Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাসার খাবার নিতে না দিয়ে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঈদের দিনে খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারে বাসায় রান্না করা খাবার নিতে না দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী। তিনি বলেন,আগেই কারা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তার পরিবারের সদস্যরা দুপুরে খাবার নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন। এটা তারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর বলা হয় যে, ছয়জনের বেশি কেউ দেখা করতে পারবেন না এবং খাবার নিয়ে যেতে পারবেন না। এটা নজিরবিহীন ঘটনা।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া- তিনি তিনবার এই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দুই বার বিরোধীদলের নেতা ছিলেন, তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তার সঙ্গে যে আচরণটা আজকে করা হয়েছে এটা অমানবিক। অতীতে কখনো এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বুধবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঈদের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য বাসা থেকে যে খাওয়ার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা কারাগারের ভিতরে নিতে দেয়া হয়। তিনি দিনভর না খেয়ে অপেক্ষা করছিলেন নাতি- নাতনিসহ স্বজনরা এলে তাদের সাথে বসে খাবেন। কিন্তু তার সেই আশাকে চূর্ণ করা হয়েছে। অথচ গত রোজার ঈদেও স্বজনরা বাসা থেকে খাবার নিয়ে গিয়েছিল। এবার কেন এমন? যখন মিথ্যা মামলার জামিনগুলো তার শেষে দিকে, ঠিক সেই সময়ে তারা এই আচরণ করছেন।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, “কারা কর্তৃপক্ষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বজনদের বলেছে, এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, সরকারের নির্দেশ। আমাদের দেশের কারাগার চলে জেল কোড অনুযায়ী। এখানে আইজি প্রিজন হচ্ছেন বড় কর্তৃপক্ষ ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ব্যক্তি। সেই আইজি প্রিজন যখন বলেন যে, আমি কিছু করতে পারছি না, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। তখন বুঝতে হবে এখন দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “গত ঈদুল ফিতরে দিনে কারাগারে ২০ জনকে দেশনেত্রীর সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়। বাসা থেকে খাবার নিতে দেওয়া হয়েছে। আড়াই মাসে দেশে আইনের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কী? কারাবিধির কী কোনো পরিবর্তন হয়েছে? কেন ৬ জনের বেশি যেতে পারবে না, কেন খাবার দিতে পারবে না। আমরা মনে করি এসব আচরণ নিপীড়ন-নির্যাতনমূলক, অত্যাচারী আচরণ। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে ঈদের দিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন করে
বিএনপি মহাসিব বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার চলাকালে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সেই বক্তব্য প্রমাণিত করে এই সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ করাত্ব করতে চায়, বিচারের রায়কেও তারা ডিকটেড করতে চায়। আগে থেকে তারা বলে দিতে চায় যে, কারা জড়িত, কারা জড়িত ছিলো না তা বলতে চায়। এটা প্রমাণ করে তারা বিচারের পুরোপুরি রায়কে প্রভাবিত করছে।”
‘‘প্রধানমন্ত্রী চিফ এক্সিকিউটিভ যখন এই ধরনের কথা বলেন তখন কিন্তু বিচারকদের পক্ষে বা তদন্তকারীদের পক্ষে সম্ভব নয়। তদন্তও তারা নিরপেক্ষভাবে করতে পারেনি সরকার সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দেশনেত্রী কারাগারে রয়েছেন। আজকে আবার ষড়যন্ত্র করছেন যে, তথাকথিত বিচারের নামে তাদেরকে আবার সাজা দেয়ার চক্রান্ত তারা করছেন।”
২১ আগস্টের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত বয়েছেন।”
সরকারের হস্তক্ষেপে দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ তারা বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে। এখন রায়কে তারা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করতে চায়। এর ফলে বিচারকদের পক্ষে ন্যায় বিচার করা কঠিন হবে। ইতিমধ্যে যেটা দাঁড়িয়েছে বিচারকরা তো স্বাধীনভাবে কাজ করতেই পারছেন না। সেক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণভাবে এই বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিচারের রায়কে নিয়ন্ত্রন করছেন।”
সকাল সাড়ে ১১টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়ার সমাধিস্থলে আসেন মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, কাজী মাজহারুল আনোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, নাজিমউদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নেতা-কর্মীরা প্রয়াত নেতার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ প্রতিবার আমরা ঈদের দিন দেশনেত্রীকে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ করতে আসতাম। আজকে আমরা ভারাক্রান্ত মনে এখানে উপস্থিত হয়েছি। গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে আমাদের মাঝে নেই। আমরা তার মুক্তির দাবিতে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আল্লাহ‘তালার কাছে এই প্রার্থনা করছি তাকে সুস্থ রাখে এবং অতিদ্রুত তাকে মুক্ত করেন।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর বেলা ১২টায় বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফটকের দিকে আসতে গেলে পুলিশ সড়কে তাদের ব্যারিকেড দেয়। পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মহাসচিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে পাঠানো চিঠি দেখান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে কারো সাক্ষাতের বিষয় জানা নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, জেল কোডে বলা আছে যে, ঈদের দিনে আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের কেউ দেখা করতে চাইলে দেখা করতে দেয়া হয়। আমরা ১৩ আগস্ট অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। আজকে দেখা করতে না দেয়া দুর্ভাগ্যজনক। আপনারা আজকে ঈদের দিনে আমাদের নেত্রীর সাথে দেখা করতে দিলেন না সেটা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।তিনি বলেন, ‘‘ দেশে আইনের শাসন নাই। দেশে একদলীয় শাসন চলছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ঈদের দিন আমাদের দেখা করতে না দিয়ে অবিচার করা হলো।
কারাগারের সামনে বিএনপির নজরুল ইসলাম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিলকিস জাহান শিরিন, শিরিন সুলতানা, তাবিথ আউয়াল, শাহরিন ইসলাম শায়লা, খায়রুন্নাহার, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ নেতৃবৃন্দসহ দুই শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কর্মীরা এ সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে শ্লোগান দেন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ৭:৫৬ এএম says : 0
    বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জেলখানায় ঈদের দিন বাড়ির খাবার নিতে না দেয়া অমানবিক। অতীতে কখনো এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই কথাটা কি তিনি সত্য বলেছেন যে, অতীতে কখনো এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি?? আমরা খালেদা জিয়ার শাসন আমলে দেখেছি ৯ বছর দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে দেশ শাসন করার পর ’৯১ পট পরিবর্তন হলে রাষ্ট্রপতিকে বিনা বিচারে জেলে রেখে জেল কোডের বাহিরে কোন রকম সুযোগ সুবিধা না দিয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে এক দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রপতি এরশাদকে জেল কোড দেখিয়ে কোন রকম সুযোগ দেয়া হয়নি। অপরদিকে খালেদা জিয়াকে জেল কোড ভেঙ্গে সুযোগ সুবিধা দেয়াতেই আজ বিএনপির নেতারা এসব কথা বলার সুযোগ পেয়েছে এটাই সত্য। অনেকেই মনে করে যেটা শুরু থেকে হওয়া দরকার ছিল সেটা দেরীতে হলেও শুরু হয়েছে কাজেই এখন যতই চেচামেচি করা হোক না কেন লাভ হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • kazi Nurul Islam ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৫ পিএম says : 1
    Road accident holay o awame shorker kay dayee kora hoy. 21 August Greanet hamla BNP government period hoyacay so, Khaleda Zia How can avoid such 21 August Greant Hamla ? This is my question to Mr. Fakhrul.
    Total Reply(0) Reply
  • kazi Nurul Islam ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১:১৮ পিএম says : 0
    Road accident holay o awame shorker kay dayee kora hoy. 21 August Greanet hamla BNP government period hoyacay so, Khaleda Zia How can avoid such 21 August Greant Hamla ? This is my question to Mr. Fakhrul.
    Total Reply(0) Reply
  • ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১:২৫ পিএম says : 0
    3 bar prodan montri hoyacen ber ber aie kothai bolen . 3 ber prodhan montri hoya desher jonno ke koracen tar akta feristee delay jonogon jantay perban . tana holay chor , chor e thakay jaben.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ