Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমিক রফতানি চুক্তি চায় বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ৩ মে ঢাকা আসছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ। তার এ সফরকালে কুয়েতের সঙ্গে দক্ষ শ্রমিক রফতানি ও বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বেশ কিছু চুক্তি করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে তিনি এ সফরে আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হবার প্রেক্ষিতে নুতন বাজার খোঁজার পাশাপাশি বন্ধ থাকা বৃহৎ বাজারগুলোও উন্মুক্ত করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কুয়েতের সঙ্গে শ্রমিক রফতানি চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, আগামী ৩ মে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে দক্ষ শ্রমিক রফতানিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ, কুয়েতের অর্থায়নে তেল শোধনাগার স্থাপনসহ মোট ২২টি মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা বা চুক্তির জন্য এরই মধ্যে প্রায় ২২টি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য চুক্তি বা সমঝোতার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরবে। পরবর্তীতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে ঠিক করা হবে, তার সফরকালে আমরা কী প্রস্তাব করব। তবে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছে দক্ষ শ্রমিক রফতানি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। বিদ্যমান প্রতিরক্ষা-বিষয়ক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং কৃষিতে সহযোগিতাসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, ওআইসি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর।
কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে এশিয়ার পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকায় আসবেন। তারপর দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এ সফর করছেন। সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এ এইচ হায়াত তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ২০ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
প্রাথমিক কর্মসূচি অনুযায়ী, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এ ছাড়া তিনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ রাষ্ট্রীয় অপরাপর আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করতে পারেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কুয়েত থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। আমদানি করা অপরিশোধিত তেল শোধন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার গড়ে তোলার জন্য কুয়েতের সহায়তা চাওয়া হতে পারে। বিশ্বে তেলের দাম কমতে থাকায় কুয়েতের অর্থনীতি এ মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হয় সে বিষয়ে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, রাশিয়া ও ইরান অব্যাহতভাবে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। আগামী ৩-৪ বছর বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের এই পতন অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী। কম মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়া কুয়েতের অর্থনীতির জন্য অগ্রাধিকার হওয়ায় এমন কর্মী পাওয়ার জন্য বাংলাদেশই সবচেয়ে ভালো স্থান বলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি মনে করে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহর এ সফর বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে কুয়েত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর এই দুই মুসলিম দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা এতটাই দৃঢ় ছিল যে, পরস্পরের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কুয়েত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার হলেও গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাবার হার কমে গেছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিকের কুয়েতে কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৬৫৮ জন নারী। ২০০৬ সালেও দেশটিতে ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশ করে। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধীরে ধীরে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হতে থাকে। এ সংখ্যা এখন বাড়াতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কুয়েতে বর্তমানে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। দেশটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক, আইটি প্রফেশনাল, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমিক রফতানি চুক্তি চায় বাংলাদেশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ