Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসায়ী খুনের পরিকল্পনাকারী এএসআই গ্রেফতার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম


ইউনূস হাওলাদারকে হত্যার পর নিয়ে যাওয়া হয় ৩ লাখ টাকা
মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে গিয়ে
খুন হন ব্যবসায়ী
খুনীদের দ্রুত বিচার দাবি পরিবারের


রাজধানীর শ্যামপুরে ইউনূস হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের এক এএসআইকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। শ্যামপুর থানা পুলিশের ওই কর্মকর্তার নাম নূর আলম। গত শনিবার রাতে নূর আলমকে গ্রেফতারের আগে থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে নেয়া হয়। ব্যবসায়ী ইউনূস হত্যায় গ্রেফতার আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং তদন্তে হত্যাকান্ডের মদদ দেয়া ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওই কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ। ব্যবসায়ী ইউনূসকে একটি মামলা থেকে বাদ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে হত্যা করা হয় গত ২৫ জুন। এ সময় তার কাছে থাকা তিন লাখ টাকা নিয়ে নূর আলমের কাছে দেয় জড়িতরা।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন,  সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে। এ খুনের সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না, সে যে-ই হোক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, ইউনূস হাওলাদার খুনের পরিকল্পনাকারী হলেন এএসআই নূর আলম। গত শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল রোববার নূর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেছেন, ব্যবসায়ী ইউনূস হাওলাদার হত্যায় আসামির জবানবন্দিতে এএসআই নূর আলমের নাম আসার পরপরই তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। অবশ্য অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা নূর আলম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। হত্যাকান্ডে তিনি কোনোভাবে জড়িত নন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সেদিন রাতে নিহতের ছেলে আতিকুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় নিহত ইউনূস হাওলাদারের বাড়ির ভাড়াটে ওহিদ সুমন (২৭) এবং যাত্রাবাড়ী এলাকার ছাবের ওরফে শামীমকে (৪৩) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে খুনের দায় স্বীকার করে ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেন সুমন। সেখানে তিনি বলেন, এ খুনের পরিকল্পনাকারী এএসআই নূর আলম। পুরান ঢাকার নবাবপুরে কৃষি যন্ত্রাংশের ব্যবসা করতেন ইউনূস হাওলাদার। বছর দশেক আগে ব্যবসা থেকে অবসর নেন তিনি। ইউনূস হাওলাদারের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ঢাকার শ্যামপুরে তার দুটি বাড়ি আছে। একটিতে তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। অন্যটি ভাড়া  দেয়া। সেখান থেকে ভাড়াও তুলতেন নিজে। আট মাস আগে গত ১৯ জানুয়ারি তার বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ ভাড়াটেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইউনূস হাওলাদারের নামে মানব পাচার আইনে মামলা হয়। অভিযোগ আনা হয় বাসায় পতিতাবৃত্তি চালানোর। আগে কোনো মামলায় না পড়া ব্যবসায়ী ইউনূস হাওলাদার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।
সূত্র জানায়, পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুমনকে বাগেরহাট থেকে ১১ জুলাই  গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। ১২ জুলাই সুমন ইউনূস হাওলাদারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
সূত্র জানায়, সুমন আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, ইউনূস হাওলাদার তাকে মামলা থেকে রক্ষা করার জন্য বলেন। পরে তিনি বিষয়টি পূর্ব পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা নূর আলমকে জানালে তিন লাখ টাকা চান তিনি। ইউনূসও তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হন। সুমন আদালতে আরও বলেন, নূর আলম ভাইকে জিজ্ঞাসা করি, কবে কখন স্যারের (থানার ওসি) কাছে নিয়ে যাবেন। তখন জুন মাসের ২৩ তারিখ গেন্ডারিয়ায় আমাকে আসতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর একটা লোক মোটরসাইকেলে করে আসেন, তার নাম শামীম। তিনি বলেন, সে আমার লোক। পুলিশ কর্মকর্তা নূর আলম শামীমের ( গ্রেফতারকৃত আসামি) সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। ২৪ জুন ইউনূসকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকার বিআরটিএ অফিসে থাকতে বলেন। সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেন তিন লাখ টাকা।
সুমন জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, পরে শামীম তাকে জানায় নূর আলম দারোগার ডিউটি আছে, তাই সে থাকবে না। পরে আমি ইউনূস হাওলাদারের বাসায় গিয়ে জানাই কোথায়, কীভাবে সাক্ষাৎ করতে হবে। বলি, রাত ১০টার দিকে স্যারের বাসায় নিয়ে যাবে। ইউনূস সাহেব বলে, ঠিক আছে। রাত ১০টার দিকে যাব। ২৪ জুন ইউনূস চাচাকে সঙ্গে নিয়ে বিআরটিএ অফিসের সামনে আসি। সেখানে শামীমকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমি তাঁকে ডাক দিই। তিনি আমাকে বলেন, ওই সিএনজিতে ওঠেন। শামীম আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, চাচা টাকা এনেছে কি না? তখন চাচা তার টাকার ব্যাগে হাত দিয়ে বলে, টাকা আছে। সিএনজিতে উঠে আরেকজনকে দেখি। আমি শামীমকে জিজ্ঞাসা করি, উনি কে? তখন শামীম বলে, আমার লোক। গাড়িটি বিআরটিএ অফিস থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যায়। অটোরিকশা থেকে নেমে হাঁটতে থাকি। হঠাৎ শামীম চাচাকে (ইউনূস) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে। পরে চাচার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ নেয় শামীম। আমরা তিনজনে মিলে আবার অটোরিকশায় করে শ্যামপুর থানার কাছে আসি। সেখানে দারোগা নূর আলম উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি থেকে নামার পর শামীম ওই টাকার ব্যাগ দারোগা নূর আলমের হাতে দিল। নূর আলম তার মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা বের করে দিয়ে বলে, এই মুহূর্তে তুমি বাড়ি চলে যাও।
ইউনূস হাওলাদারের স্ত্রী মারুফা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। মামলা করার পর থেকে তার স্বামী উ™£ান্তের মতো এখানে-সেখানে ছোটাছুটি করা শুরু করেন। মামলার আগে গত বছর তার স্বামী ইউনূস সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ইউনূস হাওলাদারের বাসায় ভাড়া থাকেন ওহিদ সুমন। তিনি কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বিআরটিএ অফিসের দালাল। মামলার ব্যাপারে সুমনের সাহায্য চান ইউনূস হাওলাদার। আর তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমরা দ্রুত এর ন্যায় বিচার চাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ