Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পথে পথে ভোগান্তি

ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট, টার্মিনালের বাসের জন্য অপেক্ষা, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

এবারও ভোগান্তি দিয়ে শুরু হয়েছে ঈদ যাত্রা। প্রচন্ড গরমে পথে পথে যানজট, খানাখন্দের সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির ধীরগতি ঘরমুখো যাত্রীদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঢাকা থেকে রওনা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে পথে পথে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ফেরিঘাটের অচলাবস্থা। অন্যদিকে, সিডিউল বিপর্যয় ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ ট্রেনই ছাড়ছে দেরি করে। গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও ছিল তীব্র যানজট। এ ছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া এবং মাওয়া ফেরিঘাটেও ছিল ভয়াবহ যানজট। সব মিলে সীমাহীন ভোগান্তি নিয়েই নাড়ির টানে মানুষ বাড়ি ফিরছে।
এদিকে, মহাসড়কে যানজটের কারণে দুরপাল্লার বাসগুলো সময়মতো ঢাকা ফিরতে পারছে না। এ জন্য বাসের জন্য হাজার হাজার যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাস টার্মিনালগুলোতে। গতকাল সকালে গাবতলী, সায়েদাবাদ টার্মিনালে প্রচন্ড রোদের মধ্যে হাজার হাজার যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাস মালিকরা জানান, মহাসড়কে যানজটে আটকে পড়ায় কোনো গাড়িই সময়মতো টার্মিনালে আসতে পারছে না। সে কারণেই যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঢকা-চট্টগ্রাম মহাসড়েক যানজট লেগেই আছে। গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা থেকে শহীদনগর পর্যন্ত ঢাকামুখী সড়কে অন্তত ২৫ কিলোমিটার যানজট ছিল। ভোররাত থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড গরমে যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেশি। রাস্তার বিভিন্নস্থান খানা-খন্দকে ভরে যাওয়ায় যারবাহন চলছে ধীর গতিতে, এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সূত্র জানায়, মহাসড়কের গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনা, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট সেনানিবাস, মিয়াবাজারে অবৈধ সিএনজিস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িগুলো র্দীঘসময় দাঁড় করিয়ে রাখায় সেখানে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া গৌরীপুর, বারপাড়া, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, সুয়াগঞ্জ, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম সদরে অপরিকল্পিত ভাবে হাট-বাজার বসায় সেসব স্থানেও যানজট হয়। এতে ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনা চরমে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সোমবার থেকে মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সে কারণে শনিবার মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির বেশ চাপ রয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজট কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও গতকাল যানজটে আটকে ছিল দুরপাল্লার বাস। এ কারণে উত্তরাঞ্চলের দুরপাল্লার বাসগুলো সময়মতো ঢাকায় ফিরতে পারেনি। গাবতলী বাস টার্মিনালের একজন কাউন্টার মাস্টার বলেন, মহাসড়কে যানজটের কারনে ভোর ৬টার দিকে যে বাস আসাবে সেই বাস সকাল ৭টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ৬টার বাস আসতে আসতে ১১টা বেজে গেছে। এ কারণে সকাল ৭টা থেকে শুরু করে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর যে বাসগুলো ছাড়ার কথা সেগুলো ছাড়েনি। ওই সব বাসের যাত্রীরা ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন। মহাখালী বাস টার্মিনালেও একই অবস্থা। সেখানেও শত শত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। শিবলী নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভেবেছিলাম আগেভাগে যাচ্ছি বলে ভোগান্তিতে পড়বো না। এরকম ভোগান্তি হয় ঈদের দুএকদিন আগে। এবার ৫দিন আগে থেকেই সেই ভোগান্তি শুরু হলো। বাস আসতেই যেখানে ৫ ঘণ্টা দেরি, সেই বাস গন্তব্যে পৌঁছাতে কতো ঘণ্টা লাগবে কে জানে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় মহাখালী টার্মিনাল থেকে যাত্রা করে সৈকত নামে এক যাত্রী বগুড়ায় পৌঁছেছেন সকাল সাড়ে ৮টায়। ঈদযাত্রায় ভোগান্তির বর্ণনা করে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বেরিয়ে আশুলিয়ার কাছে যানজটে আটকা পড়ে ২ ঘণ্টা কেটেছে। এরপর টাঙ্গাইলে আরও ৪/৫ ঘণ্টা। ওই যাত্রী বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ভোগান্তি অনেক বেশি। অথচ সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর মুখে শুনি ভিন্ন কথা। তিনি বার বার বলছেন, কোনো ভোগান্তি হবে না। একজন মন্ত্রী না জেনে এসব বলেন কিভাবে?
অন্যদিকে, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও গতকাল যানজটের ভোগান্তি ছিল। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিকে, তীব্র স্রোতের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি চলাচল। স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলোকে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে অতিরিক্ত সময় নিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে করে পাটুরিয়া ঘাটে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহনের সারি কখনো কখনো দুই থেকে তিন কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল থেকেই পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। গতকাল শনিবার সেই চাপ আরও বেড়েছে।
ভুক্তভোগিরা জানান, ঘাটে দীর্ঘ সময় বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছে পাটুরিয়া ঘাটে। আর দুই-তিন দিন ধরে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে আছে ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ১১টি রো রো বড় ফেরি এবং ৯টি ছোট ও মাঝারি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে যানবাহন। ফেরি পর্যাপ্ত থাকলেও পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো তার স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে না পারায় ফেরি ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। এতে করে পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি পড়ে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে যানজট আর দীর্ঘ লাইন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের লাইন পাটুরিয়া ফেরি ঘাট থেকে আড়াই কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। তীব্র গরমে বাসের ভেতরে বসেই সময় কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ভোর থেকেই মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘরে ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চঘাটে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে যাত্রীর তুলনায় লঞ্চ কম থাকায় যে যেভাবে পারছে সেভাবেই লঞ্চে জায়গা করে নিচ্ছে। রাশেদুজ্জামান খান নামের এক যাত্রী বলেন, ফেরিঘাটে গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফেরিতে করে পার হতে অনেকক্ষণ ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তাই স্পিডবোটে পার হয়ে এলাম। চালক পরে গাড়ি নিয়ে আসবে।
একে তীব্র গরম, উপচে পড়া ভিড়, তার ওপর ট্রেন কখন ছাড়বে তার নেই ঠিক- এই তিনে মিলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বড়রা সয়ে গেলেও স্টেশনে সহ্যসীমার বাইরে শিশুদের। বাড়ি যাওয়ার আনন্দের চেয়ে দুর্ভোগের অবসান কখন হবে সেটাই অপেক্ষা।
সিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেন
ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সকাল থেকে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বেশিরভাগ ট্রেনই স্টেশনে আসতে এবং ছেড়ে যেতে দেরি করেছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেন দেরিতে স্টেশনে পৌঁছানো, যাত্রীদের অস্বাভাবিক চাপ বাড়ায় এবং স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার সময় লাগার কারণে শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, এই বিলম্বগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। চারটা কন্ট্রোল এবং সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সব সময় কাজ করছে।
কমলাপুর থেকেই প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী বগি ভরে যাত্রী উঠেছে ছাদে। বিমানবন্দর স্টেশনেও উঠছে যাত্রী। আর তীব্র রোদ আর গরমে ঠাসাঠাসি অবস্থায় ট্রেনের ভেতরটাও হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত।
রেল সূত্র জানায়, দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ছয়টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি একঘন্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল নয়টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিওএক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ছয়টা ২০মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল আটটায়।
অন্যদিকে, দিনের প্রথম ঈদ স্পেশাল ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস সোয়া নয়টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এই ট্রেনটির সময় পরিবর্তন করে ১০টা ৫৫ মিনিটে করা হয়েছে। গাইবান্ধাগামী যাত্রী আনিসুল ইসলাম বলেন, সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়াতে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। এখন ট্রেনে উঠেই দেখছি ভিড় আর ভিড়। নিঃশ্বাস নেওয়ারও কায়দা নেই।
লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী হিমেল বলেন, সড়কের যে হাল, ঈদে ট্রেনেই মানুষের ভোগান্তিহীন যাত্রার একমাত্র পথ। কিন্তু দেরিতে ট্রেন ছাড়া কারো কাম্য নয়। ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিনেই যদি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয় তবে আগামী দিনগুলোতে কী হবে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ