Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুন্ডা হাসপাতাল এক যুগেও সচল হয়নি

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জে কুন্ডা ১০ শয্যা হাসপাতালটি শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। গত ১২ বছরেও এই হাসপাতালটি সচল করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় একদিকে যেমন কুন্ডা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্য দিকে তেমনি সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠানটি এখন ধবংসের দাঁরপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। কোনো কাজেই আসছে না এটি সাধারণ মানুষের। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যেতে বসেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বিএনপি সরকারের আমলে কুন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর গ্রামে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর পৈতৃক বাড়ির অদূরে এই ১০ শয্যা হাসপাতালটি নির্মিত হয়। ২০০৬ সালের ৭ জুলাই সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর কিছুদিন হাসপাতালটি বেশ ভালোভাবেই চালু থাকলেও পরে এটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই হাসপাতালের দিকে আর কোনো নজর দেয়া হয়নি। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই হাসপাতালের সকল কাযক্রম ১২ বছরেও সচল করা যায়নি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে কোনোরকমে হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে এখানে কোনো রোগী আসতে দেখা যায়নি। হাসপাতালে একটি পুরুষ ও একটি মহিলা ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে রোগী তো দূরের কথা, কোনো বেড নেই, ওষুধপত্র নেই। হাসপাতালটিতে কোনো আসবাবপত্র ও হাসপাতাল পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি, আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র ও জনবলের দরকার হয় তার কোনো কিছুই এখানে নেই। ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক লোকজন ও নিরাপত্তাকর্মী কিছুই নেই এখানে। হাসপাতালের বাউন্ডারির ভেতরেই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও প্রশাসনিক লোকজনের থাকার জন্য তিনটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো লোকজন বসবাস না করায় ভবন তিনটি এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালটি সচল না হওয়ায় এখানে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রিল কেটে হাসপাতালের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও ওষুধপত্র চুরি হয়েছে একাধিকবার। আবার অনেক আসবাবপত্র দুষ্কৃতিরা ভাঙচুর করে ফেলেছে। আবাসিক ভবনে দুই-তিনবার ডাকাতি হওয়ায় সেখানেও কেউ আর থাকেন না। ফলে এই হাসপাতালে এখন নেশাখোরদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। নেশাখোররা প্রায় এখানে আড্ডাবাজি করে এবং বিভিন্ন নেশা জাতীয় জিনিস সেবন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে থাকে। ফলে এখানে আতঙ্ক বিরাজ করায় কোনো রোগী তো আসা দূরে থাক হাসপাতালের দুই-একজন লোকও এখানে থাকতে চান না। হাসপাতালটি দীর্ঘদিন যাবত সচল না হওয়ায় কুন্ডা ইউনিয়নের লোকজন বাধ্য হয়ে দূরদূরান্তে গিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তারা চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নিজ গ্রামের এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন সচল না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ ও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে অধিকাংশ গ্রামবাসী জানিয়েছেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই হাসপাতালের এই করুণ অবস্থা। এলাকাবাসীদের দাবি একটাই, হাসপাতালটি যতদ্রুত সম্ভব যেন সচল করা হয়। কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর মোাবরক হোসাইন বলেন, কুন্ডা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপতালটি দীর্ঘদিন যাবত এভাবে অবকাঠামো তৈরি হয়ে আছে।
১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের যে জনবলের দরকার তা এখানে না থাকার কারনে হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। সরকার ১০ শয্যার হাসপাতালগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমারা জনবল সংস্থানের জন্য ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। জনবলের পাশাপাশি রোগী ভর্তি ও তাদের খাবার, ওষুধপত্রের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা যোযোগ করে আশ্বাস পেয়েছি। খুব শীঘ্রই এসবের সংস্থান হবে। হাসপাতালে কর্মরত উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার মো. রুহুল আমিন বলেন, হাসপতালটি চরম নিরপত্তাহীনতায় আছে। কয়েকবার এখানে ডাকাতি ও চুরি হয়েছে।এই জন্য কোনো স্টাফ এখানে থাকতে চায় না। আমি ও একজন ফার্মাসিস্ট এখানে আছি। অন্য জায়গা থেকে কয়েকটি চেয়ার টেবিল ধার করে এনে বসার ব্যবস্থা করেছি। রিলিফের কিছু ওষুধপত্র এনে রোগীদের দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে কর্মরত ফার্মাসিস্ট মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সঠিক জনবল ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেই হাসপাতালটির এই করুণ দশা। আমি হাসপাতালের আবাসিক ভবনে থাকতাম। কিন্তু আমার বাসায় ডাকাতি হওয়ায় আমি এখানে আর থাকি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতাল

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ