Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নোবিপ্রবি ভিসির প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:২৩ পিএম, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

নোয়াখালী ব্যুরো :  গতকাল ২১ এপ্রিল ২০১৬ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার প্রথম পাতায় ”নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্ত হচ্ছে শনিবার” শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন নোবিপ্রবি ভিসির পক্ষে প্রতিবাদ প্রেরন করেছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা। প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের সুখ্যাতি নষ্ট করার লক্ষ্যে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ ছাপানো হয়েছে। আমরা এ সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান যোগদানের পর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ ও প্রণীত বিভিন্ন বিধি-বিধান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং সরকারের বিধি-বিধান ও নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। তাই বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
২ জুন ২০১৫ যোগদানের পর থেকে উপাচার্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। উপাচার্য যোগদানের পর থেকে যত শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন, সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ ও রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বিভাগে বিশেষ ক্ষেত্রে বিভাগগুলো সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেয়া সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে রিজেন্ট বোর্ডের পূর্বানুমোদনক্রমে জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদিত পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সকল নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধা, বিদেশী ডিগ্রি ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। উপাচার্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের ক্যামব্রিজ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে এখানকার বিশেষায়িত বিভাগগুলোতে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নির্ভর বিভাগগুলোতে যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, জাপান, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া থেকে ডিগ্রিধারী ও শিক্ষকতা-গবেষণায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একান্ত প্রয়োজনে সম্প্রতি তিনি পাঁচজন শিক্ষক চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন যাদের ক্ষেত্রেও মেধা, উচ্চতর ডিগ্রি, শিক্ষা ও গবেষণার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিশেষে প্রতিবেদনগুলোতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল ষড়যন্ত্রমূলক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা ব্যহত করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা আশা করি ইনকিলাব পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রতিবেদকের ভাষ্য ঃ নোবিপ্রবি’র ভিসি’র বিরুদ্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিভিন্ন বিভাগের প্রেরিত লিখিত অভিযোগের  বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশিত হবার পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান এ প্রতিবেদকের সাথে একাধিকবার মোবাইলে কথা বলে নিউজের প্রশংসা করে এ প্রতিবেদককে চায়ের আমন্ত্রন জানান। ভিসি জানতে চান কারা এসব তথ্য উপাত্ত প্রদান করেছে। প্রতিবেদক জানান, যাবতীয় ডক্যুমেন্ট ইতিপূর্বে জেলার সকল সাংবাদিককে সরবরাহ করা হয়েছে। সুতরাং আমার কাছেও যাবতীয় ডক্যুমেন্ট সংরক্ষিত আছে এবং সবকিছু বিচার বিশ্লেষন করে সংবাদ প্রেরন করা হয়েছে। তখন ভিসি এঘটনার জন্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. এ এফ এম মাকছুদ কামাল ও তার গুরু ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকী’কে দায়ী করে বলেন, ”এরা এর সাথে জড়িত”। ঢাবি ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকীর উদ্দেশ্যে করে তিনি আরো বলেন, উনার কি যোগ্যতা আছে। উনি ইসলামী ছাত্র সংঘ করে শিক্ষক হয়েছেন ঐ লাইন দিয়া ভিসি হয়েছেন।  জামাত-শিবির ও দেশ বিরোধী চক্র এসব করছে। ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান ”বঙ্গবন্ধু পরিষদ”কে কটাক্ষ করে ”চন্দ্রবিন্দু পরিষদ” আখ্যায়িত করে বলেন, ”কামাল বলেন আর আরেফিন সিদ্দিকী বলেন মিটিং করে আমাকে দমাতে পারবেনা”। ভিসি কর্তৃক বঙ্গবন্ধু পরিষদকে কটাক্ষ করে ”চন্দ্রবন্ধু পরিষদ” বলার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান নান্টু ইনকিলাবকে জানায়, উনি ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান একটি কমিটি অনুমোদন নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এসব বলছেন। নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক মো. রুহুল আমিনকেও দায়ী করে ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান বলেন, তিনি (রুহুল আমিন) ঘটনার জন্য আমার কাছে ক্ষমা ছেয়েছে। জানতে চাইলে সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, আমি কোন দূঃখে উনার কাছে ক্ষমা চাইতে যাব। আমি শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। তাই শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজে আমাকে উনার কাছে যেতে হয়। বরং ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান শিক্ষকদের সাথেও দূর্ব্যবহার করে থাকেন। ভার্সিটির দুইজন সিনিয়র শিক্ষিকাকে ভিসি হোষ্টেল থেকে বের করে দিয়ে সেখানে জুনিয়র শিক্ষিকাকে রুম বরাদ্দ দেন। তখন দূঃখ ও অপমানে উক্ত দুই সিনিয়র শিক্ষিকা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দৃশ্যটি অনেকে প্রত্যক্ষ করেছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদকে ”চন্দ্রবন্ধু পরিষদ” কটাক্ষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, উনার (ভিসি)র ন্যায় একজন দায়িত্ববান ব্যক্তির মুখে এধরনের কথা শোভা পায়না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ড. এ এফ এম মাকছুদ কামাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে জানান, ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান ২০১২ সালে শহীদ স্বরনিকা প্রকাশের কথা বলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা গ্রহন করেন। কিন্তু স্বরনিকা প্রকাশ না করায় উক্ত টাকা ফেরত দেয়ার জন্য উনাকে চারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যবধি উক্ত টাকা ফেরত দেয়নি। বঙ্গবন্ধু পরিষদকে ”চন্দ্রবন্ধু পরিষদ” বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ড. ওহিদুজ্জামান নিজে একটি কমিটি অনুমোদন নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দায়িত্ববান ব্যক্তি হয়েও এধরনের আচরন করছেন। আমি উনার থেকে এধরনের আচরন প্রত্যাশা করিনা। ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান এর বিরুদ্বাচরন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, আমি ঢাকা ভার্সিটিতে চাকুরী করি আর উনি নোয়াখালীতে চাকুরী করেন। সুতরাং আমি কেন উনার বিরুদ্বাচরন করতে যাব। ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান পরোক্ষভাবে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সমালোচনা করেও বলেন, ভাইয়ার লোক ভাইয়ের লোক তাকে আবার প্রমোশন দিতে হবে। যাদের কোন যোগ্যতা নাই। ইউজিসি’র নিয়ম মোতাবেক কাজ করছি। ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান বলেন, জীবনে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। দেশ না প্রধানমন্ত্রী কারো কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু নেয়নি। জানা গেছে, ভিসি ড. ওহিদুজ্জামান লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে একটি প্রাইভেট কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে নিয়োগ দিয়েছেন যার তিনটি বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেনী রয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কিছু সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে যাহা পরবর্তীতে পাঠকের কাছে তুলে ধরব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নোবিপ্রবি ভিসির প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ