Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জার্মান সেনাবাহিনীতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিয়োগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আঠারো বছর বয়স হওয়ার আগেই তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করছে জার্মানি। ২০১১ সাল থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আইন বাতিল করে দিয়েছিল দেশটি। ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্যের ঘাটতি পূরণে তাদেরকে এ উদ্যোগ নিতে হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার পর থেকে সেনা নিয়োগের বিষয়ে জার্মান সরকার নতুনভাবে চিন্তা শুরু করে। এর পাশাপাশি স¤প্রতি দেয়া ট্রাম্পের হুমকিকেও মাথায় রেখেছে তারা। গত ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরা সামরিক ব্যয় নির্বাহে যথেষ্ট বরাদ্দ দিচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, রাজনীতিবিদ ও শিশু অধিকার সংস্থাগুলো অপ্রাপ্তবয়স্কদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সমালোচনা করে বলেছে, প্রচারণামূলক ভিডিওতে জার্মান সেনাবাহিনী অপ্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাডভেঞ্চারের লোভ দেখাচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর চাকরির বাস্তব অবস্থা নয়। তাছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণদের নিয়োগের মাধ্যমে জার্মান সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক রীতি ভঙ্গ করছে।
জার্মানি ২০১৭ সালেই ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে তারা সেনা সংখ্যা এক লাখ ৭৯ হাজার থেকে এক লাখ ৯৮ হাজারে উন্নীত করতে চায়। ২০১৭ সালে দুই হাজার ১২৮ তরুণকে দেশটির সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। নতুন সেনা নিয়োগের প্রায় ৯ শতাংশই হচ্ছে এই নতুন অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা। রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগদান ২০১৬ সালের তুলনায় ১১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জার্মান সেনাবাহিনী অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের সেনাবাহিনীর প্রতি আকৃষ্ট করতে দৃষ্টিনন্দন ভিডিও বানিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করেছে। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে। বামপন্থী কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও শিশু কল্যাণ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭০ বছর পার হয়ে গেলেও দেশটিতে সেনাবাহিনীর চাকরি এখনও স্পর্শকাতর বিষয়। জার্মান সেনাবাহিনীতে অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। প্রথমত তাদের অভিভাবকের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। আঠারো বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে রক্ষী হিসেবে বা বিদেশে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হয় না। তাদের হাতে অস্ত্র দেয়া হয় শুধু প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে। তরুণদের আকৃষ্ট করতে ভিডিওর ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সব স্থানেই সক্রিয় জার্মান সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিভাগ। এ বছর তারা নতুন সেনা নিয়োগের জন্য যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তা দেখা হয়েছে ছয় কোটি ৪০ লাখ বার। গত অক্টোবরে জার্মান সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটের ভিজিটরের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করতে মালিতে গেছে এমন আট জার্মান সেনা সদস্যের গল্প নিয়ে নির্মিত ভিডিও চিত্র ইউটিউবে প্রচার করছিল জার্মান সেনাবাহিনী। তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সেবাও ব্যবহার করেও নতুন নিয়োগের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। গত বছর দেশটির সেনাবাহিনী নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য তিন কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ করেছে।
এদিকে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরশুলা ভন দের লিয়েনের কাছে চিঠি লিখে ৩০ হাজার জার্মান নাগরিক অপ্রাপ্তবয়স্কদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির ‘প্যাসিফিস্ট লেফট পার্টির’ প্রতিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র তোবিয়াস ফ্লুগার মন্তব্য করেছেন, ‘সেনাবাহিনী যে বিজ্ঞাপনী ভিডিও প্রচার করেছে তা বাস্তবের কর্ম পরিবেশের বদলে অ্যাডভেঞ্চারমূলক পরিবেশের ধারণা দিচ্ছে।’
জার্মানিতে তরুণদের মধ্যে এখন পছন্দের সেরা তিন নিয়োগকর্তার একটি সেনাবাহিনী। তাদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত পুলিশের চাকরি। তারপর এডিডাসের চাকরি। এখন পছন্দের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মান সেনাবাহিনীর চাকরি। - রয়টার্স



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ