Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর : শেষ হয়নি বিচার কাজ

মোট মামলা ১৬১, বিচারাধীন মামলা ৫৫ ঢাকার ১৮ মামলার ১১টির চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা

আবদুল্লাহ আল মামুন | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৩৫ এএম

এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলায় মামলা দায়ের করা হয় ১৬১টি। এক যুগে ১০৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ৫৫টি মামলা বিচারাধীন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসের সব চেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজানে। এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত চলাকালে প্রকাশ্যে জঙ্গিরা হামলা চালায়। 

২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি’র কার্যক্রম শুরু করে। জেএমবি’র কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে এখন এই জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এই সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেস্টা করছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। গত ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবি’র দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করে ওই দেশের এনআইয়ে টিম। পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই মূহুর্তে জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা থাকলেও তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
আজ সেই ভয়াল ১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে মুন্সিগঞ্জ ছাড়া দেশের ৬৩ জেলায় ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবির জঙ্গিরা। সিরিজ বোমা ঘটনায় সারা দেশে মামলা হয় ১৬১টি। তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। অভিযোগপত্র দেয়া ১৪৩ মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৬৭ জনকে। ইতোমধ্যে রায় দেয়া হয়েছে ১০৬টি মামলার। বর্তমানে ৫৫টি মামলা বিচারাধীন আছে। রায় দেয়া ওইসব মামলায় ৩০৭ জনের সাজা হয়েছে। মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে ২৭ জনকে।
জঙ্গি দমনে প্রধান ভূমিকা রাখা র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র‌্যাব জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। র‌্যাবের অভিযানেই জেএমবির প্রধান বা আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেফতার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। জঙ্গিদের তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিদের কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় জেলা পর্যায়ে নানা কৌশলে কর্মী বা সদস্য সংগ্রহের কাজ করছে জঙ্গিরা।
ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পিপি শাহ আলম বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ১৮ মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে পুলিশ ১১টি মামলারই চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বাকি ৭টি মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার পর তেজগাঁও এবং বিমানবন্দর থানার দুটি মামলার রায় হয়েছে। অন্য ৫টি মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে।
শাহ আলম তালুকদার আরও জানান, অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমত পাওয়া যায় না। অনেক স্বাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেন না। বেশির ভাগ স্বাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এরকম নানা কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না।
ঢাকায় সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ মামলায় তিন জেএমবি সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হল- আবুল আল ফাত্তাহ ওরফে শাকিল, রেজাউল করিম ও তারেক ইকবাল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলায় এই রায় দেয়া হয়। এরপর ওই বছরের শেষ দিকে সিরিজ বোমা হামলা সংক্রান্ত বিমানবন্দর থানার একটি মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার।
২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাতশ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর এই মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ