Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বহেড়ার ভেষজগুণ

নাহিদ বিন রফিক | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বহেড়া ত্রিফলার অন্যতম সদস্য। এর আরেক নাম অক্ষ। কেউ কেউ বিভিতকি নামে চেনে। স্থানীয়ভাবে অনেকেই বয়ড়া বলে। বহেড়া গাছের উচ্চতা ৫০-৭০ ফুট পর্যন্ত হয়। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো এবং এর বোঁটা লম্বাটে। গাছের বাকল ধূসর ছাই বর্ণের। ফল দু’রকমের হয়। গোল এবং ডিম্বাকৃতি। প্রতি ফলে একটি করে বীজ থাকে। গ্রীষ্মে ফুল ফোটে এবং ফল পাকে শীতে। ফুল দেখতে ডিম্বাকৃতি, অনেকটা মেয়েদের নাকফুলের মতো। ফুলে সুঘ্রাণ আছে। কাঁচা অবস্থায় ফলের রঙ সবুজ এবং পরিপক্ক হলে লাল হয়। তবে শুকিয়ে গেলে বাদামি রঙ ধারণ করে। ফলের বাহিরের আবরণ শক্ত তবে মসৃণ। ভেতরের বীজও শক্ত। এর ফল পরিপক্ক হলে হরীতকীর ন্যায় মাটিতে ঝরে পড়ে। বহেড়া আদি নিবাস ভারত। এদেশে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বেশ ক’টি জেলায় এর গাছ দেখা যায়।

ভেষজগুণ
বহেড়ার ফল এবং এর মজ্জা ঔষুধিগুণে ভরপুর। রক্ত আমাশয় নিরাময়ে বেশ কার্যকরী। এজন্য এক গøাস পানিতে ১ চা চামচ ফলের গুঁড়া মিশিয়ে ৩/৪ দিন সকাল বিকাল খেতে হবে। আধা চা চামচ ফলের চূর্ণ এবং পরিমাণমতো ঘি মিশিয়ে গরম করে, সে সাথে মধু দিয়ে জিহŸা চেটে খেলে কফজনিত সমস্যা সমাধান হয়। কৃমি দূরীকরণে বহেড়া অনন্য। আর এ জন্য ফলের বিচি বাদ দিয়ে শাঁসের অংশটুকু গুঁড়া করে ডালিম পাতার রসের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। শে^ত রোগ সারাতে বহেড়া ফলের শাঁসের তেল আক্রান্তস্থানে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। এভাবে কিছুদিন করলে রঙ স্বাভাবিক হবে। অকালে চুল পেকে গেলে বহেড়া ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। এ জন্য ফলের খোসা পানি দিয়ে শিলপাটায় ভালোকরে বাটতে হয়। এরপর এক কাপ পরিমাণ পানিতে মিশ্রণকরে ছেঁকে নিতে হবে। এবার সে পানি দিয়ে মাথার চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে চুল ওঠাও বন্ধ হয়। শরীরে কোনো স্থানে ফুলে গেলে বহেড়ার ছাল বেটে হালকা গরম করে আক্রান্তস্থানে প্রলেপ দিলে ফুলা কমে যায়। ফলের শাঁস দৈনিক ২/৩ ঘণ্টা পরপর ৫/৬বার চিবিয়ে খেলে হাঁপানি রোগের উপকার পাওয়া যায়। ক্ষুধামন্দা হলে ফলের খোসা গুঁড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া পাইলস, সর্দি, কাশি, শ্লেষ্মা, রক্তক্ষরণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, জন্ডিস এবং শরীর দুর্বলতার জন্য বেশ কার্যকরী। ফলের বীজ হতে তেল বের করে নিয়মিত মালিশ করলে বাতরোগ সেরে যায়।
রোগ নিরাময়ে আমরা ঔষধ সেবন করি। এতে উপকারের পাশাপাশি কিছু পার্শ^প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে এ ফলের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই। তাই আসুন, নিয়মিত বহেড়া ব্যবহার করি। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য বসতবাড়িতে অন্তত একটি করে বহেড়ার গাছ লাগাই।

টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট,
কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক
কৃষিবিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান,
বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল ।
মোবাইল নম্বর: ০১৭১৫৪৫২০২৬
ই. মেইল: [email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভেষজগুণ

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন