Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সবজিতে সিন্ডিকেটের দাপট

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা
পকেট ভারী করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা


সবজির রাজধানী খ্যাত যশোর অঞ্চলের উৎপাদক চাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদেরও বাড়তি মূল্যে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। চাষি ও ভোক্তাদের ঠকিয়ে পকেট ভারী করছে মধ্যস্ত¡ভোগীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে মোটেও নজর দিচ্ছে না। যার কারণে খাদ্য তালিকায় অত্যাবশ্যকীয় সবজি বাজারের অস্থিরতা চলছেই। মধ্যস্বত্বভোগী ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরে দাপট কমানোর ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই।
যশোরের বারীনগরের সবজির পাইকারী বাজারটি শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল দুরে অবস্থিত। এক কেজি সবজি পরিবহন খরচ লাভসহ সর্বোচ্চ ৫ টাকা হলেও খুব বেশী হেরফের হওয়ার কথা নয়। মাঠে এক কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা। প্রতিকেজিতে ২০টাকা যাচ্ছে মধ্যস্ত¡ভোগেীদের পকেটে। একইভাবে মাঠে বেগুন ২০টাকা বাজারে ৪০টাকা, বরবটি ৩০টাকার স্থলে ৫০টাকা, কচুরমুখী ২০টাকার স্থলে ৪০টাকা। সব সবজির ক্ষেত্রেই মাঠের মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন, কোন কোন সময় এর চেয়েও বেশী ব্যবধান ঘটে থাকে।
সূত্র জানায়, হাট-বাজারে সবজির সরবরাহ প্রচুর। পাইকারী বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে দারুণ হতাশ হয়ে পড়ছেন চাষিরা। কারণ উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। আবার ভোক্তারা কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারছেন না। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে বাজার ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও আধুনিক কলাকৌশল, উন্নত বীজ সরবরাহ এবং চাষীদের জ্ঞান ও দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। সবচেয়ে সমস্যা মাঠের মূল্য আর বাজার মূল্যের পার্থক্য। যার মূল দায়ী মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ এর বিরুদ্ধে সরকারের কৃষি ও বিপনন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ন্যূনতম কোন ভুমিকা রাখছেন না বলে অভিযোগ। মাঠমূল্য আর বাজার মূল্যের বিরাট এই হেরফের কেন হচ্ছে, চাষীরা কি মূল্য পাচ্ছে আর কোন মূল্যে ভোক্তারা ক্রয় করছে তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কখনো তদন্ত করে দেখা হয় না বলে অভিযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারও যশোরে ৫০হাজার হেক্টরে গ্রীষ্মকালীন প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়েছে। শীতকালীন সবজি আবাদ ও উৎপাদনের প্রস্ততি চলছে। সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টির যশোরে উৎপাদক চাষিদের দুঃখ ‘আমরা রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করছি, আমরা উপযুক্ত মূল্য পাই না অথচ বসে বসে বিনা পুঁজির ব্যবসা করে মুনাফা লুটছে মুনাফালোভী মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাদের কারণেই উৎপাদক চাষি ও ভোক্তা উভয়েই ঠকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলে বছরের বারোমাসই সবজি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর সবজি সরবরাহ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি অভ্যন্তরীণ রফতানি হয় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে। কোথাও সবজির কোনরূপ ঘাটতি নেই। তবুও মূল্য বাড়ছেই। সরেজমিনে গতকাল যশোরের সবজি ভান্ডার বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে চাষিরা একটি লাউ বিক্রি করছেন মাত্র ১০টাকায়। সেই লাউ কয়েক হাত ঘুরে যশোরের বড় বাজারে প্রতিকেজি ৩০/৩৫ টাকা। শুধু লাউ নয়, বেগুন, কচুরমুখী, উচ্ছেসহ প্রায় প্রতিটি সবজির মূল্যে মাঠের সঙ্গে বাজারের মূল্যে দ্বিগুণ/ত্রিগুণ বেশীসহ এই বিরাট ব্যবধান থাকছে।



 

Show all comments
  • Rafiqul Islam ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৯:৫৩ এএম says : 0
    আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি সাহসী এবং অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করে কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সবজি

৪ এপ্রিল, ২০২২
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৯ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ