Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে রাশিয়া-ভারত এস-৪০০ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:২২ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচিত এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। শুক্রবার রাজধানী দিল্লীর হায়দারাবাদ হাউসে এই প্রতিরক্ষাসহ আরো ২০টি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ছাড়ও চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউরি বোরিসোভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরোভ, শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এমন সামরিক চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। কারণ, ভারত দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি আদায়ের চেষ্টা চালালেও এ ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা থেকে দিল্লিকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তা সত্তে¡ও মার্কিন হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে ৫০০ কোটি ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করে দিল্লি।
পুতিন বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি এসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গে গিয়ে বৈঠক করেন পুতিন। তার পরে সেখানেই নৈশভোজের টেবিলে একান্তে কথাবার্তা হয় দু’জনের।
কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রথমত, চিন ও পাকিস্তানের মোকাবিলায় এই ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে থাকা জরুরি। সম্প্রতি চিনও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ কিনেছে।
দ্বিতীয়ত, ভারত অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রকে তোষণ করে এসেছে, যার ফলে কাছাকাছি এসেছে রাশিয়া-চীন-পাকিস্তান। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোয় সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে নৌবাহিনী সমঝোতা চুক্তিও সাক্ষর করেছে ইসলামাবাদ। এখন সেই সমীকরণ ভেঙে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বহু পুরনো সম্পর্ককে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। গত কয়েক বছরে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়িয়েছেন মোদী।
এ বছরে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনে ভারতের পূর্ণ সদস্য হওয়ার পিছনেও সহযোগিতা ছিল রাশিয়ার। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিকেও সমর্থন করছে তারা। আর বেইজিং যতই বিরোধিতা করুক, এনএসজিতে প্রবেশের প্রশ্নেও একই ভাবে নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে পুতিনের দেশ।
তিন, চীনকে আটকাতে নয়াদিল্লিকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া, ইরানের মতো ভারতের বন্ধু দেশগুলো থেকে সামরিক ব্যবস্থা কিংবা তেল কিনলে বাধা দিচ্ছে তারা। এই চাপের কাছে মাথা না নুইয়ে দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে চাইছে দিল্লি। এই প্রেক্ষাপটেই, ৫০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে চুক্তি হল দুই দেশের মধ্যে। রাশিয়ার থেকে ক্রিভাক-ক্লাস ফ্রিগেট এবং কেএ-২২৬ হেলিকপ্টার কেনা নিয়েও কথা হয়েছে এদিন। ভারতে কুড়ানকুলামের পরে রাশিয়ার সহযোগিতায় দ্বিতীয় পরমাণু চুল্লি বসানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ২০২২ সালে ভারতের মহাকাশ অভিযানেও সাহায্য করবে মস্কো। কথা হয়েছে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রশ্নেও।
আগামী বছরে ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়ার পরিকল্পনার কথা সেপ্টেম্বরেই ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারতের সঙ্গে জরুরি সামরিক তথ্য আদানপ্রদানেও চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এই পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার হুমকি অগ্রাহ্য করে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করায় ভারতের বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র সেটিই এখন দেখার বিষয়। সূত্র : আনন্দবাজার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ