Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আইডিবির সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৫২ এএম

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপ (আইএসডিবিজি)-র সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, তখন আইডিবি চুপ থাকতে পারে না। কাজেই জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে আমি দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
গতকাল হোটেল র‌্যাডিসনে ইসসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপের (আইএসডিবিজি) ঢাকাস্থ ‘রিজিওনাল হাব’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মিয়ানমারকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে একটি মানবিক সংকট মোকাবিলা করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উম্মুক্ত করে দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। নিজস্ব সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানা সত্তে¡ও বাংলাদেশ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করতে দিয়েছে।
মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এখন আমরা তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চাই। এক্ষেত্রে আইডিবির সহায়তা প্রয়োজন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সেক্টরে বিনিয়োগের চাহিদা, বর্তমান অবস্থা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করার জন্য কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আইএসডিবিজি’র সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিকল্পনা মতে সম্পূর্ণ মেয়াদে মোট ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস হতে এ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরও ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।
ঢাকায় আইএসডিবিজি এর রিজিওনাল হাব স্থাপনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সদর-দপ্তর থেকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ। এরফলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও দক্ষ, উন্নত ও গতিশীল করবে। এ উদ্যোগ সদস্য রাষ্ট্রের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, প্রয়োজন ও চ্যালেঞ্জসমূহ আরও ঘনিষ্ঠভাবে বুঝতে আইএসডিবিকে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের জনগণের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এ অভিযাত্রা কখনোই মসৃন ছিল না। আমাদের দক্ষ নেতৃত্ব ও জনগণের বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করার পাশাপাশি বেসরকারি ও বৈদেশিক বিনিয়োগও সহজতর করছি।
প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। যা বর্তমানে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের সকল মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।
সরকার প্রধান বলেন, সরকারি অফিসে ই-ফাইলিং, ইলেকট্রনিক কেনাকাটা (ই-জিপি), ই-কমার্স, স্থানীয় পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার, মোবাইলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল পরীক্ষাগার ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে।
সমাজের সকল স্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ ও জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক লিঙ্গ-বৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৭’ অনুযায়ী ১৪৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭ তম। এক্ষেত্রে ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান এবং পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যে কোন ইস্যুতে বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন এবং অভিযোজন করার জন্য ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা’ এর আওতায় বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. বন্দর এম. এইচ. হাজ্জার, অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ