Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একদলীয় শাসনের পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

১/১১’র মঈনুদ্দীন ও ফকরুদ্দীন সরকারকে আওয়ামী সরকারের বর্ধিতাংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ফকরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের কর্তৃত্তবাদী সরকার গণতন্ত্র ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাদিয়ে তারেক রহমানকে ঘিরে বিছাতে থাকে নানা চক্রান্তজাল।
১/১১ সরকারের হস্তান্তরের ক্ষমতা ধারণ করার পর থেকে তারেক রহমানের ওপর আরো নানাভাবে নিপীড়ণ-নির্যাতনের বহুমাত্রার অভিনব প্রয়োগ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। ১/১১ সরকার যে মামলায় তারেক রহমানের নাম অভিযোগপত্রে দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই মামলায় সম্পূরক চার্টশীট দিয়ে তারেক রহমানের নাম দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই নাম দেয়া সরকারের প্রতিহিংসার চরিতার্থেরই নামান্তর। নির্দোষ তারেক রহমান আওয়ামী সরকারের আক্রশের শিকার। গতকাল (সোমবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নেতৃত্ব শ‚ণ্য ও সামগ্রিকভাবে বিরাজনীতিকরণের ব্ল-প্রিন্ট বাস্তবায়নের জন্যই সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় গ্রেফতার এবং চক্রান্তম‚লক বানোয়াট মামলায় আটক করে তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। যে অভিযোগগুলো তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল সেগুলো পরবর্তীতে বানোয়াট ও বানানো গল্প হিসেবে প্রমাণ হতে থাকে। আর সেজন্য জনগন বিশ্বাস করে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা ও সাজা দেয়া হয়েছে তা গভীর ষড়যন্ত্রম‚লক।
তিনি বলেন, দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায় বিচারে কারাবন্দী। প্রতিহিংসা চরিতার্থের নেশায় উন্মাদ সরকার দেশনেত্রীকে হয়রানী ও হেনস্তা করার জন্য বানোয়াট মামলা এবং পরিকল্পিত আইনীপ্রক্রিয়ার নামে তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তির অদম্য ক্রোধ ও হিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটছে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর। এক ভয়াঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে বিরাজমান। গুম-খুন, লুট-পাট, আত্মসাৎ ও দখলের মহাসমারহে গণতন্ত্রকে বন্দী করা হয়েছে। বন্দী করা হয়েছে গণতন্ত্র স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার, কথা বলা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে। সারাদেশ আজ বন্দীশালায় পরিণত হয়েছে। দুঃশাসনের বিষাক্তবলয়ে বন্দী দেশবাসী।
একদলীয় শাসনের পথে হাটছেন প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অংশগ্রহনম‚লক নির্বাচনে’র পরিবর্তে ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা’র ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেপালে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের থেকে ফিরে গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। এখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে পথে এগুচ্ছেন, সেই পথটা হচ্ছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে এগুচ্ছেন। জনগণের রায় নেওয়ার কোনো পথ আমরা দেখতে পারছি না এবং তার কোনো ইচ্ছা নেই। সকল দল সমান সুযোগ নিয়ে অংশগ্রহণ করবে সেই ইচ্ছাও তাদের নেই। গতকাল দুপুরে যুব ফোরামের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের মিলনায়তনে উন্মুক্ত ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট আলোচনায় অংশ নিয়ে বের হওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন সংবিধান সম্মতভাবে হবে, এটা ঠেকানোর শক্তি কারো নেই- প্রধানমন্ত্রীর এই রকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তো তিনি (শেখ হাসিনা) বলেই আসছেন। এসব কথা বলেই তো তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চান, রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চান। জনগণকে এখানে ঐক্যবদ্ধ
হতে হবে এবং জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সমস্ত যে ইভিল ডিজাইন আছে তাদের পরাজিত করবে। আলোচনার পথ নাকচ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার পথ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন পথ জনগণ। জনগণই এর উত্তর দেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা বাস্তব কথা যে, এখন বড় সংকট সেটি হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। যেটা গোটা দেশের মানুষের দাবি। সেই দাবিগুলোকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নাকচ করে দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হবে। সংবিধান তো মানুষের তৈরি করা। ইতিপূর্বে যে সংবিধান ছিলো সেটা তো তারাই পরিবর্তন করেছেন। সংবিধান তো অসংখ্য বার কাটছাট করে তারা তাদের সুবিধার মতো করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আজকে জাতি আশা করেছিলো বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করার স্বার্থে তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচক কথা বলবেন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেন সুষ্ঠুভাবে আসতে পারে সংসদে নির্বাচনে সেই ব্যবস্থা নেবেন। সেটা তারা করতে পারেননি। এই ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন,  আজকে সমস্ত দেশে আবার ধরপাকড় করা শুরু করেছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা একটা নির্বাচন করতে চান। তারা বলেন যে গণতন্ত্র আছে। এটা কোন গণতন্ত্র যে সব দিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে আর তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাবেন। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
বাংলাদেশ ইয়থ পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ সদস্য অংশ নেন। তারা
উন্মুক্ত এই সংসদের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক দল, জাতীয় সংসদ,সংবিধান, ন্যায়পাল, গণভোট, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কিত নানা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে প্রস্তাবগুলো উন্মুক্ত সংসদে কন্ঠভোটে দেয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম মুনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণশক্তির সভাপতি জুনায়েদ সাকি, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টর সভাপতি ববি হাজ্জাজ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের  বিদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জিএম রাব্বানী (নয়ন বাঙালি) অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম মুনির ও সোহান হাফিজ শাহকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা দেন। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ