Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশ

কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন আজ বিক্ষোভ মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৪২ এএম

সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোনো ধরনের কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে কোটা পর্যালোচনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, এটা আদালতের রায়কে স্পর্শ করবে না, কোনো সমস্যা হবে না। মানে কোনো কোটাই থাকবে না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শফিউল আলম বলেন, আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। দেখেই বলেছি, এখন কোটা না থাকলেও চলতে পারবে। কীভাবে ও কবে এ প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে আবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুমোদনের জন্য যাবে। কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করা হলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে বলে এতদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার আদালতের পরামর্শ চাইবে এমন কথাও বলা হয়েছিল। সচিব কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার আগে এ বিষয়ে আদালতের পরামর্শ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আমাদের ফাইন্ডিংস অনেক ছোট, তবে রিপোর্ট অনেক বড়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। যেহেতু এটি সরকারের পলিসিগত ব্যাপার। সে কারণে এটিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
সরকারি কর্ম কমিশন ইতোমধ্যে ৪০তম বিসিএসের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, তার ওপর এ সুপারিশের কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে বলা আছে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী কোটা নির্ধারিত হবে।
শফিউল আলম বলেন, সচিব কমিটি ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এখন আর পিছিয়ে পড়া কোনও জনগোষ্ঠী নেই। সবাই এগিয়ে গেছে। এখন কোটা না হলেও চলতে পারে। তাই তাদের জন্য কোনও কোটা রাখার সুপারিশ করা হয়নি। তিনি বলেন, সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যারা ব্যাকওয়ার্ড, সরকার যদি চায় তাদের কোটা দিতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতনের ক্ষেত্রে ২০টি গ্রেড রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা নবম গ্রেডে বেতন পান। এই গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্তরা পদোন্নতির মাধ্যমে সপ্তম থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত উন্নীত হন। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি বা সংস্কারের চাকরি প্রত্যাশীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিন থেকেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ অসন্তোষ আন্দোলনে রূপ নিলে তা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। এ ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও আটকের ঘটনা ঘটে।
কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন : আজ বিক্ষোভ মিছিল
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, কোটা সংস্কারে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। তবে তারা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
তিনি বলেন, আমরা কমিটির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছি। তবে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এ সময় তিনি সরকার চাইলে ৩য় ও ৪র্থ গ্রেডে কোটা সংস্কার করতে পারে বলে মন্তব্য করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক খান বলেন, তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এগুলো আদায় হলে আমরা পড়ার টেবিলে ফিরবো।
আন্দোলনকারীদের দেয়া তিন দফা দাবি হলো, পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির সংস্কার, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বিচার। সংবাদ সম্মেলনশেষে আহ্বায়ক হাসান আল মামুন দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংরক্ষণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ