Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ঝুঁকিতে নির্মাণ শ্রমিকরা

উপেক্ষিত নিরাপত্তা

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের চারতলা থেকে পা ফসকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিক মো. কাউসার (১৭) ও তোফাজ্জল হোসেন (১৮) মারা যান। গত শনিবার রাতে ভবনে কাজ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে পড়ে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে অহরহ। নির্মাণ শ্রমিকদের অনেকে মারা যাচ্ছেন, অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন জীবনের তরে। আবার নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট, পাথর ও রড পড়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
‘সেফটি ফাস্ট’- সবার আগে নিরাপত্তা। অথচ এ নিরাপত্তার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে না। নির্মাণকালে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে। মহানগরীতে কোনো ধরনের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। নির্মাণ শ্রমিকরা অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করেন এসব ভবনে। ফলে প্রায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হত দরিদ্র এসব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা দেয়ারও কেউ নেই। কর্মকালীন সময়ে একজন শ্রমিকের কী কী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়ে জাতীয় বিল্ডিং কোডে বিস্তারিত বলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকছে। বিষয়টি তদারক করার দায়িত্ব যাদের তারাও উদাসীন। ফলে উপেক্ষিত থাকছে নিরাপত্তা, বাড়ছে প্রাণহানি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে অসংখ্য সুউচ্চ ভবন তৈরি হচ্ছে। নগর সম্প্রসারিত হচ্ছে, গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন। এসব ভবন নির্মাণ কাজে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। ভবনের পাশাপাশি সরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ডেও নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন শ্রমিকরা। নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন ভবন ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে না যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম নগরীতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কতজন নির্মাণ শ্রমিক মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। তবে প্রায়ই নগরীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এক হিসেবে দেখা গেছে, গত এক যুগে দেশে নির্মাণাধীন ভবন ও স্থাপনা পড়ে পড়ে ১২শ’ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিক কাজের সময় পা ফসকে পড়ে নিহত হন। নিহতের ঘটনা মিডিয়ায় আসলেও আহত কিংবা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জরুরি বিভাগে প্রতিনিয়তই হতাহত নির্মাণ শ্রমিকদের আনা হচ্ছে। মৃত্যুর চেয়ে দুর্ঘটনায় পঙ্গু ঘটনা বেশি ঘটছে। শ্রমিকরা উপর থেকে পড়ে যাচ্ছে আবার তাদের মাথার উপর ইট, রডসহ ভারী বস্তু পড়ার ঘটনাও ঘটছে। নির্মাণাধীন ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীরাও হতাহত হচ্ছেন। মাথায় আঘাত পাওয়া অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা যাচ্ছেন আবার অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। মহানগরীর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও ভবন থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মাঝেমধ্যে অপমৃত্যুর মামলা হলেও মামলার তদন্ত বেশিদূর যায় না। নিরীহ শ্রমিকদের অসহায় পরিবারকে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেন ঠিকাদার এবং ভবন মালিকেরা। এর ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেয়ার বদলে মৃত্যুফাঁদ তৈরির সাথে জড়িত মালিকরাও তা পেয়ে যান।
জানা যায়, ভবন নির্মাণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি না থাকায় যে যার খুশিমতে নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ঠিকাদাররা শ্রমিককে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়েজিত করেন। শ্রমিকের বেশিরভাগ জানেন না, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কাজটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। উঁচু ভবনে নির্মাণ কাজ করতে না চাইলে বেতন আটকে দেন ঠিকাদার। অনেকটা নিরুপায় হয়ে তাদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। নগরীর মুরাদপুর ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণকালেও নির্মাণ সামগ্রী পড়ে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
২০১৪ সালের জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, কাজের সময় একজন শ্রমিকের মাথায় হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক। যারা কংক্রিটের কাজে যুক্ত, তাদের হাতে গ্লাভসও পড়তে হবে। ভবন নির্মাণকালে নিরাপত্তার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ভবন মালিক তা মানছেন না। চোখের জন্য ক্ষতিকর কাজ যেমন ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং, ঢালাইয়ের সময় শ্রমিকদের চশমা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ওয়েল্ডার ও গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় রক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন গ্লাভস, নিরাপত্তা বুট, এপ্রন ব্যবহার করতে হবে। ভবনের উপরে কাজ করার সময় শ্রমিকের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবে দেখা যায় না। ভবনের চারপাশে বাঁশের কাঠামো তৈরি করেই নির্মাণ কাজ চলছে। এসব দেখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর হলেও তাদের কোনো তদারকি চোখে পড়ে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ