Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী -জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ৮.২৫%

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আগস্ট মাসে ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আভাস মিললেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ঈদকে কেন্দ্র করে খাদ্য পণ্যের দাম বাড়েনি; বরং কমেছে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কমতির দিকে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দেশীয় বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেশ ভালো ছিল, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমন্বয় ছিল, আমদানিও ভালো হয়েছে, তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতির দিকে।
মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ সম্প্রতি নিজের ভিয়েতনাম সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জিয়াউল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মফিজুল ইসলামসহ অন্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো জিডিপির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এ বছর প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস দেন মন্ত্রী। এছাড়া ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
নির্বাচনের বছর প্রবৃদ্ধি কমবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচন হয়। এটা তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কয়েক দিন আগে আমি সব সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের বলেছি, নির্বাচন করব আমরা। আপনারা নন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে যাতে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে, আপনারা সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন এবং কাজ করবেন। নির্বাচনের বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি যাতে না কমে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস টাকার জন্য পরিকল্পনা কমিশন কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে না। অর্থবছরের প্রথম মাসে টাকা পিডির অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না এমন প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। তবে ইভিএমের ব্যবহার ধীরে ধীরে হওয়া উচিত। এক সঙ্গে নয়। তিনি বলেন, কয়েক দিন পরে একটি ছোট মন্ত্রিসভা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে দেশে নির্বাচন হবে।
স্ট্যাটেসটিকস টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ক্রয় ক্ষমতার (পিপিপি) দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩১তম। এটা আমার কথা নয়। আমার কথা হয়ত আপনার বিশ্বাস করবে না। এটা স্ট্যাটেসটিকস টাইমস বলেছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের চেয়ে ওপরে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে ৩০তম অবস্থানে যাবে (পিপিপির ভিত্তিতে)। মন্ত্রী বলেন, জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৩তম।
বিবিএসের তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগস্টে (মাসওয়ারি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে) মূল্যস্ফীতির হার কমে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের মাসে তা ছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। এছাড়া খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে। জুলাইয়ে এই হার ছিল ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ঈদকে ঘিরে আর্থিক লেনদেন হওয়ার পরও কেন মূল্যস্ফীতির হার না বেড়ে উল্টো কমেছে এমন প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বেশ সমন্বয় ছিল। কোনো ধরনের ভারসাম্য তৈরি হয়নি। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পণ্য আমদানিও হয়েছে ভালো। আর দেশীয় বাজারে পণ্যের সরবরাহও ভালো ছিল। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়েনি। কমেছে। মন্ত্রী বলেন, ঈদুল আযহাকে ঘিরে যেসব পণ্য কেনাকাটা হয়েছে, তা মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পেছনে তেমন প্রভাবক নয়। সেজন্য প্রভাব পড়েনি।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। কত শতাংশ হতে পারে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এই হার ৮ দমমিক ২৫ শতাংশ হবে। এছাড়া গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চূড়ান্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের কাছাকাছি যাবে বলেও আভাস দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, সাময়িক হিসেবে গত বছর ৭ দশমিক ৬৫ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। জুলাই থেকে এপ্রিলের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সাময়িক প্রাক্কলন করা হয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি আট শতাংশের কাছাকাছি যাবে। তবে গত বছর সত্যিকারে কত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। এ মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের পর বলা হবে।
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে পাশ হওয়া ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তিনি বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল এই পরিকল্পনা। তাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে।
মন্ত্রী তাঁর সা¤প্রতিক ভিয়েতনামে ভারতীয় মহাসাগর সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সফরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী ২০৩০ সালের আগে ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। এই সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছে। এবং সবগুলো দেশ এই বিষয়ে একমত হয়েছে। পাশাপাশি এই সফরে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ করতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আহŸান জানানো হয়েছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের সব দেশকে বাণিজ্য যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য পরিধি বাড়াতে হবে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
বিবিএসের তথ্য বলছে, আগস্টে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল। বাড়েনি। আবার কমেনি। তবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জুলাইয়ে এই হার ছিল ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। তবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনামন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ