Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শহিদুল আলমকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখার নির্দেশ

স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট হাইকোর্টে দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী সোমবারের মধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়।
আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, আদিলুর রহমান, সৈয়দা রেজোয়ানা হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন আদালতে শুনানিতে বলেন, শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেখানে চারজন ডাক্তারের নাম আছে। তবে তাদের মধ্যে কোনো মনরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। অথচ হেফাজতে মৃত্যু আইনের ২(৬) ধারায় নির্যাতন অর্থ কষ্ট হয় এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে বোঝায়। এজন্য আমরা তার মানসিক অবস্থাও পরীক্ষার আবেদন জানাচ্ছি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শহিদুল আলমকে নিয়ে যে রিটটি করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তাকে সঠিকভাবেই গ্রেফতর করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড দেয়া হয়েছে। তিনি কোনো ভিকটিম নয় যে এই রিট চলতে পারে।
এ সময় মোবাইল ফোন থেকে ডিবি কার্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে শহিদুল আলমের হাঁটার ভিডিও আদালতে উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি মামলার আর্জি ও পুলিশের বক্তব্য নিয়ে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আল জাজিয়া টেলিভিশনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটি উস্কানিমুলক। শহিদুল আলম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন সেটি ট্যাকিং করে ডিবি পুলিশ। পরে রাত তিনটার সময় ডিবি পুলিশ শহিদুল আলমকে আটক করে। শহিদুল আলমের বিষয়ে পরবর্তি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে রিমান্ডে রাখা হোক। তিনি বলেন, শহিদুল আলম তো বলেননি যে তিনি অসুস্থ্য, পাগল।
তখন আদালত বলেন, মেন্টালি টর্চার করলে এগুলো বলতে হয়না। অ্যাটর্নি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর চারজন ডাক্তার তার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এখানে চারজন ডাক্তারের মধ্যে তিন জনই ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। তাকে যারা পরীক্ষা করেছেন তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শহিদুল আলম ইজ পিজিক্যাল সাউন্ড (শারিরিকভাবে সুস্থ)। ৫২২ নম্বর কেবিনে নিয়ে শহিদুল আলমকে ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়।
জবাবে সারা হোসেন আদালতকে বলেন, তার মুখে ঘুষি মারা হয়েছে। তার নাকের চারপাশে কী অবস্থা তা পরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা নির্ধারণ প্রয়োজন। এছাড়া, মানসিক পরীক্ষাও জরুরি। আইন সম্মতভাবে আটক করা হয়নি। উনার নির্যাতনের জন্য শারীরিক ও মানুষিক পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, মেডিকেল পরীক্ষা করেছেন চারজন ডাক্তার। তাদের মধ্যে একজনও মানুষিক রোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। অথচ মানুষিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া উনারা কি করে একটি প্রতিবেদন দিলেন যে বললেন শারীরিক এবং মানুষিকভাবে শহিদুল আলম সুস্থ্য। মানুষিক সুস্থ্যতা প্রমান বা যাচাই করার কোন ডাক্তার কিন্তু ছিলেন না। এরপর শুনানি শেষে আদালত রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, শহিদুল আলম নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। ওই ঘটনায় রমনা থানার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। গত ৬ আগস্ট ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ