Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২৫ দিনে ২৮ মামলা আসামি এক হাজার

তালিকায় আছেন মৃত, হজে-বিদেশে ও কারাগারে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

কুষ্টিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫ দিনে ২৮টি নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। জেলার সাত থানায় করা এসব মামলায় এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় রয়েছে মৃত ব্যক্তির নামও। এছাড়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ও হজ্ব করতে যাওয়া ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আবার জেলে আছেন এমন দু’জনকেও আসামি করা হয়েছে। একের পর এক মামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নিজেকে বাঁচাতে অনেকে ক্ষমতাসীন দলে যোগদান করেছেন। আবার কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল নেতাকর্মীকে টার্গেট করে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়ার তৃণমূল তছনছ করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাদের দাবি, নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন দমন করতেই কাল্পনিক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়ার সময় দোষীদের আটক করা হচ্ছে।
৩১ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতটি থানায় ২৮টি নাশকতার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে খোকসা-কুমারখালী থানার আট মামলায় ৩৪৪ জনকে আসামি এবং ৬২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল ও ইবি থানায় ১০টি মামলা হয়েছে। এ দুই থানার মামলায় ৩৬২ জনকে আসামি এবং ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দৌলতপুরের পাঁচ মামলায় ২০০ জনকে আসামি এবং ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিরপুর-ভেড়ামারার পাঁচটি মামলায় ১৬৫ জনকে আসামি ও ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের দু-একজন বাদে সব মামলাতেই ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরব আলী ছয় মাস আগে মারা গেছেন। অথচ তাকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ইবি থানার নাশকতা মামলার ৩ নং আসামি করা হয়েছে। কুমারখালী উপজেলার ভাড়–রা গ্রামের বাটুন শেখের ছেলে মো. কায়েম শেখ ২০০৬ সালে মারা গেছেন। অথচ তাকে ২১ সেপ্টেম্বর কুমারখালী থানার নাশকতার মামলার ৪১নং আসামি করা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজা চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। অথচ তাকে ২০ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানার নাশকতা মামলার ১৮নং আসামি করা হয়েছে। ভেড়ামারা পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হজ পালন করতে সৌদি আরবে ছিলেন। অথচ তাকে ৩১ আগস্ট ভেড়ামারা থানার নাশকতার মামলার আসামি করা হয়েছে। ইবি থানার আবদুলপুর ইউনিয়নের মোকলেস হোসেনের ছেলে লাল্টু হোসেন ৬ সেপ্টেম্বর বিদেশে গেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী জানান, এসব কাল্পনিক মামলার এজাহার অনেকটা একইরকম। শুধু আসামির নাম ও স্থান আলাদা। মামলায় মৃত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসাধীন ও হজে গেছেন এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। এমনকি ঢাকায় বহুদিন ধরে চাকরি করছেন অথবা অনেকদিন ধরে জেলে আছেন- এমন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা দেয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন বলেন, জেলাজুড়ে গণ গ্রেফতার চলছে। প্রতি রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু বলেন, অনেকদিন ধরে বিএনপির দুই কর্মী শিপন ও জাপান জেলে রয়েছেন। অথচ নতুন করে তাদের নামে নাশকতার মামলা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপি কর্মী ইয়াকুব আলী মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও তার নামে মামলা করেছে পুলিশ।
এদিকে, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, নাশকতার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়ার সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এজাহারে অনেকের নাম এসেছে। তবে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহ থাকলে তদন্ত করে এজাহার থেকে তার নাম বাদ দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ