেতন মানুষ তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছে। অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রশ্ন করছেন, সরকার যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করে, তাহলে বিএনপি কি বসে থাকবে? বিএনপি নির্বাচন বয়কট বা প্রতিহত করতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলও কি তা প্রতিরোধ করতে চাইবে না? এসব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। যদি এসব আশঙ্কা বাস্তব রূপ লাভ করে, তবে ধরে নেয়া যায় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। ক্ষমতাসীন দল ও মাঠের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ অন্য দলগুলোর সাথে এ নিয়ে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনার আলামত দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি বলে দিয়েছেন, বিএনপির সাথে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে বারবার সংলাপের আহŸান জানাচ্ছে। নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এ আহŸান জানাচ্ছেন। তাদের এ আহŸান বরাবরের মতো ক্ষমতাসীন দল নাকচ করে দিয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে জনমনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি যে ঘোলাটে হয়ে উঠবে-এ ব্যাপারে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকেই জানেন, রাজনীতিতে বর্তমানে যে ডেডলক সৃষ্টি হয়েছে, তার জট খুলবে কি খুলবে না তা এখনই বলা যায় না। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কথা নেই। ক্ষমতায় যারা থাকেন, তারা কখনোই ভাবতে চান না, ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা থাকে, আজীবন তারাই ক্ষমতায় থাকবেন। কারণ তার মনে করেন, দেশকে সে উন্নয়নের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন। কাজেই তাদেরই ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ প্রবণতা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন প্রসঙ্গ এলেই তারা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচনও সেভাবেই হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। খুব কঠিনভাবে এসব কথা বারবার বলছেন। অর্থাৎ ক্ষমতা নামক তালগাছটি ক্ষমতাসীন দল কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির দাবী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাদের এ দাবী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দল অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা থেকে এক চুলও নড়বে না বলে অনড় অবস্থানে রয়েছে। তার অধীনেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হবে বলে বারবার বলছে। বলা বাহুল্য, গণতান্ত্রিক ধারা অনুযায়ী যে কোন সভ্য দেশে এভাবেই নির্বাচন হওয়ার কথা। আমাদের দেশে এ ধারায় নির্বাচন হলে খুবই ভাল হতো। দুঃখের বিষয়, আমাদের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, তাতে সভ্য দেশের মতো আচরণ আশা করা যায় না। আমাদের রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এমন কোন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায় না, যেখানে প্রকৃত অর্থেই একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারে। এ অবস্থায় একজনের অধীনে আরেকজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এটা তাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। এ কথা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষেও বিশ্বাস করা কঠিন যে, ক্ষমতা বদলের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি এবং বিএনপির অধীনে আওয়ামীলীগ জিতবে। দুই দলের রাজনৈতিক সম্পর্কের কথা বিবেচনায় নিলে এটা কোন দিনই সম্ভব নয়। এই বাস্তবতার পরও ক্ষমতাসীন দল নিজের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুঁটি মেরে বসে আছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, ক্ষমতাসীন দলের এ গো ধরার কারণ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার পুনরায় নির্বাচিত হয়ে আসা কঠিন। নির্বাচিত হতে না পারলে তার নেতা-কর্মীদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে। কারণ বিরোধী দলের সাথে ক্ষমতাসীনরা বিগত বছরগুলোতে যে আচরণ করেছে, তার একটি প্রতিক্রিয়া কোনো না কোনোভাবে পড়বেই। এটা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও জানে। অর্থাৎ ক্ষমতা থেকে গেলে নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়নের খড়গ নেমে আসার আশঙ্কায় সে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চাচ্ছে না।
দুই.
রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিস্পৃহতা চলে এসেছে। দল নিরপেক্ষ যারা এ সরকারের কার্যকলাপ পছন্দ করছে না, তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। মূলত ক্ষমতাসীন দল এমনই এক পরিস্থিতি চায় যে, হতাশ হয়ে হোক বা জোর করে চুপ করিয়ে হোকÑ কেউ যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা। বাস্তবেও এমন পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে। ফলে দলবাজ ছাড়া সচেতন মানুষ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তরুণ প্রজন্মের আলোচনায় যখন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তখন তাদেরকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, আমাদের এসব কথা রাজনীতিবিদ বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা কী ভালোভাবে নিবেন? তারা শুনবেন না এবং শুনতেও চান না। ফলে বলে লাভ কি! তরুণ প্রজন্মের এই হতাশার জায়গা ক্ষমতাসীনরা যে খুব একটা উপলব্দি করেন না কিংবা করতে চান না তা তাদের আচরণ থেকেই বোঝা যায়। অর্থাৎ দেশে এক আস্থাহীন এবং জোর করে চাপিয়ে দেয়া রাজনীতি চলছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোভাব এমন যে, এভাবে থাকতে পারলে থাকো, না হলে চুপ করে বসে থাকো। রাজনীতির উপর থেকে সচেতন ও তরুণ প্রজন্মের আস্থা ও বিশ্বাস হ্রাস পাওয়া যে দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়, তা ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারছেন না। টেলিভিশন টক শোগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের এখন তেমন একটা আগ্রহ নেই। এর কারণ অনুষ্ঠানগুলো অনেকটা একতরফা হয়ে গেছে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সমর্থকদের আধিক্য দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দলের চাপে হোক বা অন্য কোনো উপায়ে হোক বিরোধী দলের নেতা বা ভিন্ন মতের লোকজনের উপস্থিতি খুব কমই দেখা যায়। সরকার সমর্থক চ্যানেলগুলো এমন ব্যক্তিদের হাজির করে যাদের উদ্দেশ্যই থাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরোধী দলের মুন্ডুপাত করা এবং বিরোধী দল বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে একটি অকার্যকর দল হিসেবে চিহ্নিত করা। তাদের কথায় স্পষ্টতই বোঝা যায়, তারা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলকে তুষ্ট করার জন্য নিজস্ব বোধ ও চিন্তা বিসর্জন দিয়ে কথা বলছেন। এর ফলে টকশোগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেকাংশে কমে গেছে। বিষয়টি এমন হয়ে গেছে, টকশো করতে হবে, এ জন্যই করা এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসা ও তোষামোদ করার জন্য তা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতাসীন দলের যেসব তরুণ নেতৃবৃন্দ টকশোতে অংশগ্রহণ করেন, তাদের বক্তব্য শুনে মনে হয়, তারা মন ও মননের দিক থেকে প্রথাগত রাজনৈতিক ধারার ধারক-বাহক হয়ে পেছনের দিকে হাঁটছেন। এ যদি হয় তাদের মনোভাব, তবে রাজনীতিকদের উপর মানুষের আস্থা থাকবে কিভাবে? তাদের আলাপ-আলোচনায় ভবিষ্যতের কোন দিক নির্দেশনা, বুদ্ধির বিকাশ বা টার্গেট থাকে না। তারা অতীত ও বর্তমানের মধ্যেই ফিক্সড হয়ে আছেন। অতীতে রাজনীতিতে অনেক হৃদয়-বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা অস্বীকার এবং পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই। মানুষ এসব ঘটনা জানে। রাজনীতিকদের বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের বোঝা উচিত, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করে একে অপরকে ঘায়েল করার মানসিকতার মাধ্যমে কখনোই জনআস্থা অর্জন এবং সুস্থ্য ও গঠনমূলক রাজনীতি সম্ভব নয়। এ অতীতমুখী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে ভবিষ্যতে যাতে অতীতে যে ভুল হয়েছে বা তার চেয়েও বড় কোন ভুল না হয়, এ ভিশন তাদের থাকা উচিত। ভবিষ্যতমুখী চিন্তাধারার মাধ্যমে দিক নির্দেশনামূলক চিন্তা-চেতনা ধারণ করা জরুরী। তা নাহলে রাজনীতিকদের উপর থেকে মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস কমছে, তা ক্রমাগত কমতেই থাকবে।
তিন.
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে ইতোমধ্যে বিএনপির নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন। দলটির কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির পরই কেবল নির্দলীয় সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের এ ধরনের বক্তব্য থেকে ধরে নেয়া যায়, তারা নির্বাচনের আগে আন্দোলনে যাবেন এবং এছাড়া তাদের দাবী আদায়ের অন্য কোনো পথ নেই। ফলে নির্বাচনের আগে যে রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা এবং সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি বুঝে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। এটা হতে পারে হরতাল, অবরোধ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। পুরোটাই নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। তার এ বক্তব্যেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে রাজনীতি কোনো না কোনোভাবে উত্তপ্ত এবং সংঘাতময় হয়ে উঠবে। অথচ ক্ষমতাসীন দল এ ব্যাপারে অনেকটা নির্ভার রয়েছে। সে এসব বিষয় আমলে নিচ্ছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না। সে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলের সঙ্গেই আলোচনা করতে রাজী নয়। তার এক কথা, তার অধীনেই নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দলের এ ধরনের গোঁ ধরে বসে থাকার অর্থ কি এই তারাও চাচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো পরিস্থিতিতে দেশ পড়–ক? আমরা মনে করি, সরকারের উচিত হবে, প্রকাশ্যে হোক বা অন্তরালে হোক বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে করা যায়, তার উদ্যোগ নেয়া। তা নাহলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে না। কারণ প্রধান বিরোধী দল তার নিজ অস্তিত্বের জন্যই আন্দোলনে নামবে। এতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন সরকার দেশকে আসন্ন সংঘাত থেকে মুক্ত রাখতে রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রæত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কারণ দেশের ক্ষতি হলে, তার দায় যতটা না বিরোধী দলের উপর পড়ে, তার চেয়ে বেশি পড়ে ক্ষমতাসীনদের উপর। তাদের উচিত হবে, নিজেদের আগে হাত বাড়িয়ে দেয়া। এই হাত বাড়িয়ে দেয়াতে লজ্জার চেয়ে প্রজ্ঞাই ফুটে উঠবে। এদিকে রাজনীতি অঙ্গণে নানা গুজব-গুঞ্জণ চলছে। কেউ জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা, এ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকার আসতে পারে। এ ধরনের বা অসাংবিধানিক কোনো সরকার যদি আসে, তবে তার জন্য যতটা না দায় বিরোধী দলের ওপর পড়বে, তার চেয়ে বেশি পড়বে ক্ষমতাসীন দলের ওপর, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তা কোন দলের জন্যই মঙ্গল হবে না। দেশ বিরাজনীতিকরণ বা রাজনীতির মোড়কে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব হোক, তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাতে রাখাই হবে বাঞ্চনীয়। কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কথা নেই। রাজনীতিতে সাত দিন অনেক লম্বা সময়। সাত দিনেই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে। সচেতন ও সাধারণ মানুষেরও আশা, রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ক্ষমতাসীন দলেরই সবার আগে উদ্যোগ নেয়া উচিত।
চার.
শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম জনসাধারণের দেখার সৌভাগ্য খুব কমই হয়েছে। আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও, সংঘাত, সহিংসতা। এই আতঙ্কেই এখন জনসাধারণ ভুগছে। সবার মধ্যেই এক ধরনের চাপা উৎকণ্ঠা জাতীয় নির্বাচনের আগে কি হবে, কি হতে যাচ্ছে, কীভাবে রাজনৈতিক সমাধান হবে! নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহল যাকেই জিজ্ঞেস করা হয়, কি ঘটতে যাচ্ছে? তাদের জবাব, জানি না। তাদের বক্তব্য এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধান বিরোধীদলসহ অন্যান্য দলের সাথে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো। এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দিচ্ছে। বিএনপিও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে তা আগাম ধারণা করা যায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলও যে তার প্রশাসন যন্ত্র নিয়ে তা মোকাবেলা এবং দমন করতে চাইবে, তাও বোঝা যাচ্ছে। ফলে কনফ্রন্টেশন অনিবার্য হয়ে উঠার আশঙ্কা খুবই প্রবল। বলা বাহুল্য, দেশে সংকট সৃষ্টি হলে তার দায় সবার আগে সরকারকে নিতে হয়। আর সমাধানের দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হয়। আমরা কথায় কথায় উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্রের কথা বলি। কিন্তু তাদের আচরণের কথা বলি না। সেখানে সরকার বা সরকারের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার দায় নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করে। আমাদের দেশে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা বহাল তবিয়তে থাকেন। এমনকি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকতেও কেউ লজ্জিত হন না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চাইছে না হেরে যাওয়ার ভয়ে। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করে চলেছেন। এক সময় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে চিরতরে অসাংবিধানিক সরকার আসার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার এ কথাও বলে শোনা গেছে, অসাংবিধানিক সরকার এলে দশ বছরেও নির্বাচন দেবে না। ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শোনা গেছে। অর্থাৎ তার মূল কথা হচ্ছে, যেভাবেই হোক দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় এবং এ পরিবেশ এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি, তা ক্ষমতাসীন দল বুঝতে চাইছে না।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ