Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাদী চেনেন না আসামিকে!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার ও রিমান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অতি দ্রæত তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসময়ে কোন অভিযোগ ছাড়া অন্যায়ভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির নেতারা অভিযোগে বলেন, তাকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করিয়েছে একটি স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী। ওই গোষ্ঠী যাত্রীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সুবিধাবাদী স্বার্থন্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষায় উঠে পড়ে লেগেছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিরাপদ সড়কের দাবি ও যাত্রীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন, বিভিন্ন সভা সেমিনারসহ সড়কে দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছেন ।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, ‘কয়েকদিনের মধ্যে সড়ক পরিবহন নিয়ে সংসদে একটি আইন পাশ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই আইনে যাত্রী স্বার্থ উপেক্ষা করে মালিক ও স্বার্থন্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষায় একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারাই চক্রান্ত করে একজন সাধারণ পরিবহন শ্রমিককে দিয়ে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা করিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি নিয়মিত যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মশালা করছে। এ কারণে একটি মহল সংগঠনটিকে সহজভাবে নিতে পারছে না। তারা সংগঠনটিকে সহ্য করতে পারছে না। নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে না পেরে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়াসহ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নের চেষ্টা করছে।’
এই নেতা আরও জানান, যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত বৃহস্পতিবার নিরাপদ সড়ক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মশালা করেছে, আগামী ১০ তারিখেও কর্মশালা রয়েছে। এ সব কর্মশালার কারণে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় স্বার্থন্বেষী মহলটি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তাদের ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছে। তারা চিন্তা করছেÑ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এভাবে নাগরিকদের সচেতন করলে তারা বেপরোয়া যান-বাহন চালাতে পারবে না। মানুষ হত্যা করেও পার পাবে না। এ জন্য চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তিনি দ্রæত মোজাম্মেল হকের মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, আগামী ১০ তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে মোজাম্মেল হকের মুক্তিসহ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হকের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া ও জায়েদুর রহমানসহ অন্যরা জানান, মোজাম্মেল হক যাত্রীদের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি গবেষণা করেন না, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার হিসাব সংখ্যক দেখে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন মাত্র। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর রাউন্ড টেবিলে তার একটা আলোচনা রয়েছে। সেখানে তিনি যেন অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো মামলাটি সাজানো। এখানে তাকে গ্রেফতারের বা রিমান্ডের বিন্দুমাত্র যৌক্তিকতা নেই। জ্যোর্তিময় বড়ুয়া আরও বলেন, এজাহারে আসামির ঠিকানা ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া তার মক্কেল যে চাঁদা দাবি করেছেন সে বিষয়ে বাদী পূর্বে কখনো থাতায় কোন জিডিও করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় মোজাম্মেল হকের বিরুেেদ্ধ চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন দুলাল নামের এক ব্যক্তি। ওই মামলায় গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার নিজ বাসা থেকে মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের নেতা দাবি করে মিরপুর রোড শ্রমিক কমিটির কাছ থেকে প্রতিমাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবি করা টাকা না দিলে বাদী ও সংগঠনের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকাসহ ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে খারাপ প্রতিবেদন প্রকাশ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে মোজাম্মেল হক দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দুলাল ভয়ে তাকে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপর মোজাম্মেল তাকে বাকি টাকা ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় দিতে বলে চলে যান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে মামলার বাদী মো. দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোজাম্মেল হককে চেনেনই বলে জানান। দুলাল জানান, নতুন একটি পরিবহন কোম্পানি খোলার কথা বলে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মিরপুর শাখার দুই নেতা টাইপ করা একটি কাগজে তার স্বাক্ষর নেন। তাতে কি লেখা ছিল তা তাকে পড়েও শোনানো হয়নি। এছাড়া তাকে দিয়ে যে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করানো হচ্ছে সেটিও জানতেন না তিনি। এদিকে, দুলালকে দিয়ে আরেকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করানোয় দুলালের স্ত্রী ও মেয়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা কাজটিকে ঘৃণিত দাবি করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।



 

Show all comments
  • Farid Zaman ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০৭ এএম says : 0
    কি অদ্ভুত দেশ। বাদী আসামি কে চেনে না। চিত্র পরিচালক বৃন্দকে বলছি আপনারা ঘুমাবেন না। ছবি করুন বাদি কেন আসামী?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mujaheed Chowdhury ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:০৭ এএম says : 0
    আর চাইবেননি নিরাপদ সড়ক?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আসামি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ