Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহাদেবপুরের পাখা গ্রামে কর্মচাঞ্চল্য হাত পাখায় ঘুরছে শতাধিক পরিবারের ভাগ্যের চাকা

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে

নওগাঁর মহাদেবপুরে গরমের তীব্রতায় কদর বেড়েছে তালপাতায় তৈরি হাতপাখার। তালপাতার হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় শতাধিক পরিবারে ফিরে এসেছে কর্মচঞ্চলতা। তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে সচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহের আশায় উপজেলার পাখা গ্রামের শতাধিক পরিবার বরাবরই বছরের এ সময় নিজেদেরকে ব্যাপকভাবে নিয়োজিত করেন হাতপাখা তৈরির কাজে। চলতি মৌসুমের ব্যস্ততার মাত্রা গত মৌসুমের চেয়ে বেড়ে গেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এবার হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। গরমের তীব্রতায় হাতপাখা যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। যত গরম তত কদর। আর এ কদর থেকেই ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন পাখা কারিগররা। যে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি এখন হাতপাখা তৈরির কারাখানায় রূপ নিয়েছে সেই গ্রামের প্রকৃত নাম ভালাইন হলেও পাখা তৈরির কাজে নিয়োজিত শতাধিক পরিবারের কারণে গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। সাজানো-গুছানো এ গ্রামটি যেন হাতপাখার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তালপাতার নানা ডিজাইনের হাতপাখা তৈরি ও বিক্রি করাই এ গ্রামের মানুষের অন্যতম পেশা। ওই গ্রামের গৃহবধূরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন তালপাতার নজরকাড়া হাতপাখা তৈরির কাজে। সেখানকার শতাধিক পরিবারের শত শত সদস্যের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে তাল পাতার তৈরি হাত পাখায়। প্রতি বাড়িতেই এ সময় চলে ধুম করে পাখা তৈরির কাজ। এ সময়গুলোতে যেন কারো ফুরসত নেই। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত পাখা তৈরির কাজে। পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধাইয়ের কাজটি বাড়ির মেয়েরাই করে থাকেন। বিভিন্ন স্থান থেকে তালপাতা সংগ্রহ, পাতা ছাঁটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির কাজ করেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। ওই গ্রামের শামসুর রহমানের স্ত্রী পাখা কারিগর আছমা জানান, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির অন্যান্যদের সহায়তায় তিনি এখন পাখা তৈরিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। তালের পাতা মাপমত কাটা ও ছাঁটাই থেকে শুরু করে কয়েক ধাপে শেষ হয় পাখা তৈরির কাজ। পাখা তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে সুতা দিয়ে বাঁধাই। আছমা জানায়, তিনি এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০ পাখা প্রস্তুত করতে পারেন। আছমার এখন প্রতিদিন গড় আয় হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। পাখা তৈরি থেকে পাওয়া আয়ের এ টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানকে লেখাপড়া করানোর কাজ করছেন আছমা। শুধু আছমা নয়, এ গ্রামের গৃহবধূ সুমী, খোরশেদা, সায়রা, সেফালী, কোহিনূর, মালা, শিউলি রোকেয়াসহ অধিকাংশ পরিবারই পাখা তৈরি ও বিক্রির উপর নির্ভরশীল। পাখা কারিগর সুমী জানায়, গরমকালে পাখার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। শীতকালে পাখার চাহিদা না থাকার কারণে অল্প দামে মহাজনদের কাছে তারা পাখা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি পাখা তৈরি করতে ৫ টাকার উপরে খরচ হয়। সেই পাখা তারা ২ থেকে ৩ টাকা লাভে মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেন। মহাজনরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ওই পাখা ১০, ১৫ এবং ২০ টাকায় বিক্রি করেন। অতিরিক্ত গরমের কারণে পাখার দাম আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাদেবপুরের পাখা গ্রামে কর্মচাঞ্চল্য হাত পাখায় ঘুরছে শতাধিক পরিবারের ভাগ্যের চাকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ