Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘গণতন্ত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্য হচ্ছে’

সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলাদেশের এক নন্দিত রাজনীতিবিদ। তিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত আলোচিত নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজন বলে এই জোট মনে করে। আর এই বিষয়টিকে মূল দাবি করে সরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় ঐক্য গঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচিত এই রাজনীতিবিদ দৈনিক ইনকিলাবের কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন। ইনকিলাবকে দেয়া তার এই সাক্ষাৎকার সুপ্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
ইনকিলাব ঃ বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে কি ভাবে মূল্যায়ন করবেন?
বি. চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং অনির্বাচিত সংসদ সদস্য দিয়ে সংসদ, মন্ত্রিসভা গঠন এবং ভোটবিহীন এমপিদের দিয়ে সংবিধান সংশোধন ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানের ক্ষমতাকে একটি দু:খজনক এবং অবাঞ্ছিত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে এটা হওয়া উচিত ছিল না। ওই নির্বাচনের অব্যবহিত পরেই সরকারি দলের কথা মতো আরেকটা সর্বদলীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন করলে গণতন্ত্রহীনতার কলঙ্ক মোচন হতো। কিন্ত সরকার তার কথা রাখে নাই। গণতন্ত্রহীনতা এবং রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারের করুণ পরিণতি হিসেবে দেশের অধিকার বঞ্চিত জনগণ এখন ক্ষুব্ধ। ভোটারদের অন্যায়ভাবে উপেক্ষা করলে এমন অবস্থা হতে পারে, ক্ষমতাশীনদের এটা ভাবা উচিত ছিলো। কিন্তু তারা তা ভাবেনি।
ক্ষমতা, স্বেচ্ছাচার আজকে নগ্ন ও বিভৎস। ঘরে নিরাপত্তা নেই, গুম, হত্যা, নারী নির্যাতন দৈনন্দিন ঘটনা। রাস্তায় অদক্ষ, প্রশিক্ষণহীন বাস-ট্রাকের চালকের হাতে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। দুর্নীতি এখন সর্বত্র। ব্যাংক লুট, সোনা লুট, কয়লা লুট, চলছে লুটপাটের মহোৎসব। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রী ‘রয়েসয়ে’ ঘুষ খেতে বলেন, অর্থমন্ত্রীতো ঘুষকে জায়েজ করে নাম দিয়েছেন ‘স্পীড মানি’, কোথায় লজ্জা রাখি? গণতন্ত্রের কী নিদারুণ অপমৃত্যু?
সরকারি দল মিটিং, মিছিল করে যত্রতত্র, যখন-তখন, কিন্তু বিরোধী দলকে অনুমতি দেওয়া হয় না। নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির ভোটের মাধ্যমে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়। (গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীর সিটি নির্বাচন দ্রষ্টব্য )।
কোটা সংস্কারের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে জননন্দিত দাবি উত্থাপনের অপরাধে চাপাতি, লাঠি, পিস্তল হাতে পুলিশের সহায়তায় সরকারের গুন্ডাদের আক্রমণে যারা অত্যাচারিত হলো তাদেরকেই গ্রেফতার করা হলো, গুন্ডাদের নয়। সামাজিক, রাজনৈতিক এই অবক্ষয়, লজ্জা রাখি কোথায়?
টেলিভিশন, সংবাদপত্র সরকারের ভয়ে কথা বলার সাহস পায় না। কয়েকটি টেলিভিশন, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তুচ্ছ কারণে। শহিদুল আলমের মতো বিশ্বখ্যাত ফটো সাংবাদিককে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীকে কিভাবে মুখ দেখাবে?
ইনকিলাব ঃ যুক্তফ্রন্ট গণফোরাম মিলে সম্প্রতি নতুন জোট গঠিত হয়েছে। এ জোটের লক্ষ উদ্দেশ্য কি?
বি. চৌধুরী: জনমত প্রতিফলিত হয় এইরূপ একটি জাতীয় নির্বাচনে যেখানে সব দলের অংশ গ্রহণ থাকবে। সেই জন্য ১) নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ২) জনসভা মিছিল, মিটিংসহ অবাধ প্রচারণার সুযোগ ৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে নির্বাচনের আগে ৩০ দিন এবং নির্বাচনের পরে ১০ দিন সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিট্রেসি ক্ষমতাসহ শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব দিতে হবে।
ইনকিলাব ঃ আপনারা নতুন জোট গঠনের পর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন? জাতীয় ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতদূর?
বি. চৌধুরী: অগ্রগতি হচ্ছে। যথাসময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ইনকিলাব ঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে কি জাতীয় ঐক্য হচ্ছে?
বি. চৌধুরী: বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সকল স্বাধীনতাকামী ও গণতান্ত্রিক শক্তির গণতন্ত্র বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্য চাই। খুব শিগগিরই তার প্রকাশ ঘটবে।
ইনকিলাব ঃ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা কি জাতীয় ঐক্যে থাকছে?
বি. চৌধুরী: এখনো জানি না।
ইনকিলাব ঃ ক্ষমতাসীনরা বলছেন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের কোন জনভিত্তি নেই। তাদের জোটকে আমলে নেয়ার কোন কারণ নেই। এ জোটের রেজাল্ট হলো ০+০+০+০=০। আপনার অভিমত কি?
বি. চৌধুরী: আমি তো শুনলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যুক্তফ্রন্টের সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে। আমাদের অভিমত হলো এই যে, এখনো যে সময় বাকি আছে জনগণের কাছে আমরা পোঁছাবো এবং একটি সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত উদার গণতন্ত্রের বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকারের সঙ্গে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবো।
ইনকিলাব ঃ সরকারতো খুব আত্মবিশ্বাসী। তাদের উন্নয়নের পক্ষে জনগণ আছে। তাই সরকার কোন কিছুতে ছাড় দিতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে আপনাদের আন্দোলন কতটা সফল হবে বলে মনে করেন?
বি. চৌধুরী: উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র পরস্পর পরিপূরক। গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র উন্নয়ন একটি স্বাধীন দেশের জনগণ কখনো গ্রহণ করবে না। আমরা জনগণকে বোঝাবো আপনাদের উড়াল সড়ক, বিদ্যূৎ ইত্যাদি উন্নয়নের ফল যা হচ্ছে সত্য, কিন্তু আপনার ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে না, ভোট ডাকাতি হবে, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন (গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী) এবং নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র, টেলিভিশনের মাধ্যমে সত্যকে গোপন করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হবে এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
যে জাতি ব্রিটেন ও পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে, বাংলাদেশের মাটি যাদের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, যারা গণতন্ত্রের জন্য বারবার জীবন দিয়েছে-এই বাংলাদেশের জনগণকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষে উজ্জীবিত করা কঠিন হবে না।
ইনকিলাব ঃ আপনাদের আন্দোলনের মুখে সরকার যদি কোন দাবি মেনে না নেয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি না বদলায় তাহলে পরিণতি কি হবে?
বি. চৌধুরী: দু:খের বিষয় আমরা না চাইলেও পরিণতি ভয়াবহ হবে।
ইনকিলাব ঃ সংকট উত্তোরণে অন্য কোন শক্তির উত্থান...
বি. চৌধুরী: আমরা কোনো অসাংবিধানিক শক্তির উত্থানের স্বপক্ষে নই।
ইনকিলাব ঃ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কি কোন আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে?
বি. চৌধুরী: যাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন দেশের কেউ চাইলে আলোচনা করবো না কেনো? উদাহরণস্বরূপ সউদী আরব যদি আলোচনা করতে চায় তা হলে করবো।
ইনকিলাব ঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা খুবই বড় ফ্যাক্টর বলে অনেকে মনে করেন। এর মূল্যায়ন কি ভাবে করবেন?
বি. চৌধুরী: ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী। একবার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় বাংলাদেশের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। আসলে কোনো দেশই চিরশত্রু বা চিরমিত্র হয় না। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সম্পর্কে হেরফের হয়েই থাকে। সেজন্য অন্যদেশের জনগণ দায়ী থাকে না, দায়ী থাকে সরকার।
ইনকিলাব ঃ ভারতের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কি আপনাদের কোন আলোচনা হয়েছে?
বি. চৌধুরী ঃ আমার হয় নাই।
ইনকিলাব ঃ আপনাকে ধন্যবাদ।
বি. চৌধুরী ঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।



 

Show all comments
  • শামীম ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৮ এএম says : 0
    এটা আরও আগেই হওয়া দরকার ছিলো
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৪:৩৮ এএম says : 0
    এখনই উপযুক্ত সময়
    Total Reply(0) Reply
  • Mihadul islam ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:০৯ পিএম says : 0
    জাতীয় ঐক্য যদি হয় জাতীয় স্বাথে তবে বিএনপির কাছে আসন চাওয়া এতে বুঝাগেল নিজেদের স্বাথে জাতীয় ঐক্য হলে বিএনপি বেশি কারাপ হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বি. চৌধুরী

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ