Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চামড়া পাচারের শঙ্কা

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকায় কুরবানির গরুর চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ভারতে চামড়া পাচারের কাজে প্রতিবছরই নিয়োজিত থাকেন। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশঙ্কা করছেন এখানকার চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত তিন-চার বছর ধরে কুমিল্লায় কুরবানির গরুর চামড়ার কম দর নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলতে থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের খুচরা বা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সীমান্তের এপার-ওপার সিন্ডিকেটের হাতে চামড়া পৌঁছে দেয়। এবারো কুমিল্লা থেকে বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হবে। কেননা এবার ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কমিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় আনা হয়েছে। ফলে পাচারচক্রের এপার-ওপার সিন্ডিকেট বেশি দামে চামড়া কিনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কুমিল্লা জেলায় পশুর চামড়া বেচাকেনার অন্যতম এলাকা নগরীর গাংচরের ঋষিপট্টি ও লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ বাজার। সারা বছরই ঋষিপট্টি ও দৌলতগঞ্জের ছোট-বড় আড়তে গরুর চামড়া কেনা ও সংরক্ষণের কাজ চলে। তবে ঈদুল আজহা (কুরবানির ঈদ) ঘনিয়ে এলে স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশ নড়েচড়ে ওঠেন। ঋষিপট্টি ও লাকসাম ছাড়াও বুড়িচংয়ের ময়নামতি বাজার, বুড়িচং বাজার, সদর দক্ষিণের সুয়াগঞ্জ, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম বাজার, হোমনা ও দাউদকান্দিতে চামড়া বেচাকেনার ব্যবস্থা স্থল গড়ে উঠেছে।
এবারে সরকারিভাবে কুরবানির পশুর চামড়ার দাম রাজধানীর বাইরে অনেক কম ঘোষণা পাচারকারিদের উৎসাহিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লার ছোট-বড় পাইকাররা। তারা ভারতের ট্যানারিগুলোতে চামড়া সঙ্কট থাকায় এবারো কুমিল্লা থেকে কুরবানির চামড়ার একটি বড় অংশ পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে চামড়া পাচার সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ অর্থও বিনিয়োগ করেছেন। ঈদের দিন সিন্ডিকেটের সংগ্রহে রাখা বিপুল পরিমাণ চামড়া লবণে সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে ভারতে পাচার করে থাকে। চামড়া পাচার রোধে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী চার মাস সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখার দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
কুমিল্লার বেশ ক’জন পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে কুরবানির পশুর চামড়ার দর কমে গেলে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ভারতে চামড়া পাচার চক্রের সাথে যোগ দেয়। এবারও কুমিল্লার বাজারে গরুর চামড়ার দাম কম থাকছে। আর সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর চামড়া পাচারের এপার-ওপার সিন্ডিকেট। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে কুরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তাতে চামড়া পাচার সিন্ডিকেট বেশ খুশি। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটের লোকজন সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে চামড়া সংগ্রহের জন্য দালালচক্র নিয়োগের কাজ শুরু করেছে। ভারতের চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কুমিল্লার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতিদের মাধ্যমে চামড়া ব্যবসার জন্য কোটি কোটি টাকা লগ্নি করছে। কুমিল্লা ঋষিপট্টির চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই-তিন বছর ধরে ভারতের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়া সঙ্কট চলছে। এখানকার বাজারের চেয়ে ভারতে চামড়ার দাম বেশি। এবার সরকারিভাবে গরু-ছাগলের চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা ভারতের বাজারের চেয়ে অনেক কম। আর এ কারণে কুরবানির ঈদে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ গরুর চামড়ার একটি অংশ ভারতে পাচার হয়ে থাকে। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ চামড়া পাচার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এখানে চামড়ার দাম কমে গেলে তারা পাচারের উদ্দেশ্যে চামড়া মজুদ করে।
কুমিল্লার পাইকারি ব্যবসায়ীরা আরো জানান, চামড়ায় লবণ দেয়ার পর প্রায় তিন থেকে চার মাস সংরক্ষণ করা যায়। সীমান্ত এলাকার সিন্ডিকেট সংরক্ষণ করা চামড়া আস্তে ধীরে ভারতে পাচার করে থাকে। বিশেষ করে কুমিল্লার সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ার আশাবাড়ি, শশীদল, নয়নপুর, বুড়িচংয়ের চড়ানল, বারেশ্বর, সংকুচাইল, রাজাপুর, কুমিল্লা সদরের শিবের বাজার, গোলাবাড়ি, সাহাপুর, বিবির বাজার, সদর দক্ষিণের একবালিয়া, তালপট্টি, সুবর্ণপুর, চৌয়ারা, যশপুর, বৈয়ারা বাজার, শ্রীপুর, কনেশতলা, দড়িবটগ্রাম, চৌদ্দগ্রামের গোমারবাড়ি, আমানগন্ডা, ছফুয়া, জগন্নাথদিঘি, গোলপাশা, বসন্তপুর, সাতবাড়িয়া, কাইচ্ছুটি ও পদুয়া সীমান্ত পথে সহজে কুরবানির গরুর চামড়া পাচারের সুযোগ কাজে লাগায় সিন্ডিকেট। তাই ঈদ পরবর্তী তিন-চার মাস ভারতে চামড়া পাচার রোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ