Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আইন খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ : ফিলিপাইন্সের সহায়তার আশ্বাস

রিজার্ভ চুরি : আরসিবিসি ট্রেজারারের পদত্যাগ

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় চাকরি হারিয়েছেন ফিলিপিন্সের আরেক ব্যাংকার। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের রিড্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোষাধ্যক্ষ রাউল ভিক্টর ট্যান পদত্যাগ করেছেন বলে গতকাল ফিলিপিন্স স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করা হয়।
এদিকে চুরি অর্থ ফেরত আনতে দুই দেশের আইনগত বিষয় পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান গতকালএক সভার পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ফিলিপাইন থেকে অর্থ ফেরত আনতে লিগ্যাল অ্যাডভাইস দরকার। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নিতে হবে- এই দুই সংস্থা সেটা আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করবে। গত ১৩ এপ্রিল সাত সদস্যের এই আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি করা অর্থ ফেরত প্রদানে আইনি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ফিলিপাইন সরকার। গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যোগাযোগ সচিব হারমিনিও কোলোমা বিবৃতিতে জানান, সরকার সমস্ত ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং লেনদেন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল পর্যালোচনা করে দেখছে, কোথাও কোনোভাবে এন্টি-মানি লন্ডারিং আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা। এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, ২০ জন বিদেশি নাগরিকের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া গেছে অর্থ চুরির ঘটনায়। চলমান তদন্তে অবশ্য ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করা বিদেশি নাগরিকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
অপরদিকে গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের তদন্ত কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট প্রদান করেছে। রিপোর্টে কি আছে এখনো সে সম্পর্কে কেউ মুখ খুলেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় ধরণের দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে এ রিপোর্টে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা প্রকাশ করা হবে।
ফিলিপাইনের পত্রিকা ‘দা এনকোয়ারার’ সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় চাকরি হারিয়েছেন ফিলিপিন্সের আরেক ব্যাংকার। রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কোষাধ্যক্ষ রাউল ভিক্টর ট্যান পদত্যাগ করেছেন বলে গতকাল ফিলিপিন্স স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করা হয়। তবে বুধবারই তিনি পদতাগ করেন বলে জানায় ফিলিপিন্সের পত্রিকা ‘দা এনকোয়ারার’।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন আগামী ২০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সিনেটের প্রেসিডেন্ট। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয় এবং তা আরসিবিসির চারটি শাখার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। ভিক্টর ট্যানের পদত্যাগের কারণ জানানো হয়নি। ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্লোস সিজার মার্কেডোকে ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। ভিক্টর ট্যান ৭ বছর ধরে ব্যাংকটিতে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে ফিলিপিন্স সিনেটের ব্লুরিবন কমিটিতে হাজির হয়েছিলেন ভিক্টর। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ চুরির ব্যাপারে ভুল বিচারের অভিযোগ এনে সতর্ক করা হয়েছিলো। কিন্তু আরসিবিসির অভ্যন্তরীণ তদন্তে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোষ-দেগুইতোর সাথে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জড়িয়ে এর আগে চাকরি হারান মায়া সান্তোষ। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন আগামী ২০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং ওই অর্থের যে অংশ এরইমধ্যে দেশটির মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলকে ফেরত দিয়েছেন তাও সম্পদ জব্দের এ আদেশের আওতায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিপাইন স্টার পত্রিকা। হাতিয়ে নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলারের একটা অংশ হাতে আসার কথা স্বীকার করেছেন কিম অং। তবে চুরি করে ওই অর্থ নেওয়ার বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন তিনি।
আদালতের আদেশে ফিলিপিন্স ন্যাশনাল ব্যাংকে (পিএনবি) অংয়ের ৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন পেসোর অ্যাকাউন্ট, একই ব্যাংকে ক্যাসিনো অপারেটর ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেডের ৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন পেসোর অ্যাকাউন্ট এবং আরসিবিসির ব্যবসায়ী উইলিয়াম গোর নামে থাকা ১৯ হাজার ৯৮৩ পেসোর অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে চুরি যাওয়া ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার ফেরত দিয়েছেন বির্তকিত চীনা ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম ওং। ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল-এএমএলসি কিম ওং, ইস্টার্ন হাওয়াই ও গোর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করার পর গত সোমবার সম্পদ জব্দের এ আদেশ দেয় আদালত। আগামী ২ মে এ বিষয়ে শুনানির দিন রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দ্রুত ফিরিয়ে  দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সিনেটের প্রেসিডেন্ট প্রো-টেম্পোর রাল্ফ রেক্টো। তিনি বলেছেন, টাকাটা  ফেরত দেয়ার জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া দরকার। তিনি সম্ভাব্য সময়সীমা ৩০ জুন  হতে পারে বলে মত দিয়েছেন। সেদিন প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইনো পদত্যাগ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইন খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ : ফিলিপাইন্সের সহায়তার আশ্বাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ