Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আপনার জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রশ্ন: পবিত্র হজের মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করুন।


উত্তর: পবিত্র কোরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মহান আল্লাহর সন্তোষ্টির জন্য মানুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হলো ঐ পবিত্র ঘরের হজ করা, সে যেখানে পৌঁছতে সক্ষম; আর যে কুফুরি করে, সে যেন জেনে রাখে, আল্লাহ জগতবাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত- ৯৭)। পবিত্র হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলাম ধর্ম পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ পাঁচটি খুঁটি হল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ ও রাসুল- এ সাক্ষ্য দেয়া, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি : ৮, মুসলিম : ১৬।) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আমার উম্মত! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং সামর্থ্য হলে তোমরা পবিত্র হজ আদায় করো। (মুসলিম : ৯৭৫)।
হজ সবার ওপর ফরজ নয়। হজ ফরজ হতে হলে এই শর্তগুলো থাকা জরুরি।
(১) মুসলমান হওয়া। কোন অমুসলিমের জন্য হজ আদায় করার অনুমতি নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। তারা যেন মসজিদে হারামের কাছেও না আসে। (সূরা তাওবাহ: আয়াত- ২৮)।
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগলের উপর হজ ফরজ নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে আমল নামার কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে। তারা হল- পাগল, যতক্ষণ না তার মস্তিষ্ক সুস্থ হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। শিশু, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্তবয়স্ক না হয়। (মুসতাদরাক : ৯৮৮)।
(৩) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া। দাস-দাসীর উপর হজ ফরজ নয়।
(৪) হজ আদায় করার সামর্থ থাকা। এ সামর্থ তিনদিক থেকে থাকা শর্ত, যথাঃ ১. দৈহিক সামর্থ। অর্থাৎ, কাবা শরীফ পর্যন্ত সফর করার শারিরীক যোগ্যতা থাকা। শারিরীকভাবে অক্ষম, অন্ধ, খোঁড়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, জরাজীর্ণ বৃদ্ধ স্বয়ং চলাফেরায় অক্ষম এরূপ লোকের উপর হজ ফরজ নয়। এমন ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ থাকে তাহলে বদলি হজ করানো ওয়াজিব। ২. আর্থিক সামর্থ্য। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর- বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট পবিত্র হজ্জে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার উপর হজ ফরজ হবে। ৩. নিরাপত্তা। যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা এবং রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা।
(৫) হজ্জের সময় বা মৌসুম হওয়া। হজ্জের মৌসুম বলতে শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে বুঝায় অথবা এমন সময়কে বুঝায় যখন থেকে রাষ্ট্রে পবিত্র হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচিালিত হয়।
কোন ব্যক্তির জীবনের কোন একটি বছরে উপরোক্ত শর্তগুলোর সমন্বয় ঘটলে তার উপর পবিত্র হজ ফরজ হয়ে যায়। সে যদি ঐ বছর হজ আদায় না করে থাকে এবং পরবর্তীকালে যদি সামর্থ হারিয়েও ফেলে তবুও সে হজ ফরযের আদায়ের দায় থেকে মুক্ত হবে না।
মহিলাদের হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরো ২টি শর্ত রয়েছে। (১) মহিলাদের সাথে স্বামী অথবা এমন কোন মুহরিম পুরুষ থাকা। মুহরিম তারা যাদের সাথে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ। কোন নারী যদি মুহররিম সঙ্গী ব্যতীত হজ করে তার হজ আদায় হবে, কিন্তু মুহরিম ব্যতীত সফরজনিত কারণে গোনাহ হবে। এক্ষেত্রে বদলি হজ করানোই উত্তম। (২) স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে বা তালাকের কারণে ইদ্দত পালনকালে নারীগণ হজ্জে গমন করবে না। (ফাতহুল বারি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৪৩)।
হজ কখন আদায় করতে হয়- এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে। একদল আলেম মনে করেন, কোন ব্যক্তি যখন হজ করবার সামর্থ লাভ করে তখন ঐ বছরই হজ আদায় করা কর্তব্য। অন্যথায় বিলম্বজনিত কারণে গোনাহগার হবে। বিলম্ব করে পরবর্তী কোন বছরে আদায় করলেও হজ হয়ে যাবে। কিন্তু অহেতুক বিলম্ব করা অনুচিত। কেননা হজ অনাদায়ী রেখে মৃত্যুবরণ করলে মারাত্মক গোনাহ হবে। হজ আদায়ের পূর্বে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তার জীবদ্দশায়ই বদলী হজ করানো উচিত। আর এ সুযোগও না পেলে ওয়ারিশগণের উচিত উক্ত ব্যক্তির বদলী হজ আদায় করে তাকে দায়মুক্ত করা। কেননা হজ সামর্থবান ব্যক্তির উপর মহান আল্লাহ তায়ালার হক্ব। আরেকদল আলেম বলেন, হজ ফরজ হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বিলম্ব করলে দোষ নেই। কারণ, হজ ফরজ হয়েছে ৬ষ্ট হিজরিতে, রাসুল (সা.) হজ আদায় করেছেন দশম হিজরিতে। তাই দেরি করে হজ করলে তাতে অসুবিধা নেই। তবে সকল আলেম একমত, হজ ফরজ হলে বিনা কারণে দেরি করা উচিত নয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬৮)।
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতি এহছানুল হক মুজাদ্দেদী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্ন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ