Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘ভারতকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আসামের ৪০ লাখ মানুষকে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেয়ার ঘটনা দেশে রক্তপাত বা গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, বিজেপি জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতি বরদাস্ত করা যায় না। এ নিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ, রক্তপাত হবে। খবর এনডিটিভি, দি হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
গত সোমবার প্রকাশিত আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে (এনআরসি) দেখা যায়, সেখানে বসবাসরত ৪০ লাখ মানুষের নাম ঐ তালিকায় নেই। বিষয়টি ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। দেখা দিয়েছে উত্তেজনা, শুরু হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল।
মঙ্গলবার নয়াদিল্লীতে কনস্টিটিউশন ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আসামে এটা কী হচ্ছে! কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে! হঠাৎ করে বলা হচ্ছে দেশ ছেড়ে চলে যাও! দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, বিহার যদি বলে বাঙালিদের, দক্ষিণের রাজ্যগুলি যদি বলে উত্তর ভারতের মানুষকে থাকতে দেব না, তা হলে দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে? তিনি বলেন, ভারতকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি। খ্রিস্টান, মুসলিম, দলিত হলেই আলাদা করা হচ্ছে? কেন্দ্রের এই আচরণ সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, কে ভারতীয়, আর কে নন, তা ঠিক করার বিজেপি কে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যাদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তাঁরা সকলে বাংলাদেশি নন। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলার অনেকেই কর্মস‚ত্রে আসামে গিয়ে বাস করছিলেন। তাঁদের নাম এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে তাঁরা ভারতীয় নন। তৃণমূল নেত্রী প্রশ্ন করেন, দেশের এক প্রান্তের মানুষ কেন অন্য প্রান্তে গিয়ে থাকতে পারবেন না? তিনি বলেন, প্রতিটি রাজ্যেই অন্যান্য রাজ্যের লোক থাকেন। সব রাজ্যই যদি এ বার অন্য রাজ্য থেকে যাওয়া লোকজনকে বার করে দিতে শুরু করে, তা হলে ভারত কি অখন্ড থাকবে?
তিনি আরো বলেন, আমি দেখে অবাক হয়েছি যে আসামের নাগরিক পঞ্জিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পারিবারের নামও নেই। বহু লোক আছেন যারা তালিকাভুক্ত হননি।
শুধু তৃণমূলই নয়, কংগ্রেসসহ সরকার বিরোধী অন্য দলগুলোও এর সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এক বছরের মধ্যে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। আর সে কথা মাথায় রেখেই ভোটের জন্য ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’র তকমা লাগানো হয়েছে বেছে বেছে শুধু মুসলিম স¤প্রদায়ের মানুষের গায়ে। মুসলিমদের নামই বেশি বাদ পড়েছে নাগরিকপঞ্জিতে। আসামের এই তালিকা ধরে যদি ৪০ লাখ মানুষকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এটা হবে বিশ্ব ইতিহাসে এ ধরনের সবচেয়ে বড় উৎখাতের ঘটনা।
গত মঙ্গলবার ভারতের রাজ্যসভায় এ নিয়ে প্রচন্ড হৈচৈ হয়। আলোচনার সূত্রপাত করে কংগ্রেস নেতা গোলাম নবি আজাদ বলেন, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেনস (এনআরসি)কে রাজনীতিকায়ন করা ও ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে না। এটা একটি মানবাধিকারের বিষয়, কোনো হিন্দু-মুসলিম ইস্যু নয়। আমরা কোনো লোককে দেশ থেকে বিতাড়ন চাই না। এটা শুধু ৪০ লাখ লোকের বিষয় নয়, ছেলেমেয়ে-পরিবারের সদস্যদের ধরলে এ সংখ্যা এক কেটি থেকে দেড় কোটি হবে। তিনি বলেন, এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে যখন ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
সমাজবাদী পার্টির রাম গোপাল যাদব বলেন, এ মানুষগুলো যাবে কোথায়? যাদের নাম তালিকায় নেই তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই আছে এবং বিহার ও উত্তর প্রদেশের লোকও আছে।
তৃণমূলের সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় এনআরসির প্রত্যাহার চান।
বিজু জনতা দলের প্রসন্ন আচার্য হাউসে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর কাছে এনআরসির সকল অনিয়ম দেখার ব্যাপারে আশ্বাস চান।
সিপিআই (এম)-র টিকে রঙ্গরাজন এনআরসির খসড়া তালিকাকে অবৈধ আখ্যায়িত করেন।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ্ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী গৃহযুদ্ধের কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন। তৃণমূলনেত্রী দেশের নিরাপত্তা নিয়ে একটুও ভাবিত নন, তিনি শুধুমাত্র নিজের ভোটব্যাঙ্ক দেখতে পান, আর কিছুই তাঁর চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, আসামে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর উপস্থিতি দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদ। তিনি আরো বলেন, রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতেই এ এনআরসি তৈরি হয়েছে।
এ নিয়ে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল-সহ যে সব দল সংসদে প্রবল হইচই করেছে, তাদের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ বলেন, আপনারা অবস্থান স্পষ্ট করুন। তিনি বলেন, বিজেপির অবস্থান হল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না। বিরোধী দলগুলি কি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে? তারা তা স্পষ্ট করে জানাক।
এদিকে আসাম সরকার জানিয়েছে,সোমবার প্রকাশিত তালিকাটি চূড়ান্ত নয়। এতে যাদের নাম নেই তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন বলে । এ তালিকা ধরে এখনই কাউকে গ্রেপ্তার বা বিতাড়নও করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে তারা। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আসামের নাগরিক তালিকা একটি খসড়া মাত্র। তাই এর ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে যে দাবি-দাওয়া এবং আপত্তি-অসন্তোষ রয়েছে, তা মেটানো হবে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে। সংশ্লিষ্ট দাবি ও পাল্টা দাবিগুলি কোন পদ্ধতিতে মেটানো হবে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে তা শীর্ষ আদালতকে অবহিত করতে হবে। বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি আর এফ নরিম্যান মঙ্গলবার এ নির্দেশ জারি করেন।
আদালত বলেছে, মানুষের মধ্যে যাতে কোনও বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সেজন্য আসামের খসড়া নাগরিকপঞ্জি আগামী ৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। যাদের নাম বাদ গেছে তারা তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করানোর সুযোগ পাবেন। এর সময়সীমা হবে ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। যাদের আপত্তি, অসন্তোষ রয়েছে তারাও এই সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
মমতার বিরুদ্ধে মামলা
ভারতের আসাম রাজ্যের খসড়া নাগরিকপঞ্জির তালিকা থেকে ৪০ লাখ মানুষ বাদ পড়ার ঘটনায় ‘গৃহযুদ্ধ ও রক্তগঙ্গা’ বয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার এই মন্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরই আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলীয় তিন কর্মী মমতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মধ্যে ‘ঘৃণা ও উত্তেজনা’ ছড়াচ্ছেন বলে পুলিশের কাছে দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করেছেন বিজেপির ডিব্রুগড় যুব শাখার তিন কর্মী।
তারা পশ্চিমবঙ্গকে নরক বানিয়েছেন : দিলিপ
আসামে ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ ইস্যুতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেই উত্তেজনাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলিপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য ভারত কোনো ধর্মশালা নয়। ভারতে জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিতে চাইছেন বাংলাদেশী মুসলিমরা। তারা ভারতকে কলোনি বানিয়ে ফেলেছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। দিলিপ ঘোষের ওই সাক্ষাতকারটি নেন রেডিফের সৈয়দ ফিরদাউস আশরাফ। এতে দিলিপ ঘোষ ব্যাখ্যা করেন কিভাবে ভারতে এক কোটি ‘বাংলাদেশী’র উপস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনকে ‘নরকে’ পরিণত করেছে বেআইনি কর্মকান্ডের মাধ্যমে। হতে পারে সেটা সন্ত্রাস বা ভুয়া মুদ্রা। দিলিপ ঘোষ আরো বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আসামের মতো নাগরিকত্ব নির্ধারণী এনআরসি বাস্তবায়ন করা হবে। তার ভাষায়, বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের আমরা বের করে দেবো। কঠিন সময় সামনে আসছে। পশ্চিমবঙ্গে কোনো অবৈধ অভিবাসীকে আমরা সহ্য করবো না। ভারতের অনলাইন রেডিফকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। তার এ বক্তব্যের জবাবে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্কসিস্ট নেতারা অভিযোগ করেছেন, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিজেপির বাঙালি বিরোধী মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। তারা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি মানসিকতার সংস্কৃতি আমদানি করার চেষ্টা করছেন। সূত্র রেডিফ, দি ইকোনোমিক টাইমস।



 

Show all comments
  • Fahim Rezwan ২ আগস্ট, ২০১৮, ৩:১৩ এএম says : 0
    akdom thik kotha
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২ আগস্ট, ২০১৮, ৪:৪০ এএম says : 0
    গৃহযুদ্ধ নয় এটা হইবে স্বাধীনতা যুদ্ধ। ভারতে মানূষ যে কত অশান্তিতে আছেন এটা তার প্রমাণ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মমতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ